মা মাছ অল্প ডিম ছেড়েছে, হালদা পাড়ে হতাশা

শফিউল আলম, রাউজান (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধিঃ ১৬ মে সোমবার ভোর রাতে ৩ টা সময়ে এক পষলা ভারি বৃষ্টি হলে ভোটার সময়ে হালদা নদীতে মা মাছ অল্প ডিম ছাড়ে ।

পুর্ণিমার ভরা জো চললে ও ভাড়ি বর্ষন ও বজ্রপাত না হওয়ায় হালদা নদীতে মা মাছ ডিম ছাড়েনি । টানা কয়েকদিন ধরে হালকা বৃষ্টি হলে ও হালদা নদীতে মা মাছ ডিম ছাড়েনি । নদীতে নমুনা ডিম কখন ছাড়বে এই প্রতিক্ষার প্রহর গুনছিলেন ডিম সংগ্রহকারীরা । কখন ভারি বৃষ্টি হবে, বজ্রপাত হবে নদীতে শ্রোতের পানি প্রবাহিত হবে হালদা নদীতে মা মাছ ডিম ছাড়বে ।ডিম সংগ্রহকারীরা হালদা নদী থেকে ডিম সংগ্রহ করে। হালদা নদীর পাড়ের বাসিন্দ্বা গহিরার দক্ষিন গহিরা মোবারক খীল এলাকার বাসিন্দ্বা ডিস সংগ্রহকারী আবদুল জলিল ্র আবদুল হালিম বলেন ভোর রাতে হালদা নদীর মদুনাঘাট এলাকা থেকে ৫জন ৪টি নৌকা নিয়ে ৪ বালতি ডিম সংগ্রহ করেন । সিপাহির ঘ্টা এলাকার বাসিন্দ্বা সাবের বলেন, তারা ৫জনের একটি গ্রুপ গতকাল ভোররাতে সিপাহির ঘাট, আজিমের ঘাট এলাকা থেকে হালদা নদী থেকে ডিম সংগ্রহ করেন । হালদা নদীর রাউজানের পশ্চিম বিনাজুরী, কাগতিয়া আজিমের ঘাট, নাপিতের ঘাট, মদুনা ঘাট, পেড়ালির মুখ । হাটহাজারীর গড়দুয়্রাা, মাছুৃয়া ঘোনা, রামদাশ হাট এলাকায় হালদা নদীতে মা মাছ ডিম ছাড়ে । হালদা নদীর মাছ ডিম ছাড়ার সংবাদ পেয়ে রাউজান উপিজেলা নির্বাাহী অফিসার জোনায়েদ কবির সোহাগ, হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহেদুল ইসলাম, জেলা মৎস অফিসার ফারহানা লাভলী, রাউজান উপজেলা সিনিয়র মৎস অফিসার পিযুষ প্রভাকর হালদা নদী পরিদর্শন করেন । হালদা নদীর মা মাছের ডিম সংগ্রহ করার পর ডিম সংগ্রহকারীরা রাউজানের দডক্ষন গহিরা মোবারক খীল হ্যাচারীতে ডিম কুয়ার ,মধ্যে রেখে ফুটানোর জন্য রেখে ডিম ফুটানোর পরিচর্য্যা করছেন । রাউজানে একমাত্র সচল মোবারক খীল হ্যচারীর ব্যতিত সরকারী আর কোন হ্যচারী নেই । সরকারী দুটি হ্যচারী অচল হয়ে গেছে । পশ্চিম বিনাজুরী ও হাটহাজারী এলাকায় আই, ডি, এফ দুটি হ্যাচারী নির্মান করছেন । দুটি হ্যৗচারীতে ও ডিম ফুটানোর জন্য ডিম সংগ্রহকারীরা কুয়ায় ডিম রেখে পরিচর্য্যা করছেন । হাটহাজারীতে সরকারী ভাবে নির্মান করা দুটি হ্যচারী সচল রয়েছে । ঐ দুটি হ্যচারীতে ও ডিম সংগ্রকারীরা ডিম ফুটানোর পরিচর্যা চালিয়ে যাচ্ছে । এছাড়া হালদা নদীর তীরে খনন করা মাটির কুয়ায় হালদা নদী থেকে সংগ্রহ করা মা মাছের ডিম রেখে ডিম ফুটানোর কাজে ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করছেন ডিম সংগ্রহকারীরা । রাউজান