করোনায় গত দেড় বছরে কাপড় ধোয়ার যন্ত্র বা ওয়াশিং মেশিনের বিক্রি বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে গেছে। করোনার কারণে একে তো ঘরে ঘরে বেড়েছে কাপড় ধোয়া। অন্যদিকে ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচতে বাসাবাড়িতে সাহায্যকারীর প্রবেশে ছিল কড়াকড়ি। দুইয়ে মিলে করোনা পৌষ মাস হয়ে দেখা দেয় কাপড় ধোয়ার যন্ত্রের ব্যবসার জন্য।
২০১৯ সালে কাপড় ধোয়ার এই যন্ত্র বিক্রি হয়েছিল এক লাখ ইউনিট। ২০২০ সালে সেই বিক্রি দাঁড়ায় ১ লাখ ৮০ হাজার ইউনিটে।
কাপড় ধোয়ার যন্ত্র আমদানি ও প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, করোনার আগে স্বাভাবিক সময়ে কাপড় ধোয়ার যন্ত্রের বিক্রিতে বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ছিল ১৫ শতাংশ। গত বছর করোনার শুরুতে সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর বাড়িতে বাড়িতে গৃহকাজে সহায়তাকারীদের আসা বন্ধ হয়ে যায়। তাতে রাতারাতি বিক্রি বেড়ে যায় কাপড় ধোয়ার যন্ত্রের। ২০১৯ সালে কাপড় ধোয়ার এই যন্ত্র বিক্রি হয়েছিল এক লাখ ইউনিট। ২০২০ সালে সেই বিক্রি দাঁড়ায় ১ লাখ ৮০ হাজার ইউনিটে। ২০২১ সালের ৮ মাসেই বিক্রি হয়েছে ২ থেকে ২ লাখ ২০ হাজার ইউনিট। করোনার কারণে এ বাজারের আকার বেড়ে দাঁড়িয়েছে এখন প্রায় ২৭০ কোটি টাকায়। চলতি বছরের বাকি সময়টাতেও বিক্রির ধারা ঊর্ধ্বমুখী থাকবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।
আগে কাপড় ধোয়ার যন্ত্রের বিষয়ে ক্রেতাদের অনেক ধরনের ভ্রান্ত ধারণা ছিল। কিন্তু করোনায় সব ভুলে প্রয়োজনীয়তা বেড়ে যায় ঘরে ঘরে।
রাজিউর রহমান, জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক, সিঙ্গার বাংলাদেশ
জানতে চাইলে সিঙ্গার বাংলাদেশের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক রাজিউর রহমান বলেন, ‘আগে কাপড় ধোয়ার যন্ত্রের বিষয়ে ক্রেতাদের অনেক ধরনের ভ্রান্ত ধারণা ছিল। কিন্তু করোনায় সব ভুলে প্রয়োজনীয়তা বেড়ে যায় ঘরে ঘরে। বর্তমানে পণ্যটি উচ্চ মধ্যবিত্তরাই বেশি কিনছেন।’
দেশের বাজারে দেশি–বিদেশি মিলিয়ে ২০টির বেশি ব্র্যান্ডের কাপড় ধোয়ার যন্ত্র বিক্রি হয়। যন্ত্রের কার্যক্ষমতা, ধারণক্ষমতা ও বিদ্যুৎ ব্যবহারের ওপর নির্ভর করে বাজারে নয় হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত দামের কাপড় ধোয়ার যন্ত্র রয়েছে। এ বাজারে সিঙ্গারের পণ্যের বাজার হিস্যা সবচেয়ে বেশি। আর দেশীয় ব্র্যান্ডের মধ্যে ওয়ালটন এ বাজারে ধীরে ধীরে তার বাজার হিস্যা বাড়াচ্ছে। বড় শহরের পাশাপাশি জেলা শহরগুলোতে কাপড় ধোয়ার যন্ত্রকে জনপ্রিয় করে তুলছে ওয়ালটন। প্রতিষ্ঠানটির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে সব জেলাতেই চাহিদা বাড়ছে এ যন্ত্রের।
বাজারে ৯ থেকে ১০ হাজার টাকায়ও কাপড় ধোয়ার যন্ত্র পাওয়া যায়। তবে চাহিদা বেশি ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকা দামের পণ্যগুলোর।
বাজারে ৯ থেকে ১০ হাজার টাকায়ও কাপড় ধোয়ার যন্ত্র পাওয়া যায়। তবে চাহিদা বেশি ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকা দামের পণ্যগুলোর। জানতে চাইলে ট্রান্সকম ইলেকট্রনিকসের সহকারী মহাব্যবস্থাপক সৈকত আজাদ বলেন, যেসব কাপড় ধোয়ার যন্ত্রে বিদ্যুৎ খরচ কম, সেগুলোর বিক্রি বেশি। ট্রান্সকম বিদেশি স্যামসাং এবং ওয়ার্লপুল ব্র্যান্ডের পণ্য বিক্রি করে।
এ বাজারের দেশীয় আরেক ব্র্যান্ড ভিশন। প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের মালিকানাধীন এ ব্র্যান্ডের স্বয়ংক্রিয় কাপড় ধোয়ার যন্ত্র বিক্রি বেশি হচ্ছে বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির বিপণন বিভাগের পরিচালক কামরুজ্জামান কামাল। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘যেসব যন্ত্রে কাপড় অনুযায়ী ধোয়ার ধরন বদলানো যায়, সেসব পণ্যের প্রতি ক্রেতাদের আগ্রহ বেশি।’
এ খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত দেশে ১৫ লাখ পরিবারে কাপড় ধোয়ার যন্ত্র আছে বলে ধারণা করা হয়।
এদিকে করোনায় বিক্রি বাড়লেও দেশে এখনো কাপড় ধোয়ার যন্ত্র ব্যবহারকারী পরিবারের সংখ্যা খুব বেশি নয়। এ খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত দেশে ১৫ লাখ পরিবারে কাপড় ধোয়ার যন্ত্র আছে বলে ধারণা করা হয়। বিক্রি বাড়তে থাকায় তাই খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা আশা করছেন, শিগগিরই দেশে ব্যবহারকারী পরিবারের সংখ্যা ৩৫ লাখে উন্নীত হবে। তাই বাজার বড় করতে কিস্তি সুবিধাসহ নানা ধরনের সুবিধা দিচ্ছে কোম্পানিগুলো। পাশাপাশি নতুন নতুন পণ্যও বাজারে আনছে তারা।
দেশি ব্র্যান্ড মিনিস্টারের দুই মডেলের কাপড় ধোয়ার যন্ত্র এত দিন বাজারে ছিল। মিনিস্টারের ব্র্যান্ড অ্যান্ড মিডিয়া বিভাগের প্রধান সোহেল কিবরিয়া বলেন, ‘বাজারটা বড় হওয়ায় আমরা নতুন আরও দুই মডেলের কাপড় ধোয়ার যন্ত্র বাজারে আনার উদ্যোগ নিয়েছি।’











