১ কোটি ৮৯ লাখ টাকার আত্মসাৎ এর অভিযোগ চট্টগ্রাম বাস-মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়ের সভাপতি ও সম্পাদকের বিরুদ্ধে

শফিউল আলম,রাউজানঃ চট্টগ্রাম বাস-মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের অনিয়ম, দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাৎ এর অভিযোগ উঠেছে। সমিতির সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক সহ আরও কয়েক শ্রমিক নেতার যোগসাজশে শ্রমিকের উপার্জিত অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে সাধারণ শ্রমিকের অভিযোগ। প্রায় ১ কোটি ৮৯ লাখ ১৪ হাজার ৯৭০ টাকার অনিয়ম ও দুর্নীতি তথ্য প্রকাশ পেলে ফুঁসে ওঠেছে সাধারণ শ্রমিকেরা।

তারা দাবি করেন শ্রমিকের ঘামঝড়া জমানো টাকা আত্মসাৎকারীদের আইনের মুখোমুখি করতে হবে। নিরপেক্ষ ভাবে অডিট নিয়োগ দিয়ে হিসাব দিতে হবে বর্তমান কমিটিকে। অন্যতাই যেকোনো পরিস্থিতি ভোগ করতে শ্রমিক নেতাদের। চট্টগ্রাম বাস-মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়ন রাউজানের প্রধান কার্যালয় সূত্রে জানা যায়,১৯১৮ইং সালে সাধারণ সভায় অনুষ্ঠিত হয়। ও-ই বছরের ১৮ জুলাই হতে ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন মাসের স্থিতি ছিল ৪ লাখ ৭৮ হাজার ৭৯৫ টাকা। কোন প্রকার ঋন ছিল না। ২০২২ সালের হিসাবে ১৫ লাখ ৫০ হাজার টাকার ঋন দেখানো হয়। যাহা লোকচক্ষুর অন্তরালে এ অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে।