উপজেলা সিনিয়র মৎস অফিসার পিযুষ প্রভাকর বলেন, হালদা নদীতে মা মাছ ডিম ছেড়েছে । তবে ডিম ছাড়ার পরিমাণ খুবই কম । রাউজান উপজেলা নির্বাহী অফিসার জোনায়েদ কবির সোহাগ বলেন, হালদা নদীতে মা মাছ ডিম ছেড়েছে তা কয়েকটি জায়গায় গিয়ে পরিদর্শন করেছি । হালদা নদীর মা মাছের ডিম ছাড়ার মৌসুমে হালদা নদীর মা মাছের প্রজনন রক্ষায় রাউজান উপজেলা ও হাটহাজারী উপজেলা প্রশাসন নৌৗপুলিশ হালদা নদীতে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি । হালদার মা মাছ রক্ষায় প্রশাসনের নজরদারী রয়েছে সার্বক্ষনিক ।

বজ্রপাতসহ মুশলধারে বৃষ্টি হলেই মা মাছ ডিম ছাড়বে বলে ধারণা হালদা বিশেষজ্ঞদের। নদীতে মা মাছের আনাগোনা বাড়লেও এখনো ডিম ছাড়েনি। এপ্রিল মাঝামাঝি থেকে জুন মাসের যে কোনো পূর্ণিমা ও অমাবস্যার কয়েক দিন আগে-পরে জোয়ার ও ভাটার সময় মা মাছ হালদা নদীতে ডিম ছাড়ে। গত শুক্রবার পূর্ণিমার জো শুরু হয়েছে, মেঘের গর্জনসহ ভারিবর্ষণ হলেই ডিম ছাড়বে মা মাছ।
গতকাল ১৫ মে রবিবার ভোররাত থেকে হালদা নদীর রাউজান ও হাটহাজারী অংশে নৌকা আর বাঁশের ভেলার ওপর দাঁড়িয়ে জাল ফেলে ডিমের অপেক্ষায় শত শত ডিম সংগ্রহকারীরা।
গতকাল ১৫ মে রবিবার ৪টা পর্যন্ত সময়ে হালদা নদীতে ডিম ছাড়েনি মা মাছ। গত শুক্রবার থেকে নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে নড়াচড়ায় মা মাছের পেট থেকে খসে পড়া ৭ থেকে ৮টি করে ডিম উঠেছে জেলেদের জালে। হালদা নদীতে নমুনা ডিম ছাড়ার পর পুর্ণিমার জো” চলাকালে ভারি বর্ষন ও বজ্রপাত হলে হালদা নদীতে মা মাছ ডিম ছাড়বে এ আশায় ডিম সংগ্রহকারীরা অপেক্সা করলে ও বৃষ্টি ও বজ্রপাত না হওয়ায় হালদা নদীতে মা মাছ ডিম ছাড়েনি । এদিকে পুর্ণিমার জো ” এর সময়ে সাগর থেকে জোয়ারের পানির সাথে হালদা নদীতে লবনাক্ত পানি প্রবেশ করেছে । এসময়ে নদীতে মা মাছ ডিশ ছাড়লে ও লবনাক্ত পানির কারনে ডিম নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে । গত শুক্রবার শুরু হওয়া পূর্ণিমার জো শেষ হবে ১৮ মে। এর মধ্যে বজ্রপাতসহ বৃষ্টি হলেই মা মাছ ডিম ছাড়তে পারে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের। এখন কেবল অপেক্ষা লাগাতার বজ্রসহ বৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের। হালদা নদীর মা মাছ তথা জীব-বৈচিত্র রক্ষায় মাঠে রয়েছে রাউজান ও হাটহজারী উপজেলা প্রশাসন। গত শনিবার রাতে বড়শি দিয়ে মাছ ধরার সময় অভিযান পরিচালনা করে নৌকাসহ ৩০০টি বড়শি, মাছ ধরার বিভিন্ন সরঞ্জাম ও ক্যামিক্যাল জব্দ করেছে হাটহাজারী উপজেলা প্রশাসন। মাছ ধরার প্রচেষ্টার দায়ে একব্যক্তিকে ১ মাসে বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত । এর আগে রাউজানে বড়শি দিয়ে মাছ ধরার দায়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে দুইজনকে ১০ হাজার টাকার অর্থদণ্ড দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জোনায়েদ কবির সোহাগ। হালদা গবেষকদের ধারণা, চলতি প্রজনন মৌসুমের শেষ পর্যন্ত নদীর পরিবেশের স্থিতিশীলতা ও প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য বর্তমান পরিস্থিতির মতো বজায় থাকলে হালদায় কার্পজাতীয় অর্থাৎ রুই, কাতলা, মৃগেল, কালি বাউস মা মাছের ডিম ছাড়ার নজির তৈরি হতে পারে। কয়েক যুগ ধরে ডিম সংগ্রহ করে আসা অভিজ্ঞ ডিম সংগ্রহকারী হালদা পাড়ের বাসিন্দা প্রফুল্য দাশ বলেন, ভারী বৃষ্টি হলে নমুনা ডিম ছাড়তে পারে। তবুও ডিম সংগ্রহকারীরা প্রস্তুত। ডিমের অপেক্ষায় নদীতে অবস্থান করছেন তারা। প্রস্তুত রাখা হয়েছে নদীর দুপাড়ে প্রায় ১৭০টি মাটির কুয়াও। প্রতিটি নৌকার পেছনে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা ব্যয় হয়। খরচ বাঁচাতে অনেকেই বাঁশের ভেলায় প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন। এবার ডিম সংগ্রহে ব্যয় বাড়ার আশঙ্কা করছেন তিনি। রাউজান উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা পীযূষ প্রভাকর বলেন, নদীতে গত শনিবার দিবাগত রাতে ও নমুনা ডিম ছেড়েছে অল্পসংখ্যক নমুনা ডিম পেয়েছেন সংগ্রহকারীরা । বৃষ্টিপাত হলে নমুনা ডিম ছাড়তে পারে বলে ধারণা করছেন তিনি। রাউজান ও হাটহাজারী অংশের ৪টি হ্যাচারিসহ দুপাড়ের মাটির কুয়া প্রস্তুত রাখা হয়েছে। রাউজান উপজেলা নির্বাহী অফিসার জেনায়েদ কবির সোহাগ বলেন, গতকাল ১৫ মে রবিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সময়ে নৌকা নিয়ে হালদা নদী পরিদর্শন করেছি । ভারি বর্ষন ও বজ্রপাত না হওয়ায় হালদা নদীতে মা মাছ ডিম ছাড়েনি । পুর্ণিমার জো” চলাকালে সাগর থেকে লবনাক্ত পানি জোয়ারের পানির সাথে হালদা নদীতে প্রবেশ করে হালদা নদীর পানিকে লবনাক্ত করে ফেলা হয়েছে । লবনাক্ত পানির মধ্যে ডিম ছাড়লে ডিম নষ্ট হওয়ার আশংকা বেশী । ভারি বর্ষন ও বজ্রপাত হলে হালদা নদীতে মা মাছ ডিম ছাড়তে পারে। হালদা নদীতে মা মাছ ডিম ছাড়লে ডিম সংগ্রহকারীদের সহায়তা করার জন্য প্রশাসনের সকল ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হয়েছে । উলেখ্য, গত ২৬ এপ্রিল থেকে ৫ মে পর্যন্ত একটা জো চলে গেছে। বৃষ্টি হলেও পর্যাপ্ত ছিল না। শুক্রবার শুরু হওয়া জো থাকবে ১৮ মে পর্যন্ত। বজ্রপাতসহ বৃষ্টিপাত হলে এই জোতে ডিম ছাড়ার সম্ভাবনা বেশি। আগামী ২৫ থেকে ৩১ মে পর্যন্ত আরও একটি জো আছে।