তাবলিগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে নিহত ১

নিউজডেস্ক: টঙ্গীতে জোড় ইজতেমাকে কেন্দ্র করে তাবলীগ জামাতের দিল্লি মারকাজ এবং দেওবন্দ মাদ্রাসার অনুসারী দুই পক্ষের সংঘর্ষ সত্তর বছর বয়সী এক বৃদ্ধ নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন দুই শতাধিক।

গাজীপুর মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক একেএম কাওসার চৌধুরী জানান, সংঘর্ষের মধ্যে ইসমাইল মণ্ডল নামে মুন্সীগঞ্জ থেকে আসা এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। তার মাথায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে।

সকালে সংঘর্ষ শুরুর পর দুপুর ১২টা পর্যন্ত দুই শতাধিক লোক টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসা নিতে গেছেন জানিয়ে হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক মো. পারভেজ হোসেন বলেছেন, আহতদের মধ্যে ২০ জনকে তারা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর পরামর্শ দিয়েছেন।

তাবলিগ জামাতের দুই পক্ষের নেতৃত্বের কোন্দলে জানুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব গত মাসে স্থগিত করা হয়। দেওবন্দপন্থিদের আবেদনে নির্বাচন কমিশন শুক্রবার এক আদেশে ৩০ ডিসেম্বর ভোটের আগে টঙ্গীর ইজতেমা মাঠে সব ধরনের জমায়েত নিষিদ্ধ করে একটি নির্দেশনা জারি করে।

দিল্লি মারকাজের মাওলানা মোহাম্মদ সাদ কান্ধলভির অনুসারীরা এর মধ্যেই পাঁচ দিনের জোড় ইজতেমা করার ঘোষণা দিলে দেওবন্দপন্থি মাওলানা জুবায়েরের অনুসারীরা দিন কয়েক আগে ইতজেমা মাঠ দখল করে আশপাশে পাহারা বসায়। এ অবস্থায় মাওলানা সাদের অনুসারীরা শুক্রবার ময়দানে ঢুকতে না পেরে আশোপাশের মসজিদে অবস্থান নেন।

শনিবার ভোর থেকে সাদের অনুসারী শত শত মানুষ ঢাকার দিক থেকে টঙ্গীর পথে রওনা হলে পরিস্থিতি বিস্ফোন্মুখ হয়ে ওঠে। বিমানবন্দর সড়কসহ টঙ্গীর পথের বিভিন্ন স্থানে দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হলে বিমানবন্দর সড়কের এক দিকে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

ঢাকা মহানগর পুলিশের উত্তরা জোনের উপ কমিশনার নাবিদ কামাল শৈবাল বলেন, “বিমানবন্দর সড়কে ঢাকা থেকে বের হওয়ার পথের একপাশে যান চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি তাদের সরিয়ে দিতে।”

সাদ পন্থি হিসেবে পরিচিত তাবলীগ জামাতের সুরা সদস্য মাওলানা সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলাম বলেন, “ওই পক্ষের লোকজন কয়েক দিন ধরে মাঠ দখল করে রেখেছে। ছোট ছোট ছেলেরা সেখানে আমাদের কাউকে ঢুকতে দিচ্ছে না। জোড় ইজতেমায় যোগ দিতে বিভিন্ন এলাকা থেকে মুসল্লিরা ময়দানে যাওয়ার চেষ্টা করলে তারা বাধা দিচ্ছে। এ কারণে রাস্তায় বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।”

অন্যদিকে মাওলানা জুবায়েরের অনুসারী হিসেবে পরিচিত তাবলিগের উপদেষ্টা কমিটির সদস্য মাওলানা আবদুল কুদ্দুস বলেন, “বাচ্চারা না, ওখানে বড়রাই আছে। তারা বিশ্ব ইজতেমার প্রস্তুতির জন্য কাজ করছে। সাদের পক্ষের লোকজন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য আজ সেখানে যেতে চাইছে।”

অন্যদিকে বরিশাল থেকে আসা সাদ সমর্থক দুলাল তালুকদার বলেন, “আমরা সকালবেলা জোড় ইজতেমায় যোগ দিতে যাচ্ছিলাম। কিন্তু তারা আমাদের আটকে দেয়। কোনোভাবেই আমাদেরকে মাঠে যেতে দিচ্ছে না। আমরা কোনো ধরনের হামলা করিনি। পুলিশকে জানানো হয়েছে। আমরা মাঠে যেতে চাই।”

উপমহাদেশে সুন্নী মতাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় সংঘ তাবলিগ জামাতের মূলকেন্দ্র ভারতের দিল্লিতে। মাওলানা সাদের দাদা ভারতের ইসলামি পণ্ডিত ইলিয়াছ কান্ধলভি ১৯২০ এর দশকে তাবলিগ জামাত নামের এই সংস্কারবাদী আন্দোলনের সূচনা করেন।

স্বেচ্ছামূলক এ আন্দোলনের উদ্দেশ্য ইসলামের মৌলিক মূল্যবোধের প্রচার। বিতর্ক দূরে রাখতে এ সংগঠনে রাজনীতি ও ফিকাহ নিয়ে আলোচনা হয় না।

মাওলানা ইলিয়াছের মৃত্যুর পর তার ছেলে মাওলানা মোহাম্মদ ইউসুফ এবং তারপর মাওলানা ইনামুল হাসান তাবলিগ জামাতের আমিরের দায়িত্ব পালন করেন। মাওলানা ইনামুলের মৃত্যুর পর একক আমিরের বদলে সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার দেওয়া হয় একটি শুরা কমিটির ওপর।

কিন্তু সাদপন্থিরা ৩০ নভেম্বর থেকে জোড় ইজতেমা করার প্রসন্তুতি নিলে অন্যপক্ষ তুরাগ তীরে ইজতেমা মাঠের সব কটি ফটকে পাহারা বসায়। এই পরিস্থিতিতে সাদপন্থীরা গত ২৭ নভেম্বর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন করে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে।

অন্যদিকে জুবায়েরপন্থিরা গত ২৪ নভেম্বর ইসিতে চিঠি দিয়ে টঙ্গীর ইজতেমা মাঠে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ‘ভয়াবহ অবনতির শঙ্কা’ প্রকাশ করে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন করে।