ঈদের কতোকিছুই না কী অনায়াস করে দিচ্ছে একটি সিম

ছুটছে সবাই, এরমধ্যেই প্রচণ্ড ভিড়ে মোবাইল ফোনে খুঁজছেন যাত্রাসঙ্গীদের কে কোথায় আছেন। বাস ছাড়ার সময় হয়ে যাচ্ছে কিন্তু বন্ধুদের কেউ কেউ এখনও পৌঁছেনি, ফোনে খবর জানার চেষ্টা । আবার আকুল অপেক্ষায় থাকা মা-বাবাসহ প্রিয়জনকে নিজের যাত্রাপথের খবর জানিয়ে আশ্বস্ত করছেন কেউ কেউ, যাত্রাপথের একটি সেলফি দিয়ে কেউ প্রিয়জনের কাছে যাওয়ার আনন্দ ফেইসবুকসহ সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করছেন, কেউ হয়তো গ্রামে পৌঁছে গেছেন, মোবাইল ফোন করে পুরোনো বাল্যবন্ধুদের খোঁজ নিচ্ছেন কে কোথায় আছেন।এছাড়া ঈদের কেনাকাটায়, টিকেট কাটা, যানবাহনের খবরা-খবর নেয়া, প্রিয়জনকে টাকা পাঠানোসহ আর্থিক লেনদেনে, ঈদের শুভেচ্ছা জানানোসহ কতোকিছুই না কী অনায়াস করে দিচ্ছে একটি সিম ও মোবাইল নেটওয়ার্ক ।

একবার ভাবুন তো, এই সময়ে আপনার সিম-মোবাইলে যদি নেটওয়ার্ক না থাকে তাহলে কী দুর্দশায় না পড়তে হতো।আসলে ভাবনার কারণ আছে, ঈদের সময়টাতে ব্যাপক সংখ্যক সিম বা সংযোগ সাধারণ বা নিয়মিত হিসাবের নেটওয়ার্কে থাকে না। বিপুল সংখ্যক মানুষের সঙ্গে এক জায়গা হতে আরেক জায়গায় চলে যায় সিম বা সংযোগও। তাই মোবাইল ফোন অপারেটরা যদি আগে হতে প্রস্তুতি না নেয়, তাহলে এই নেটওয়ার্ক নিয়ে ভোগান্তিতে পড়ার সম্ভাবনা বেশ।আসলে কী হয় ঈদের সময় :ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলছিলেন, ঈদসহ উৎসব বা দীর্ঘ ছুটির সময়গুলোতে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর মানচিত্রে বড় রকম পরিবর্তন আসে।‘কোথায় সক্ষমতার চেয়ে বেশি ব্যবহারকারী হয়ে পড়ে আবার কোথাও কমে যায়। পুরো নেটওয়ার্ক ব্যবস্থার উপর চাপটা পড়ে। গ্রামে ব্যবহারকারী বেড়ে যায় । তাই কোথাও কোথাও সক্ষমতা বাড়াতে হয়, ব্যান্ডউইথ বাড়ানোর দরকার হয়।’ বলছিলেন মন্ত্রী।মোস্তাফা জব্বার বলেন, এমন পরিস্থিতি সামলাতে অপারেটরদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, নেটওয়ার্কের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে।জানতে চেয়েছিলাম রবির চিফ কর্পোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম এর কাছে এমন সিম মুভমেন্টে তারা কী করেন ?সাহেদ আলম বলছিলেন, দুটি ঈদে আগে তারা এনটিটিএনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে প্রস্তুতি নিতেন। এখন এখানে টাওয়ার কোম্পানিও যুক্ত হয়েছে। এখানে ঠিকঠাক সমন্বয়ের বিষয় থাকে।‘সিমের মুভমেন্ট সম্পর্কে আমাদের সম্ভাব্য ধারণা আগেই থাকে। এছাড়া ডেটা বিশ্লেষণ করে আমরা বুঝতে পারি, দেশের কোথায়, কোন এলাকায়, কোন রাস্তায় ব্যবহারকারী বাড়বে। আমরা সেভাবেই প্রস্তুতি নিয়ে রাখি।’ বলছিলেন তিনি।রবির শীর্ষ পর্যায়ের এই কর্মকর্তা জানান, এই সময়ে তারা দেখতে পান কোথাও কোথাও ইউটিউব ব্যবহার বেড়ে গেছে। কোথাও অন্যান্য মাধ্যম ব্যবহার। যেমন, নোয়াখালি-কুমিল্লায় ইউটিউবের ব্যবহার অনেক বাড়ে। আবার ঢাকা-দাউদকান্দি অংশে নেটওয়ার্কের ব্যবহার বেড়ে যায়। এভাবে জায়গাভেদে ব্যবহারকারী ও ব্যবহারের ধরণে পরিবর্তন আসে।কী প্রস্তুতি নেন ? এমন জিজ্ঞাসায় সাহেদ আলম বলছিলেন, ‘বাড়তি ব্যান্ডউইথ অ্যালোকেশন করতে হয়। টাওয়ারগুলোতে সক্ষমতা বাড়িয়ে রাখতে হয়। পাওয়ার ব্যাকআপ নেয়া হয়।’এছাড়া সিম বিক্রিসহ গ্রাহকদের নেটওয়ার্ক সংক্রান্ত সাপোর্ট দিতে ২৪ ঘন্টাই টিম কাজ করে, বলছিলেন তিনি।ঢাকা বাইরে গেছে কতো সিম ?বুধ, বৃহস্পতি, শুক্র ও শনি মিলে চারদিনে প্রায় ৭৫ লাখ সিম ঢাকার বাইরে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে গেছে।বিটিআরসিকে দেয়া মোবাইল ফোন অপারেটদের হিসাব বলছে, ২৯ এপ্রিল ঢাকার বাইরে গেছে ১৯ লাখ ৩২ হাজার ৯৯০ সিম। ৩০ এপ্রিল গেছে ২৩ লাখ ৭৬ হাজার ২২৬ টি । এছাড়া ২৭ ও ২৮ এপ্রিল গেছে প্রায় ৩০ লাখ সিম।এরমধ্যে ২৯ ও ৩০ এপ্রিল গ্রামীণফোনের গেছে ১৮ লাখ ৬২ হাজার ১৩৬ টি সিম, রবির ১১ লাখ ৭৬ হাজার ৩৪০ টি, বাংলালিংকের ১১ লাখ ২৪ হাজার ৭৩২ টি এবং টেলিটকের ১ লাখ ৪৬ হাজার ৮টি ।মোস্তাফা জব্বার বলেন, সিম মুভমেন্টের এই হিসাব শতভাগ সিমের অবস্থান নিশ্চিত করে দেয়া হয়েছে। দেশে ১৮ কোটির মতো সিম। এখন ১৮ কোটি সিম আছে ১২ কোটি মানুষের কাছে। একজনের কাছে গড়ে দেড়টা করে সিম আছে। সে হিসেবে সিমের যে পরিমাণ যে পেয়েছি সেটা অতিক্রম করে গিয়েছে।এরআগে ২০২১ সালের ঈদেও প্রায় ১ কোটি সিম ঢাকার বাইরে গিয়েছিলো।