নওগাঁর রানীনগর উপজেলায় এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি পরিমাণ জমিতে আউস ধানের চাষ হয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে নওগাঁর রানীনগর উপজেলায় ২ হাজার ৮০ হেক্টর জমিতে আউস ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে প্রায় ৩ হাজার ২২৮ হেক্টর জমিতে বর্ষালী আউস ধানের চাষ করেছে কৃষক। এটা আমাদের পরিবেশ সুরক্ষা ও পরিকল্পিত ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহারের জন্য একটি সুখবর। সুখবর বলছি এজন্য- আউস ধানে বোরো ধানের মতো এত সেচ সার ও কীটনাশকের প্রয়োজন হয় না। অল্প খরচে ও অল্প সময়ে কৃষক বৃষ্টির পানি ব্যবহার করে এ ধান চাষ করতে পারেন। স্বাধীনতার পূর্বে দেশে বিশাল এলাকা জুড়ে হতো আউস ধানের চাষ । আউস ধানের একর প্রতি ফলন ছিল খুব কম। দেশী লাল রঙের আউস চালের ভাত খেতে মিষ্টি লাগতো। বেশি দিনের কথা নয় আজ থেকে ১৫ থেকে ২০ বছর আগেও পাবনা, নাটোর ও রাজশাহী জেলার বিস্তীর্ণ চর এলাকা জুড়ে আউস ধানের চাষ হতো। শ্রাবণ মাসের বৃষ্টিতে এই কাটা ও মাড়াই করা ছিল বেশ কষ্টকর। তখন ধান মাড়াই যন্ত্রের এত প্রচলন ছিল না।
জৈষ্ঠ মাসের প্রথমে আউস ধান রোপণ করতে হয়। বর্তমানে আউস মৌসুমে পারিজা, বিআর-৫, বিআর-৪৮ ও নেরিকা-১০ জাতের ধানের আবাদই হয় বেশি। অনুকূল আবহাওয়া এবং রোগবালাইয়ে ও পোকা-মাকড়ের উপদ্রব কম থাকায় এবার সারা দেশেই আউসের বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষকের কথা এক বিঘা জমিতে এবার ১৮ থেকে ২০ মন ধান ফলেছে। দেশের বিভিন্ন বাজারে প্রতি মন আউস ধান বিক্রি হচ্ছে ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা দামে। কৃষি বিশেষজ্ঞদের মতে, উচ্চ ফলনশীল নুতন জাত উদ্ভাবন, কম উৎপাদন খরচ ও সরকারি প্রণোদনা আউস চাষে কৃষকদের উৎসাহিত করেছে। প্রতি বিঘা জমির জন্য একজন কৃষককে ২০ কেজি ইউরিয়া, ১০ কেজি এমওপি, ১০ কেজি ডিএপি ও নগদ ৪০০ টাকা সহায়তা দিয়েছে সরকার। বাজারে ধানের দামও ভাল। অন্য ধানের চেয়ে বর্ষালী আউসের আবাদে লাভ বেশি। প্রতি বিঘা আবাদে খরচ হয় পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা। বোরোর বেলায় যেখানে প্রতিমন ধানে লোকসান হয় ১০০ থেকে ১৫০ টাকা, সেখানে প্রতি বিঘা আউস ধানের আবাদে লাভ হচ্ছে ১০ হাজার টাকার ওপর- এটা প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র কৃষকের জন্য বড় প্রণোদনা। লাভ বেশি হওয়ায় আগামী বছর আরো বেশি পরিমাণ জমিতে আউসের চাষ করবেন বলে জানায় বগুড়া ও নওগাঁ জেলার অনেক কৃষক।