গত ২০১৭ সালের জানুয়ারী মাসের ২৮ তারিখ শ্রমিক ইউনিয়নের তহবিল থেকে শ্যামলী পরিবহন নামে একটা যাত্রীবাহী বাস ক্রয় করা হয়েছিল ৩৫ লাখ টাকা দেখিয়ে। পর্বতীতে প্রমাণিত হয়েছে গাড়ীটি ২৬ লক্ষ টাকায় ক্রয় করা হয়েছে। ক্রয় করা গাড়ি থেকে আত্মসাৎ করা হয়েছে প্রায় ৯ লাখ টাকা। সমিতির সাধারণ সদস্যদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও অর্থের বিনিময়ে রাউজান জলিল নগর বাস ষ্টেশনে নির্মাণ করা হয়েছে দ্বিতল একটি নিজস্ব কার্যালয়। কোন প্রকার সিন্ধান্ত ছাড়াই অফিস কক্ষ সরিয়ে এ ভবনের দ্বিতীয় তলা ভাড়া দিয়েছে একজন হোটেল মালিককে। ৪৪ লাখ টাকা জামানত নিয়ে ছিল। একই সাথে নিচ তলার কয়েকটি দোকান ঘর থেকে আরও ১০ লাখ টাকা জামানত নিয়েছে। সর্বমোট ৫৯ লক্ষ টাকা জামানত নিয়ে তারা সমিতির ঋন হিসাবে দেখানো হয়েছে। সমিতির সদস্যরা এসব অর্থ আত্মসাৎ হয়েছে বলে দাবি করেন।২০২২ সালে অনুষ্ঠিত সাধারণ সভায় ২০১৮ সালের অক্টোবর হতে ২০২২ সালের অক্টোবর পর্যন্ত আয় দেখানো হয়েছে ৩ কোটি ৭৭ লক্ষ ৬৫২ টাকা। শ্রমিকদের অভিযোগ আয়কৃত টাকা ব্যাংকে জমা না করে সমিতির সভাপতি/সম্পাদক নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পুঁজি হিসাবে ব্যবহার করেছে। যার কারণে শ্রমিকরা প্রায় ১৫ লাখ টাকা মুনাফা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। কার্যকরী কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক সমিতির নিজস্ব মালিকানায় একটি গাড়ি তৈরির সিন্ধান্ত হয়। এজন্য একটি কমিটিও গঠিত হয়। গঠিত কমিটিকে পাশ কাটিয়ে কানু নাথ নামে এক সদস্য ৪ লাখ ৩০ হাজার টাকায় একটি ইঞ্জিন ক্রয় করে সমিতির গাড়িতে না লাগিয়ে নিজের গাড়িতে ফিটিংস করে ফেলে। পর্বতীতে ২ লাখ টাকা খরচ করে সমিতির গাড়িটি মেরামত করতে হয়। ইঞ্জিন ক্রয় ও মেরামত জালিয়াতির ঘটনায় কয়েকবার সালিশি বৈঠক হয় সমিতির কার্যালয়ে। বৈঠকে কানু নাথের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করা হয়। কিন্তু রহস্য জনক ভাবে সমিতির দায়িত্বশীলরা তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অপরদিকে ২০২২ সালের সাধারণ সভায় সমিতির স্থিতি ছিল- ৫ লাখ ৫৯ হাজার ৩৮৩ টাকা। আয়ের খাতে ঋন দেখানো হয় ৩৪ লক্ষ ৯৪ হাজার ৯৭০ টাকা। আবার ঋণের বিপরীতে লভ্যাংশ প্রদান করা হয় ৪ লক্ষ ২৩ হাজার ৭৫৯ টাকা। সাধারণ সভা পরবর্তী নির্বাচন শেষে নতুন কমিটির অর্থ সম্পাদককে হিসাব দেওয়ার সময় সমিতির ঋণ দেখানো হয়েছে ২৯ লখ ৫০ পঞ্চাশ হাজার টাকা। শ্রমিকদের দাবি এ হিসাব বিবরণী সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট, জালিয়াতি করে সাজানো হয়েছে।অনিয়মতান্ত্রিক ভাবে শ্রমিকের মৃত্যু ফান্ড থেকে ৫ লাখ ৯০ হাজার টাকা ও সমিতির ঋন গ্রহণ বাবদ আরো ৩৮ লাখ ৯৪ হাজার টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ বর্তমান কার্যকরী কমিটির নেতাদের বিরুদ্ধে। সমিতির সাবেক সভাপতি মোঃ ইউনুচ ১০ লাখ টাকা ঋন প্রদান বানানো তালিকা বলে দাবি করেন এক শ্রমিক। তিনি বলেন, সভাপতি ইউনুচ ও খোরশেদ আলম দশ লাখ টাকা সমিতিকে ঋন দেওয়া নাটক হাস্যকর। তারা দুইজনসহ কানু নাথ সমিতির সাধারণ সদস্যদের কষ্টার্জিত অর্থ আত্মসাৎ করেছে। সদস্যদের দাবি অডিট নয়, সদস্যদের মনোনীত ৫ জন সাধারণ সদস্যের মাধ্যমে আয় ব্যয় বিবরণী তদন্ত করা হোক। বাস-মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়ের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল হক কোম্পানী বলেন, ফ্যাসিবাদের বিদায়ের পর আমরা সমিতির একটি অডিট করেছি। দায়িত্ব প্রাপ্ত অডিটর মোঃ ইকবাল হোসেন অভিযুক্ত কার্যকরী কমিটির সদস্যদের নিকট থেকে উৎকোচ খেয়ে মনগড়া অডিট রিপোর্ট জমা দিয়েছেন। খরচের ভাউচার ও ক্রয় সংক্রান্ত ভাউচার না নিয়ে এ অডিট করা হয়েছে। আমরা এ হিসাবের অডিট প্রত্যাখ্যান করেছি।তিনি সমিতির অর্থ আত্মসাৎকারীদের আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবী জানান।অভিযুক্ত বাস- মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়ের সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলম বলেন, সমিতির হিসাব অডিট নিয়োগ দিয়েছে তাদের মনোনীত ব্যক্তি। অডিটে কোন প্রকার অনিয়ম বা দুর্নীতির উল্লেখ নেই। গত ১৫ বছর ধরে ভোটে নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক আমি। শ্রমিকদের কল্যাণে কাজ করে আমি জনপ্রিয় হয়েছি। আমি আবারও সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচন করব। শ্রমিকদের মাঝে আমার জনপ্রিয়তায় দেখে ষড়যন্ত্র করছে একটি মহল। আমি বা আমার পরিষদ কোন প্রকার অর্থ আত্মসাৎ করি, তাহলে তারা আদালতে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারবে।

অভিযুক্ত বাস-মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়ের সভাপতি আলী আকবর অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষায় আমরা কাজ করি। অডিটর যদি কোন ভুল করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিক। আমাদের বিরুদ্ধে আনীত অর্থ আত্মসাৎ এর অভিযোগ ভিক্তিহীন ও মনগড়া।