আহমদুল ইসলাম চৌধুরী:: পবিত্র মদীনায় শায়িত রয়েছেন আল্লাহ পাকের হাবীব সর্বশেষ নবী ও রাসূল হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (স)। পবিত্র মদীনায় গমন করে নবীপাক (স)’র রওজাপাকে সালাম দিতে পারাটা উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য বড় সৌভাগ্যের ব্যাপার।
এককালে নবী প্রেমিকেরা অনেক কষ্ট স্বীকার করে উটে চড়ে পায়ে হেঁটে পবিত্র মক্কা থেকে ১৩ দিনে পবিত্র মদীনায় পৌঁছতেন। হযরত বায়েজিদ বোস্তামী (রহ) হজের সঙ্গে পবিত্র মদীনায় গমন করাকে যথাযথ তাজিম মনে না করে পৃথকভাবে অন্য সময় পবিত্র মদীনায় গমন করেন জিয়ারতের উদ্দেশে। আল্লামা জামী (রহ) শুধু জিয়ারতের উদ্দেশে পবিত্র মদীনায় গমন করেন। এতে হজকে একত্রিত করেননি। ইমাম আজম আবু হানিফা (রহ) মতান্তরে অন্য ইমাম পবিত্র মদীনায় গমন করে ৩ দিনের বেশি অবস্থান করতে পারেননি তাজিম রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না এ ভয়ে।
অর্থাৎ এ সময় পবিত্র মদীনায় পেশাব পায়খানা করেননি। হযরত ইমাম মালেক (রহ) পবিত্র মদীনায় ওফাত পাওয়ার লোভে জীবনে মাত্র একবারই হজ করেছেন এবং পবিত্র মদীনার বাইরে জরুরি প্রয়োজনে কোথাও গেলে দ্রুত ফিরে আসতেন। যেহেতু পবিত্র মদীনার বাইরে ওফাত ঘটতে পারে এ ভয় তাঁকে তাড়িত করত। মহান আলেমে দ্বীন হযরত আবদুল হক মোহাদ্দেস দেহলভী (রহ) তাঁর প্রসিদ্ধ ‘জযবুল কুলুব ইলা দিয়ারিল মাহবুব’ গ্রন্থে বলেছেন, পবিত্র মক্কা শহর থেকে পবিত্র মদীনা শহর মর্যাদাবান। পবিত্র মদীনা শহর থেকে খানায়ে কাবা মর্যাদাবান। খানায়ে কাবা থেকে রওজাপাক মর্যাদাবান। অর্থাত্ নবীপাক (স)-কে যে মাটি ধারণ করে আছে তার মর্তবা মহান আল্লাহপাকের সমস্ত মাখলুকের মধ্যে সর্বোচ্চ মর্তবাবান স্থান।
হযরত মোল্লা আলী ক্বারী (রহ) বলেছেন, কতেক লোক ব্যতীত সারা বিশ্ব-মুসলিমের অভিমত হলো নবীপাক (স)’র জিয়ারত একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ এবং পুণ্যময় ইবাদত। এ জিয়ারতে কামিয়াবী সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছবার একটি মাত্র উপায়। যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও নবীপাক (স)’র রওজাপাকে আসল না সে নিজের নফসের ওপর জুলুম করল। চার মাজহাবের প্রখ্যাত ইমামগণ এ বিষয়ে একমত যে, নবীপাক (স)’র রওজাপাক জিয়ারতের নিয়ত করা মুস্তাহাব। কেউ কেউ ওয়াজিবও বলেছেন।
শরহে কবীরে লিখিত আছে, হজ করার পর নবীপাক (স) এবং তাঁর দু’ সাথীর জিয়ারতের জন্য গমন করা মুস্তাহাব। হযরত ওমর (রা) থেকে বর্ণিত, নবীপাক (স) এরশাদ করেন, আমার ওফাতের পর যে আমার রওজাপাক জিয়ারত করল সে যেন জীবিত অবস্থায় আমার সঙ্গে সাক্ষাত্ করল। (বায়হাকী, তীবরানি) নবীপাক (স) এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি ইচ্ছা করে আমার রওজা জিয়ারত করবে, কিয়ামতের দিন সে আমার প্রতিবেশী হবে। আর যে (পবিত্র) মদীনায় বসবাস করে ওখানের দুঃখ-কষ্টের ওপর ছবর করবে, তাঁর জন্য কিয়ামতের দিন আমি সাক্ষী থাকব এবং সুপারিশ করব। আর যে ব্যক্তি হারমে (পবিত্র) মক্কা অথবা হারমে (পবিত্র) মদীনায় ইন্তেকাল করবে সে কিয়ামতের দিন নিশ্চিন্তে থাকবে। লেখক :গবেষক, ইসলামি চিন্তাবিদ ও সমাজসেবক।