বিপজ্জনক পণ্য সরাতে চট্টগ্রাম বন্দরের তোড়জোড় , ১৭ দফা সুপারিশ

বিএম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর বন্দর থেকে বিপজ্জনক পণ্য সরানোর তোড়জোড় লক্ষ্য করা গেছে।এরইমধ্যে মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের অভ্যন্তরে পড়ে থাকা প্রায় ২হাজার ৬৪ টিউস বিপজ্জনক পণ্য পরিবাহিত কন্টেইনার দ্রুত চট্টগ্রাম বন্দর থেকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু করেছে।

এই সব কন্টইনার বিগত ২ থেকে ২৮ বছর পর্যন্ত পড়ে আছে চট্টগ্রাম বন্দরে। কনটেইনার ছাড়াও পি শেডে আছে রাসায়নিকসহ ৩৭৬ টন বিপজ্জনক পণ্য, যার মধ্যে ৪৭ টন নিলামে তোলার জন্য কাস্টমসকে হস্তান্তর করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। বন্দরের তালিকায় দীর্ঘদিন পড়ে থাকা বিপজ্জনক পণ্যের তালিকায় রয়েছে নাইট্রিক অ্যাসিড, সালফিউরিক অ্যাসিড, প্রোপাইনিক অ্যাসিড, অক্সিজেন সাপ্লিমেন্ট ইত্যাদি। এরই মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের অভ্যন্তরে পড়ে থাকা বিপজ্জনক পণ্য দ্রুত সরাতে এবং বন্দরের দৈনন্দিন কাজে বিপজ্জনক পণ্য পরিবহনের ঝুঁকি কমাতে ১৭ দফা নতুন নির্দেশনা জারি করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। গত সপ্তাহে আমদানিকারক ও রপ্তানিকারক, শিপিং এজেন্টস, ক্লিয়ারিং এন্ড ফরওয়ার্ডিং এজেন্ট, ফ্রেইট ফরোওয়ার্ডর্সসহ সকল বন্দর স্টেকহোল্ডারদের সাথে বৈঠকে এ সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের প্রেক্ষিতে ১৭ দফা সুপারিশ জারি করা হয়। যা সকল স্টেকহোল্ডারদের মেনে চলতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ১৭ দফা সুপারিশে বলা হয়েছে, বিপজ্জনক পণ্যের কনটেইনার ও কার্গো বন্দরে পৌঁছানোর তিন দিনের মধ্যে ডেলিভারি নিতে হবে। এছাড়া বন্দর স্টেকহোল্ডারদের আন্তর্জাতিক মেরিটাইম ডেঞ্জারাস গুডস (আইএমডিজি) কোড মেনে চলার জন্য এবং আইজিএম’এ (ইমপোর্ট জেনারেল ম্যানিফেস্ট) বিপজ্জনক কনটেইনারগুলিকে সঠিকভাবে ঘোষণা করতে হবে। পাশপাশি বিপজ্জনক কার্গোকে যথাযথ লেবেল (স্টিকার) দিয়ে চিহ্নিত করে দিতে হবে। যদি কোন বিপজ্জনক পণ্যের কনটেইনার যথাযথ চিহ্ন/লেভেল ছাড়াই চট্টগ্রাম বন্দরে আসে, তবে বন্দর ইয়ার্ডে আনলোড করার আগে বিপজ্জনক পণ্যের লেবেলগুলো অবশ্যই কনটেইনারের গায়ে লাগিয়ে দিতে হবে। পাশাপাশি বিপজ্জনক পণ্যের রপ্তানি কার্গোর স্ট্যান্ডার্ড প্যাকেজিং থাকতে হবে এবং বিপজ্জনক কার্গো আইন ১৯৫৩ এর সাথে সঙ্গতি রেখে প্যালেটাইজ করতে হবে। উক্ত পণ্য দ্রুত খালাস নিশ্চিত করতে কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিপজ্জনক পণ্যের কনটেইনারগুলো পরীক্ষা করতে হবে। সমস্ত বিপজ্জনক পণ্য এবং পচনশীল পণ্যগুলি যদি সময়মতো ডেলিভারি না করা হয় তবে অবশ্যই নিলামে তুলতে হবে এবং প্রয়োজনে কর্তৃপক্ষকে বন্দর ইয়ার্ডের জায়গা খালি করার জন্য স্পট নিলাম পরিচালনা করতে হবে।

আদেশে আরো বলা হয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে পি-শেড ও বাপেক্স ইয়ার্ডে মজুত থাকা বিপজ্জনক পণ্য আগামী সাত দিনের মধ্যে ধ্বংস করার ব্যবস্থা করতে হবে। যদি কোনো আমদানিকারক মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে পণ্য নিয়ে আসে, তাহলে ওই আমদানিকারক যেন ভবিষ্যতে আর কোন পণ্য আনতে না পারে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ওই আমদানিকারকদের নিষিদ্ধ করাসহ আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে। জাহাজ থেকে কনটেইনার ইয়ার্ডে নামার নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে খালাস না হলে অতিরিক্ত সময়ের জন্য অর্থ আদায় করা হবে এবং সাধারণ স্টোরেজ চার্জের চেয়ে ১০ গুণ বেশি জরিমানা আদায় করতে পারবে। এসব নির্দেশনা প্রসঙ্গে বন্দর সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, বিপজ্জনক পণ্য বন্দরের ইয়ার্ড থেকে দ্রুত খালাসের জন্য বিভিন্ন সময়ে নানা পদেক্ষপ নেওয়া হয়েছে। আমদানিকারকদের বার বার তাগাদাও দিয়েছে। কিন্তু অনেকে বিপজ্জনক পণ্য এনে বন্দরের ইয়ার্ডে ফেলে রাখে। এতে ঝুঁকিতে থাকে বন্দর। এখন কঠোর অবস্থানে যেতে বাধ্য হচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর। কারণ কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটুক এটা বন্দর কর্তৃপক্ষ চায় না।