সকালবেলার মকতব প্রয়োজনীয়তা ও উপকারিতা

আমরা মুসলমান। আমাদের দীন-ধর্ম ইসলাম। ইসলাম একটি পুর্নাঙ্গ জীবনব্যবস্থার নাম। আমাদের ব্যক্তিগত জীবন থেকে শুরু করে একেবারে আন্তর্জাতিক জীবন পর্যন্ত প্রতিটি স্তরের যাবতীয় দিকনির্দেশনা ও সৃষ্ট সকল সমস্যার সমাধান ইসলামে রয়েছে। ইসলাম সম্পর্কে যথাযত জ্ঞান রাখা আমাদের জন্য এক অপরিহার্য বিষয়। আর ইসলাম সম্পর্কে জানার সর্বোত্তম মাধ্যম হলো “কুরআন ও হাদীস”। কুরআন হাদিস আগে পড়তে জানতে হবে তারপর বুঝে সে অনুযায়ী জীবনযাপন করতে হবে। কেননা রাসূল আকরাম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : “আমি তোমাদের মাঝে দু’টি জিনিস রেখে যাচ্ছি। তোমরা সেগুলোকে আকড়ে ধরলে কখনো পথভ্রষ্ট হবে না। একটি হলো কুরআন অন্যটি হলো হাদীস”। জীবনে বাঁচতে হলে, চলতে হলে জাগতিক জ্ঞান অবশ্যই আমাদের অর্জন করতে হবে। অপরিহার্যভাবে শরীয়তের প্রয়োজনীয় আহকাম ও বিধিবিধান সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান রাখতে হবে। কেননা একজন মুসলিম হিসেবে আমার দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতে হবে, রমজানে রোজা রাখতে হবে, সময় মতো উপযুক্ত স্থানে যাকাত আদায় করতে হবে ইত্যাদি। এছাড়াও ব্যবসা-বানিজ্য,বিবাহ-শাদি এবং আর্থিক লেনদেন সর্বোপরি একজন মানুষ হিসেবে সমাজে দশজনের সাথে কীভাবে চলতে হবে, সহবস্থান করতে হবে সবকিছু শরীয়তসম্মত হওয়ার জন্য দীনের জ্ঞান অবশ্যই অর্জন করতে হবে। নিজ ধর্ম-কর্ম, আচার উচ্চারণ সম্পর্কে শিশুদের ছোটবেলায়ই সঠিক ধারণা ও শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে, এটাই যুগের দাবি। পাঠ্য বই থেকে সব ধরনের ধর্মীয় শিক্ষা পরিকল্পিতভাবে বাদ দেওয়া হচ্ছে। আবার চারদিকে ইসলাম ধর্মকে বিকৃতভাবে উপস্থাপনের জোরদার অপচেষ্টা চলছে। ঠিক এই মুহূর্তে আমরা যদি আমাদের বাচ্চাদের ইসলামের মৌলিক শিক্ষা ও দীক্ষা দিতে ব্যর্থ হই তাহলে এটা আমাদের জন্য বড় হতাশা ও লজ্জার কারণ।

যেসব বাচ্চারা মাদরাসায় পড়াশোনা করে, তারা তো শুরু থেকে পর্যায়ক্রমে ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করে কিন্তু আমাদের স্কুল পড়ুয়া বাচ্চাগুলো এবং আমাদের চারপাশে অগণিত পথশিশু, যারা আগামীর স্বপ্ন ও সম্ভাবনা, তাদের দীনি শিক্ষা ও দীক্ষার গুরুদায়িত্বটা আমাদেরই পালন করতে হবে। শিরক,বিদআত,গুনাহ ও অপরাধ এবং এগুলোর পরিণতি সম্পর্কে তাদের জানাতে হবে। আখেরাতে জান্নাত এবং আল্লাহর অগণিত নেয়ামতের কথা বলে তাদের ভালো কাজের প্রতি উৎসাহিত এবং জাহান্নামসহ বিভিন্ন আজাব গজবের কথা বলে মন্দ কাজ এবং আল্লাহর নাফরমানি থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিতে হবে এবং সার্বিক বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। আগেকার দিনে “সকালবেলার মক্তব” এর খুব রেওয়াজ ছিলো। কিন্তু যত দিন গড়াচ্ছে এসব মকতব আস্তে আস্তে কমে যাচ্ছে। যার ফলে বাচ্চারা নৈতিকভাবে পিছিয়ে যাচ্ছে এবং মোবাইলসহ বিভিন্ন ডিভাইসে গেইম ইত্যাদিতে মোহগ্রস্ত হচ্ছে। সবচেয়ে পরিতাপের বিষয় হলো এই নৈতিক অবক্ষয়ের কারণে আমাদের সমাজে কিশোরদের দ্বারাই নানান অপরাধ সংগঠিত হচ্ছে। অন্তত “সকালবেলার মকতব” দিয়ে যদি আমরা শিশুমনে ইসলামের সৌন্দর্য ছড়িয়ে দিতে পারি তাহলে আমরা সফল এবং আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যত উজ্জ্বল ও নিরাপদ।

আনাস বিন আব্বাস শিক্ষার্থী : আন্তর্জাতিক ইসলামিক ইউনিভার্সিটি চট্টগ্রাম।