তায়েফের গোলাপ উৎসব

তায়েফ শহরে গোলাপ উৎসব বসেছিল এ মাসে। গোলাপ ফুল দিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ‘ফ্লাওয়ার বাস্কেট’ বা ফুলের ঝুড়ি বানানো হয়েছিল এ উৎসবে। আর তা ‘গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ড’এ স্থান করে নিয়েছে এ বছর। ২০১৮ সালে সিঙ্গাপুর সবচেয়ে বড় গোলাপঝুড়ি বানিয়ে গিনেস বুকে স্থান পেয়েছিল। এবার সে রেকর্ড ভেঙে গিনেস বুকে উঠে এলো তায়েফের গোলাপের ঝুড়ি।

সমুদ্র সমতল থেকে প্রায় আড়াই হাজার মিটার উঁচুতে অবস্থিত তায়েফের আল হাদা ও আল শাফা উপত্যকায় ফোটে তায়েফের গোলাপ। বিশেষ জাতের এ গোলাপ জন্মানোর জন্য যে আবহাওয়া দরকার তা শুধু তায়েফেই আছে। ফলে শুধু তায়েফেই জন্মাতে পারে এ গোলাপ। সে কারণে এ জাতের গোলাপকে বলা হয় ‘ওয়ার্দা আত তায়েফ’ বা ‘তায়েফের গোলাপ’। আর তায়েফ শহরকে ডাকা হয় ‘গোলাপের তায়েফ’ নামে।

একদিন গাড়ি চালিয়ে কর্মস্থলে যেতে যেতে দেখি তায়েফের সড়ক বিভাজকে সারি সারি পোস্টার শোভা পাচ্ছে। পোস্টারে গোলাপের ছবি, জানানো হয়েছে গোলাপ উৎসবের আমন্ত্রণ। শহরের কেন্দ্রে বিশাল এলাকা জুড়ে রয়েছে প্রাকৃতিক উদ্যান ‘রুদ্দাফ পার্ক’, সেখানেই বসেছে গোলাপ উৎসব। করোনার রুদ্ধদিনের অবসানে আমার মতো অনেকেই এসেছে উৎসব অংশ নিতে, সেই সঙ্গে বুক ভরে প্রকৃতিকে উপলব্ধি করতে।

গোলাপ দিয়ে বানানো বিশ্বের সবচেয়ে বড় ঝুড়িটি রাখা হয়েছে তাবু আকৃতির বিশাল কক্ষে। ভিড় করেছে সৌদি নর-নারী, আমার মতো বিদেশীরাও। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে শীতল হাওয়ায় গোলাপের সৌরভ মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছিল। গোলাপ কক্ষের অনতিদূরে বানানো হয়েছে গোলাপের তোরণ। তোরণের ভেতর দিয়ে হেঁটে যেতে যেতে মনে হচ্ছিল যেন হারিয়ে যাচ্ছি স্বপ্নের দেশে।

গোলাপ উৎসবে আসা দর্শনার্থীদের জন্য পার্কে চলছে পর্যটক বাস, লাল, অনেকটা লন্ডন বাসের মতো। এ বাসে চড়ে ঘুরে আসা যায় পুরো পার্ক, দেখা যায় প্রকৃতির সমারোহ। পার্কের মাঝখানে কৃত্রিম হ্রদ, সন্ধ্যায় হ্রদের ফোয়ারা থেকে বিচ্ছুরিত জল পার্কের সুষমা আরো বাড়িয়ে তোলে। এ পার্কে পাহাড়ের পাদদেশে সন্ধ্যায় বসে সাংস্কৃতিক উৎসব। কনসার্ট চলে। তলোয়ার হাতে ‘আর্দা’ নামক নাচে মত্ত হয় সৌদি পুরুষেরা।

তায়েফে এখন বসন্ত। শহরের পার্কগুলোতে ফুটেছে ফুল। রুদ্দাফ পার্কেও ফুলের মেলা। কৃষ্ণচূড়া ফুটেছে লাল হয়ে। বেগুনী জাকারান্ডা ফুল আলোর দ্যুতি ছড়াচ্ছে। ফুটেছে জারুল, বাংলাদেশে দেখা সেই সোনালু বা বাদরলাঠির হলদে ফুল ঝুলছে গাছে। তায়েফের গোলাপ উৎসবে এসে এমনি বসন্তদিনে স্বদেশের কথা মনে পড়ে যায়, গাইতে ইচ্ছে করে, ‘আহা, আজি এ বসন্তে এত ফুল ফোটে, এত বাঁশী বাজে’। –

সিকদার নাজমুল হক, তায়েফ, সৌদি আরব।