চট্টগ্রামের গণমাধ্যম কর্মীদের নিরাপত্তা ও ন্যায্য অধিকার নিশ্চিতের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে স্মারকলিপির মাধ্যমে দাবি জানিয়েছেন চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন – সিইউজে নেতৃবৃন্দ।
বৃহস্পতিবার ( ১০ এপ্রিল ) দুপুরে জেলা প্রশাসক ফরিদা খানমের কাছে স্মারকলিপি দেন সিইউজে সভাপতি রিয়াজ হায়দার চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক সবুর শুভ সহ নেতৃবৃন্দ। এসময় সিইউজের সিনিয়র সহ-সভাপতি স ম ইব্রাহিম , যুগ্ম সম্পাদক ওমর ফারুক, অর্থ সম্পাদক মো. সরোয়ার আলম সোহেল, সাংগঠনিক সম্পাদক সুবল বড়ুয়া, প্রচার প্রকাশনা সম্পাদক মিনহাজুল ইসলাম ও নির্বাহী সদস্য আহসান হাবিবুল আলম উপস্থিত ছিলেন।
চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন- সিইউজে কার্যালয় তালামুক্ত করার দাবির পাশাপাশি ও চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সিইউজে’র সিংহভাগ সদস্য ৫ আগস্ট পরবর্তী পরিস্থিতিতে তাদের ন্যায্য অধিকার বঞ্চিত হওয়ার কথা তুলে ধরা হয় সিইউজে প্রদত্ত এই স্মারকলিপিতে। স্মারক লিপি প্রদানের পূর্বে মত বিনিময়কালে সিইউজে সভাপতি রিয়াজ হায়দার চৌধুরী চট্টগ্রামে উদ্ভুত অসহিষ্ণু নিরাপত্তাহীন গণমাধ্যম পরিস্থিতিতে গভীর উদ্বেগ জানিয়ে তা নিরসনে জেলা প্রশাসক সহ সরকারের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করে বলেন, সাংবাদিকদের অনিরাপদ রেখে, কার্যালয় তালা মেরে মুক্তমত প্রকাশের স্বাধীনতা সম্ভব নয় । এরকম পরিস্থিতিতে দেশের উন্নয়ন এবং বৈষম্য বিরোধী অভিযাত্রা বাধাগ্রস্ত হবে।
‘চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সদস্যরাই চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব প্রতিষ্ঠা করেন’ উল্লেখ করে সিইউজের সভাপতি বলেন, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সাংবাদিকদের মাঝে ঐক্যের বিকল্প নেই। আর সাংবাদিকদের এ ঐক্য প্রক্রিয়া সিইউজেকে বাদ দিয়ে সম্ভব নয়। ‘
সিইউজে সাধারণ সম্পাদক সবুর শুভ বলেন, সিইউজে’র কার্যালয়ে মহলবিশেষের তালাবদ্ধ করে রাখার ঘটনায় সদস্য সহ কর্মজীবী সাংবাদিকদের অধিকার বঞ্চিত হতে হচ্ছে। সিইউজে সাংবাদিকদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই সংগ্রামের অগ্রণী সংগঠন। সিইউজেকে তালাবদ্ধ করার মধ্যদিয়ে মূলত স্বাধীন সাংবাদিকতা ও মত প্রকাশকে অবরুদ্ধ করা রাখা হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের কোন বিকল্প নেই।
জেলা প্রশাসককে দেয়া স্মারকলিপিতে বলা হয়, চট্টগ্রামের গণমাধ্যম পরিস্থিতি সহনশীল ও ইতিবাচক রেখে সামগ্রিক অগ্রযাত্রার স্বার্থে প্রেস ক্লাবকে সর্বজনীন করতে হলে বর্তমান অন্তর্বর্তী কমিটির পাশাপাশি প্রেসক্লাবের সর্বশেষ নির্বাচিত কমিটি এবং সিইউজে’ র সর্বোচ্চ সংখ্যক প্রতিনিধি সমন্বয়ে একটি নতুন অন্তর্বর্তী কমিটি গঠন বা পুনর্গঠন করে দ্রুততম সময়ে নির্বাচন দিতে হবে। তবেই চট্টগ্রামের সাংবাদিক সমাজে বিরাজমান ক্ষোভ অসন্তোষ উদ্বেগের নিরসন হবে।’ এক্ষেত্রে প্রেস ক্লাবের অন্তর্বর্তী কমিটির আহবায়ক এবং জেলা প্রশাসক হিসেবে ফরিদা খানমের ইতিবাচক হস্তক্ষেপ ও বিচক্ষণ দৃষ্টিভঙ্গি প্রত্যাশা করা হয় স্মারকলিপিতে। সিইউজে নেতৃবৃন্দ চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক হিসেবে গত ৫ আগস্ট এর পটপরিবর্তন পরবর্তী সময়ে দায়িত্ব পালনের জন্য ফরিদা খানমকে অভিনন্দন জানান।
