গণবিরোধী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সবাই রাজপথে নামুন, দুঃশাসনের অবসান চাই

জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির গণবিরোধী সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করেছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) চট্টগ্রাম জেলা। সভায় সিপিবি নেতারা বলেছেন, দুর্নীতি-লুটপাট, টাকা পাচার ঠেকাতে ব্যর্থ সরকার জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়ে জনজীবনকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে। এ সরকার জনগণের ভোটের তোয়াক্কা করে না। এ সরকার জনমতেরও তোয়াক্কা করে না। এজন্য জনগণের দুর্ভোগেও তাদের বিবেক জাগ্রত হয় না। হঠাৎ করে জ্বালানি তেলের দাম প্রায় দ্বিগুণ বাড়িয়ে দেয়ার ফলে প্রায় ৫০ লাখ মানুষ দারিদ্রসীমার নিচে চলে যাবে। চলমান দুঃশাসনের অবসান না হলে জনগণের মুক্তি হবে না।

শনিবার (০৬ আগস্ট) বিকেলে চট্টগ্রাম নগরীর সিনেমা প্যালেস চত্বরে সিপিবি চট্টগ্রাম জেলার বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন জেলা সিপিবির সভাপতি অধ্যাপক অশোক সাহা।

সমাবেশে সিপিবি নেতারা বলেন, রাতের আঁধারে বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা সরকার রাতের আঁধারে জ্বালানি তেলের দাম প্রায় দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। টাকা পাচার, দুর্নীতি-লুটপাটের মাধ্যমে সরকার দলীয় লুটেরারা রাষ্ট্রীয় কোষাগার খালি করে ফেলেছে। রিজার্ভের পরিমাণ দিন দিন কমছে। অপরিণামদর্শী মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়নের নামে জনগণের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়েছে বিশাল অঙ্কের ঋণের বোঝা। দেশের অর্থনীতিকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে সরকার। এ অবস্থায় সরকার জনগণের ঘাড়ে সওয়ার হয়েছে। দুর্নীতিবাজ, লুটপাটকারী, টাকা পাচারকারীদের ধরার মুরোদ নেই, জনগণের পকেট কেটে টাকা নেয়ার ফন্দি করেছে সরকার।

সিপিবি নেতারা আরও বলেন, হঠাৎ করে জ্বালানি তেলের দাম প্রায় ৫০ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত চরম গণবিরোধী। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দেশপ্রেমিক সকল নাগরিককে আমরা রাজপথে নামার আহ্বান জানাচ্ছি। সরকার আইএমএফ, সাম্রাজ্যবাদী গোষ্ঠী এবং দেশীয় লুটেরাদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। আমরা সরকারকে বলতে চাই- তেলের দাম বাড়ানোর আগে আপনারা জনগণের কথা কেন একবারও বিবেচনায় নেননি ? আপনাদের তো লুটপাটের টাকা আছে, জনগণের কি আছে ? গবেষকরা বলছেন- ৫০ লাখ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যাবে। একদিকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্দ্ধগতির চাপ, করোনার কারণে অনেকে চাকরি হারিয়েছেন, অনেকের চাকরি চলে গেছে, মানুষের আয় কমে গেছে, শ্রমিক-কৃষক-দিনমজুরের সংসার চলছে কিভাবে- সরকার সেই খবর রাখছে কি না আমরা জানতে চাই।

অবিলম্বে গণবিরোধী সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়ে সিপিবি নেতারা বলেন, দলের লুটেরাদের অবাধে লুটপাটের সুযোগ দেবেন আর জনগণের ঘাড়ে বন্দুক রাখবেন, এটা আর মেনে নেওয়া যায় না। দেশ ইউরোপ-সিঙ্গাপুর হয়ে যাবে স্বপ্ন দেখিয়ে মানুষকে ঘুম পাড়িয়ে রাখার দিন শেষ হয়ে গেছে। আমরা সিপিবি গরীব-মেহনতি মানুষের পার্টি। আমরা জনগণকে আহ্বান জানাই- ভার্চুয়াল জগত ছেড়ে সবাই রাস্তায় নামুন। দুঃশাসনের প্রতিবাদ করুন। দুর্নীতি-লুটপাটের প্রতিবাদ করুন। সরকারের গণবিরোধী কর্মকাণ্ড প্রতিরোধ করুন। বাম বিকল্প শক্তিশালী করুন। আওয়ামী লীগ-বিএনপি লুটেরা পুঁজিপতিদের দল। এগুলো গণমানুষের দল নয়। গণমানুষের দল সিপিবির পতাকাতলে এসে জোরদার আন্দোলন গড়ে তুলুন। বাম বিকল্প শক্তিকে ক্ষমতায় নেয়া ছাড়া জনগণের মুক্তির আর কোনো পথ নেই।

সিপিবি চট্টগ্রাম জেলার সহকারী সাধারণ সম্পাদক নূরুচ্ছাফা ভূ্ঁইয়া’র সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন, সিপিবি সাধারণ সম্পাদক মোঃ জাহাঙ্গীর, সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য উত্তম চৌধুরী, নারীনেত্রী রেখা চৌধুরী, সিপিবি দক্ষিণ জেলার সহকারী সাধারণ সম্পাদক সেহাব উদ্দিন সাইফু,  যুব ইউনিয়ন চট্টগ্রাম জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক রাশিদুল সামির প্রমুখ।

সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।