চবি আইকিউএসি কর্তৃক “Allama Iqbal’s Thought On Nationalism” শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি এস্যুরেন্স সেলের (আইকিউএসি) উদ্যােগে “Allama Iqbal’s thought on nationalism” শীর্ষক এক সেমিনার বুধবার (১২ নভেম্বর) সকাল ১১টায় চবি কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) প্রফেসর ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) প্রফেসর ড. মো. কামাল উদ্দিন। চবি রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি প্রফেসর ড. এ.কে.এম মাহফুজুল হক (মাহফুজ পারভেজ) এর সভাপতিত্বে সেমিনারে স্পিকার ছিলেন ইউনিভার্সিটি অব দ্য পাঞ্জাবের ওরিয়েন্টাল কলেজের ইনস্টিটিউট অব উর্দু ল্যাঙ্গুয়েজ এন্ড লিটারেচারের প্রফেসর ড. বশিরা আমব্রিন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে চবি উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) প্রফেসর ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান বলেন, আল্লামা ইকবালের মূল চেতনা ছিল ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক চিন্তা দ্বারা একটি জাতি গঠিত হতে পারে। তিনি বার বার বলেছিলেন মুসলিম সংস্কৃতি, মুসলিম ধর্মীয় চিন্তা নিয়ে মুসলমানদের পৃথিবীর বুকে টিকে থাকতে হবে। তাঁর এমন চিন্তার পরই ১৯৪০ সালে লাহোর প্রস্তাব হয়। এরপরই দ্বি-জাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত-পাকিস্তানের জন্ম হয়। পরবর্তীতে স্বাধীনতা সংগ্রামের মাধ্যমে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা পেয়েছি আমরা। বাংলাদেশ স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হওয়ার পিছনে আল্লামা ইকবালের চিন্তার অবদান রয়েছে। আল্লামা ইকবাল ছিলেন একাধারে কবি ও রাষ্ট্রচিন্তক। এসময় উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) আল্লামা ইকবালকে নিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি গবেষণা সেন্টার করার আশ্বাস দেন।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে চবি উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) প্রফেসর ড. মো. কামাল উদ্দিন আইকিউএসিকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আল্লামা ইকবাল তাঁর সাংস্কৃতিক চিন্তায় ঐতিহ্য ও আধুনিকতার সমন্বয় ঘটিয়েছেন এবং তাঁর পশ্চিমাবিরোধী অবস্থান মূলত পশ্চিমা বস্তুবাদ, আধ্যাত্মিক শূন্যতা ও ঔপনিবেশিকতার সমালোচনার মধ্যে নিহিত ছিল। তিনি ইসলামকে একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা হিসেবে দেখতেন এবং মুসলিমদের নিজস্ব সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক পরিচয়ের ধারণা দেন।

সেমিনার স্পিকার প্রফেসর ড. বশিরা আমব্রিন বলেন, ইকবাল জাতিগত বা ভৌগোলিক বিভাজনের ঊর্ধ্বে উঠে ইসলামি মূল্যবোধের ভিত্তিতে মুসলিম সম্প্রদায়ের ঐক্যকে প্রাধান্য দিয়েছিলেন। তারুণ্যের জাগরণ চেয়েছিলেন। তিনি দ্বি-জাতি তত্ত্বের অন্যতম প্রবক্তা ছিলেন। তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন যে, মুসলমানরা একটি স্বতন্ত্র জাতি এবং তাদের রাজনৈতিকভাবে নিজেদের স্বার্থ সুরক্ষিত করার অধিকার আছে। আল্লামা ইকবাল ছিলেন দক্ষিণ এশিয়ার সাংস্কৃতিক আইকন। তিনি ছিলেন মানবতার কবি, আত্মোপলব্ধির কবি। বর্তমান সমগ্র জাতিকে সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে হলে আল্লামা ইকবালের মানবকল্যাণ নীতি অনুসরণ করতে হবে।

ড. বশিরা আমব্রিন বলেন, আল্লামা ইকবাল পশ্চিমা ভূখণ্ড-ভিত্তিক জাতীয়তাবাদকে কঠোরভাবে সমালোচনা করেছেন। তাঁর মতে, ভাষা, বর্ণ বা কেবল জন্মভূমির ভিত্তিতে জাতীয়তা নির্ধারণ করা মানুষকে বিভেদমুখী করে তোলে। তিনি বস্তুবাদ ও সাম্রাজ্যবাদী জাতীয়তাবাদকে একধরনের বস্তুবাদী ও সাম্রাজ্যবাদী চেতনা হিসেবে দেখেছেন, যা মানুষের নৈতিক ও আধ্যাত্মিক দিককে উপেক্ষা করে। আল্লামা ইকবাল প্রচলিত জাতীয়তাবাদের বিকল্প হিসেবে ‘মুসলিম জাতীয়তাবাদ’ বা ‘মিল্লাত’-এর ধারণা দেন। তাঁর কাছে জাতীয়তার মূল ভিত্তি ছিল কোনো ভূখণ্ড বা জাতি নয়, বরং ইসলামের তাওহীদ (একত্ববাদ) এর আদর্শ এবং একটি অভিন্ন আধ্যাত্মিক ও সাংস্কৃতিক পরিচিতি। এটি বর্ণ, গোত্র ও ভাষার সীমা ছাড়িয়ে বিশ্বব্যাপী মুসলিম ভ্রাতৃত্বের পক্ষে ছিল। তাঁর জাতীয়তাবাদী চেতনা সংকীর্ণ দেশপ্রেম নয়, বরং আদর্শিক একতা ও আত্মিক জাগরণের এক সার্বজনীন বার্তা।

সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন চবি আইকিউএসির পরিচালক প্রফেসর ড. মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন। সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন লাহোরের ইউনিভার্সিটি অব এডুকেশনের প্রফেসর ওয়াহিদুর রহমান, চবি ফারসি বিভাগের ভিজিটিং প্রফেসর ড. মেহরান নাজাফি হাজিবার, চবি আরবি বিভাগের প্রফেসর ড. আ.ক.ম. আবদুল কাদের এবং চবি নজরুল গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ফরিদুদ্দিন। এসময় বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সেমিনারে সঞ্চালনা করেন চবি রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী শেখ সোহেলী আফরোজ।