স্মারকলিপিতে আরো বলা হয়, ‘চট্টগ্রাম তথা সারাদেশের ঐতিহ্যবাহী পেশাজীবী সংগঠনগুলোর মধ্যে প্রধানতম সংগঠন ‘চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন- সিইউজে’। ১৯৬০ সালে গোড়াপত্তন হওয়া এ সংগঠনের বয়স এখন ৬৫ বছর। সংগঠনটির হাত ধরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব ও চট্টগ্রাম সাংবাদিক কো-অপারেটিভ সোসাইটির মতো ঐতিহ্যবাহী সংগঠনগুলো। এই সংগঠনের সদস্যরাই চট্টগ্রামে ফটো জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন, চট্টগ্রাম টিভি জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন, চট্টগ্রাম সাংবাদিক হাউজিং কো- অপারেটিভ সোসাইটি, চট্টগ্রাম টিভি ক্যামেরা জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন, চট্টগ্রাম রিপোর্টার্স স্ট্যান্ডিং কমিটি, চট্টগ্রাম রিপোর্টার্স কাউন্সিল ও চট্টগ্রাম টেলিভিশন রিপোর্টার্স নেটওয়ার্ক (সিটিআরএন) সহ বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। আমাদের এই প্রাণের সংগঠনে পেশাগত অবস্থান, যোগ্যতা, দায়বদ্ধতার বিবেচনায় সদস্যপদ দেয়া হয় । দল মত নির্বিশেষে মূলত পেশাদার সাংবাদিকরা এর সদস্যপদ পেয়ে থাকেন। চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন এর বর্তমান সদস্য সংখ্যা ৪৪২। এদিকে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সর্বশেষ নির্বাচিত কমিটির ২৮৪ জন সদস্যের মধ্যে ২৫০ জনের বেশি চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সদস্য। চট্টগ্রামে সাংবাদিকদের সংগঠন ও সাংবাদিকতা পেশার যে সংকট চলছে তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে রাষ্ট্র, সমাজ, উন্নয়ন ও অগ্রগতি। নেতৃবৃন্দ এ অবস্থা থেকে দ্রুত উত্তরণে সংশ্লিষ্ট সকলের ভুমিকা প্রত্যাশা করেন। নেতৃবৃন্দ আশা প্রকাশ করে বলেন, পেশাজীবী সাংবাদিকদের চট্টগ্রামের সর্ববৃহৎ প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয়হারা দশায় প্রতিটি পত্রিকা, টেলিভিশন ও অনলাইন মাধ্যমের সাংবাদিক সহকর্মীদের হৃদয়ের বেদনা-দুঃখ-ক্ষোভ- অসন্তোষের বিষয়টি আপনি অনুধাবন করবেন। আপনি এ কঠিন সময়ে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের দায়িত্ব নিয়েছেন। চট্টগ্রাম সব সময় বৈষম্যের বিরুদ্ধে অগ্নিস্ফুলিঙ্গ ধারণ করেছে। চট্টগ্রামের রাজনীতি ও গণমাধ্যম পরিস্থিতি বিভিন্ন সময় জাতীয় অবস্থানকেও পল্লবিত করেছে। এই চট্টগ্রামেরই একজন দায়িত্বশীল জেলা প্রশাসক হিসেবে আপনি সাংবাদিকদের ঐক্য প্রক্রিয়া এবং সাম্যের নিশ্চয়তায় বিশেষ ভূমিকা রাখবেন।
উল্লেখ্য, আমাদের চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সদস্যরা তাদের কর্তব্যকালীন অবস্থান থেকে আপনার দায়িত্ব গ্রহণের শুরু থেকেই এখন পর্যন্ত জেলা প্রশাসনকে সার্বিক সহযোগিতা করে আসছেন। আপনি নিজেই অন্তর্বর্তী প্রেসক্লাব কমিটির ঘোষণাপত্রে বলেছেন, ‘চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের জন্ম হয়েছে চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন থেকে। ‘ অথচ কোন ধরনের কারণ ছাড়া এ সংগঠনের কার্যালয়ে তালাবদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনা আপনার নেতৃত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে চট্টগ্রামসহ সারাদেশের গণমাধ্যমে। দুষ্কৃতকারী ও অসৎ মনের মানুষেরা মূলধারার সাংবাদিকদের সাথে আপনার হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্কের উপর কালিমা লেপন করতে চায়। অথচ সাংবাদিকদের অঙ্গনে স্থিতিশীলতা, মানসিক প্রশস্তি, ভ্রাতৃত্ববোধ, ঐক্য- এসবের উপর সামগ্রিক রাষ্ট্রীয় অগ্রযাত্রা অনেকটায় নির্ভরশীল বলে আমাদের বিশ্বাস।
স্মারকলিপি প্রদানের পূর্বে সৌজন্যে আলোচনায় জেলা প্রশাসক ফরিদা খানন সাংবাদিকদের ঐক্য কামনা করে উদ্বুদ পরিস্থিতিতে পহেলা বৈশাখের পর সংশ্লিষ্ট পক্ষের সাথে আলোচনা শেষে সামগ্রিক ঐক্যের উদ্যোগ নেবেন বলে আশ্বস্ত করেন নেতৃবৃন্দকে। বিজ্ঞপ্তি