কখনো পুলিশ, কখনো র‌্যাব সেজে হাতিয়ে নিতো লাখ লাখ টাকা

কখনো পুলিশ, কখনো র‌্যাব, আবার কখনো বিজিবি অফিসার সেজে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া প্রতারককে তার সহযোগীসহ গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- ফটিকছড়ি থানার বক্তপুর গ্রামের মৃত আব্দুল মালেকের ছেলে বেলাল হোসেন (৩১) ও তার সহযোগী ভুজপুর থানার পশ্চিম সুয়াবিলের মৃত এজাহার মিয়ার ছেলে মো. ওসমান (৫৩)।

বুধবার (৩১ আগস্ট) দিবাগত রাত পৌনে ১টায় নাজিরহাট বাজার এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

র‌্যাব জানায়, গত ১৬ আগস্ট সন্ধ্যায় খোরশেদুল আলম নামে এক ব্যক্তির ফোনে এসআই পরিচয় দিয়ে পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা মোকদ্দমার ভয় দেখিয়ে তার কাছে ২০ হাজার টাকা দাবি করে প্রতারক বেলাল। ভয় পেয়ে তিনি রাতে ২০ হাজার ৪’শ টাকা বিকাশে তার কাছে পাঠায়। পরদিন থানার ওসি সেজে পুনরায় তার কাছ থেকে বিকাশের মাধ্যমে ৩০৬০ টাকা নেয়। এদিনই সার্কেল এএসপি সেজে আবার ভয় দেখিয়ে ৫০ হাজার টাকা দাবি করে। খোরশেদুল আলম রাতে আবারও তাকে বিকাশের মাধ্যমে ২৯ হাজার ৮৫০ টাকা পাঠায়। এরপর প্রতারক বেলাল এসপি সেজে তার বিভিন্ন বিষয়ে খোঁজ নেয়। এভাবে প্রতারক বেলাল তার কাছ থেকে মোট ৫৩ হাজার ৪০ টাকা হাতিয়ে নেয়। এতেও ক্ষান্ত হয়নি বেলাল। আবার র‌্যাবের অফিসার সেজে তাকে ফোন দিয়ে বলে মামলাটি বর্তমানে র‌্যাবের কাছে আছে। সেজন্য তার কাছ থেকে আবারও টাকা দাবি করে। পরে তিনি অতিষ্ঠ হয়ে র‌্যাবকে বিষয়টি অবহিত করেন।

র‌্যাব-৭ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) মো. নুরুল আবছার বলেন, ‘আমরা তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা পায়। এরপর এ ঘটনায় গোয়েন্দা নজরদারি শুরু করে র‌্যাব। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গতকাল বুধবার দিবাগত রাত পৌনে ১টায় নাজিরহাট বাজার এলাকা থেকে প্রতারক বেলালকে গ্রেপ্তার করা হয়।’

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে পুলিশ-র‌্যাব পরিচয়ে খোরশেদ আলমের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে। বেলাল ২০২১ সালের মে মাস থেকে বিভিন্ন লোকের কাছে আইনশৃংখলা রক্ষা বাহিনীর সদস্য হিসেবে মিথ্যা পরিচয় দিয়ে একটি প্রাইভেটকার নিয়ে ঘুরে বেড়াত। বিভিন্ন কাজ করে দেওয়ার নাম করে নানা অজুহাতে বিভিন্ন লোকের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিতো। সে অনিবন্ধিত বিভিন্ন অনলাইন চ্যানেল থেকে বিভিন্ন ক্রাইম ও মামলার খবর, জমিজমার বিবাদের সংবাদ নিয়ে কখনো এসআই বা থানার ওসি, কখনো সার্কেল এএসপি বা এসপি কখনো বা র‌্যাবের অফিসার ইত্যাদি পরিচয় দিয়ে কথা বলতো ও টাকা দাবি করত। টাকা না দিলে কিংবা দিতে দেরি করলে হুমকি-ধামকিও দিত বলে জানায় র‌্যাবের এই কর্মকর্তা।

নুরুল আবছার বলেন, ‘বেলালের একট মুরগির ফার্ম ছিল। ২০২১ সালের মে মাসে সে সর্বপ্রথম প্রতারণার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়ার কাজ শুরু করে। প্রথমে সে তার বন্ধুবান্ধব ও পরিচিতজনদের ভয় দেখাতো। ওই মাসে একটি মুদির দোকান থেকে সয়াবিন তেলের ডিলার সেজে ৫ হজার টাকা হাতিয়ে নেয়। এছাড়া সে থানার ওসি সেজে ইউনিয়ন পরিষদের দফাদারের কাছ থেকে আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মেম্বার পদ প্রার্থীদের মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে পরবর্তীতে তাদেরকে নির্বাচনে সহযোগিতা করার কথা বলে বিভিন্ন পরিমাণ টাকা আদায় করে। সর্বশেষ রাউজান থানায় একটি বাচ্ছা মারা যাওয়ার ঘটনায় তার পিতার নিকট ময়নাতদন্তের ঝামেলা এড়ানোর কথা বলে নির্মমভাবে ৫ হাজার টাকা আদায় করেছে। গ্রেপ্তার প্রতারক বেলালকে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।