পঙ্গপাল নয় দাবী করলেও পোকা শনাক্তকরণে রওনা দিলো বিশেষজ্ঞ দল

শাওন ইমতিয়াজ:: আতংকের সৃষ্টি করা পোকা পঙ্গপাল নয় দাবী করলেও কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলায় গাছে গাছে ঘাসফড়িংয়ের মতো ছোট পোকা শনাক্তকরণে রওনা হয়েছেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে উচ্চ পর্যায়ের বিশেষজ্ঞ দল। যদিও প্রাথমিকভাবে তারা জানিয়েছে এটা পঙ্গপাল নয়।

এদিকে বাংলাদেশে ‘পঙ্গপাল’ এর হানা দিয়েছে এমটা মনে করছে টেকনাফ সীমান্তে এলাকার লোকজন। কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তে এক প্রকারের পোকার আক্রমণ শুরু হয়েছে। পোকাগুলো স্থানীয় লোকজনের কাছে অচেনা। তাদের ধারণা এগুলোই সম্ভবত ‘পঙ্গপাল।’ পঙ্গপালের আক্রমণ শুরু হয়েছে মনে করে স্থানীয় জনমনে আতংকের সৃষ্টি হয়েছে।

শুক্রবার (১ মে) সকালেই কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের কীটতত্ত্ববিদদের সমন্বয়ে উচ্চপর্যায়ের একটি দল টেকনাফের উদ্দেশে রওয়ানা হয়েছেন।

পাশাপাশি বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) এবং বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) থেকেও আলাদা আলাদা টিম রওয়ানা দিয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়।

মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম জানান, ঘাসফড়িং সদৃশ লোকাস্ট গোত্রের স্থানীয় এই পোকার শনাক্তকরণসহ আক্রমণ প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও ধ্বংসে এই টিম কাজ করবে।

বেশ কিছুদিন আগে কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার লম্বরী গ্রামের কয়েকটি গাছে ঘাসফড়িংয়ের মতো কিছু ছোট পোকার আক্রমণ দেখা দিলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কক্সবাজারের উপপরিচালক ও স্থানীয় কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে কীটনাশক প্রয়োগ করে পোকাগুলো দমন করেন।

কক্সবাজার জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক মো. আবুল কাশেম গতরাতে জানিয়েছেন- ‘পোকাগুলোর পাখা নেই। উড়তে পারে না। লাফিয়ে লাফিয়ে এসব চলাচল করে। তাই এগুলো ভারত হোক আর মিয়ানমার হোক এখানে কিভাবে আসবে-প্রশ্ন তার।’

উপ-পরিচালক বলেন, দুই সপ্তাহ আগে টেকনাফের লম্বরি পাড়ার একটি পরিত্যক্ত মুরগির খামারের ঝোপ জঙ্গলের ভেতর পোকাগুলো বংশ বিস্তার করে। খবর পেয়ে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের লোকজন ঘটনাস্থলে গিয়ে বিষ প্রয়োগ করে।

এতে পোকাগুলোর অনেকাংশই মারা যায়। পরবর্তীতে এসব পোকা আবারো বংশ বিস্তার করে। তিনি নিশ্চিত করে জানান, এসব পোকা কোনোভাবেই পঙ্গপাল হতে পারে না। কেননা পঙ্গপালের পাখা রয়েছে। আর এসব পোকা হচ্ছে পাখাহীন।

স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, আকস্মিক ঝাঁকে ঝাঁকে পোকাগুলো টেকনাফ সীমান্তে দেখা যেতে শুরু করে। এসব পোকার ঝাঁক গাছে বসে মুহূর্তেই পাতাগুলো সাবাড় করে ফেলছে।

টেকনাফ পৌর এলাকার লম্বরি পাড়ার সোহেল সিকদার নামের একজন বাসিন্দা গতরাতে জানান, গত দুদিনেই তার ভিটার ৫টি আম গাছ ও ২টি তেলসুল গাছের পাতা এসব পোকায় সাবাড় করে ফেলেছে।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের শেষ থেকে আফ্রিকার ইথিওপিয়া, কেনিয়া ও সোমালিয়াসহ কয়েকটি দেশে আক্রমণ চালিয়ে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি করে পঙ্গপাল।

এ বছরের শুরু থেকে পঙ্গপাল নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে পাকিস্তান। গত ৩১ জানুয়ারি দেশটির সরকার এ নিয়ে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে।

পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশের ২২ হাজার একর জমির ফসল ধ্বংস করে ভারতের পাঞ্জাবেও আক্রমণ করে শস্যখেকো পঙ্গপালের ঝাঁক। পঙ্গপাল সামাল দিতে চীন থেকে বিশেষ ধরনের হাঁস আনার উদ্যোগ নেয় তারা।

কক্সবাজার জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবুল কাশেম বলেন, “টেকনাফের এ পোকা নিয়ে যেভাবে আতঙ্ক ছড়ানো হচ্ছে, বাংলাদেশে পঙ্গপাল ঢুকে গেছে আসলে বিষয়টা তা নয়। “কারণ এ পোকা ফসল ধ্বংস করেছে বলে শুনিনি এবং ফসলের জমিতেও এ পোকার অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।”
তিনি জানান, সাহারা মরুভূমি, আফ্রিকা, পাকিস্তানসহ অন্যান্য স্থানে ভিডিওতে যে পঙ্গপালের ছবি তিনি দেখেছেন, তার সঙ্গে এ পোকার মিল নেই। ফলে পঙ্গপাল বলে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু তিনি দেখছেন না।

টেকনাফের ওই বাড়ির আশপাশ খুবই নোংরা জানিয়ে তিনি টেকনাফ উপজেলা কৃষি অফিসের উপ-সহকারী কর্মকর্তা শফিউল আলম বলেন, প্রথমে কীটনাশক ছিটিয়ে পোকাগুলো মেরে ফেললেও অনেক পোকা থেকে যায়। যা পরবর্তীতে আবারও গাছে আক্রমণ করে।

“বিষয়টি জেলা কৃষি কর্মকর্তাকে জানালে তিনি সরজমিনে পরিদর্শন করেন এবং কিছু নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে যান।”

টেকনাফের ওই পোকার নমুনা সংগ্রহ করে ভিডিও করে গত বুধবার বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানী মো. রুহুল আমিন ও দেবাশীষ সরকারের কাছে পাঠানো হয়েছিল।

“তিনি ফোনে জানিয়েছেন, এটা মরুভূমির যে পঙ্গপাল, সে পঙ্গপাল না। এটা ঘাসফড়িংয়ের একটি প্রজাতি হতে পারে।”

 

তবে অনেকেই এসব পোকাকে মরুভূমির পঙ্গপাল বলে ধারণা করে আসছিলেন। আফ্রিকার কয়েকটি দেশে পঙ্গপালের আক্রমণে ক্ষেতের ফসল ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। লাখ লাখ পঙ্গপাল যে ক্ষেতে বসে সেখানে ফসল শেষ না হওয়া পর্যন্ত ছেড়ে যায় না বলে জানিয়েছে বিশেষজ্ঞরা।

তবে কৃষি মন্ত্রণালয় জানায়, এই পোকা তেমন ক্ষতিকর নয় মর্মে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। এসব পোকা মরুভূমির ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে আসা পঙ্গপাল জাতীয় কোনো পোকা নয়।

এ নিয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ জানিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়।