মিয়ানমারের সংকট মোকাবেলায় আসিয়ানের ভূমিকা নিয়ে বিভক্ত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া

মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের পর আসিয়ানের ভূমিকা নিয়ে বিভক্ত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার জনমত। আঞ্চলিক সংস্থা হিসেবে আসিয়ান যে ভূমিকায় অবতীর্ন হয়েছিল তা নিয়ে অনেকেই সন্তোষ জানিয়েছেন। আবার অনেকেই বলছেন, এ সংকট সমাধানে যথেষ্ট পদক্ষেপ নেয়নি আসিয়ান। আইএসইএএস- ইউসুফ ইশহাক ইনস্টিটিউটের চালানো এক জরিপে জনমতের এই বিভক্ত অবস্থাটি উঠে এসেছে। গত বছরের শেষ দুই মাসে এই জরিপ চালানো হয়। এতে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার নীতিনির্ধারক, শিক্ষাবিদ, গবেষক, ব্যবসায়ী, গণমাধ্যমকর্মী ও সুশীল সমাজের সদস্যদের কাছে বিভিন্ন আঞ্চলিক ও ভূ-রাজনৈতিক ইস্যুতে জানতে চাওয়া হয়।

দ্য স্ট্রেইট টাইমস জানিয়েছে, জরিপে মিয়ানমারের সেনা অভ্যুত্থানের পর আসিয়ানের ভূমিকা নিয়ে ১ হাজার ৬৭৭ জনের কাছে প্রশ্ন করা হয়। এরমধ্যে অংশগ্রহণকারীদের ৩৭ শতাংশ আসিয়ানের ভূমিকায় সন্তোষ জানিয়েছেন।

অপরদিকে এ নিয়ে অসন্তোষ জানিয়েছেন ৩৩ শতাংশ। নিরপেক্ষ ছিলেন ৩০ শতাংশ।

গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে মিয়ানমারের অং সান সুচির গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করে সামরিক বাহিনী। এর নেতৃত্বে রয়েছেন জেনারেল মিন অং হ্লাইং। সেসময় সংকট সমাধানে সকল পক্ষের মধ্যে গঠনমূলক আলোচনার জন্য চাপ দিয়েছিল আসিয়ান। যদিও অন্য দেশের আভ্যন্তরীণ ইস্যুতে হস্তক্ষেপ না করার নীতি রয়েছে আসিয়ানের। তারপরেও সংস্থাটির তরফ থেকে বেশ কিছু কঠিন পদক্ষেপ নেয়া হয়। গত বছরের বার্ষিক সম্মেলনে অভূতপূর্ব এক পদক্ষেপ নেয় আসিয়ান। মিয়ানমার রাষ্ট্রের প্রধান হওয়া সত্বেও জেনারেল মিন অং হ্লাইংকে তারা সম্মেলন থেকে বাদ দেয়। যদিও আসিয়ানের চাপে নরম হওয়ার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না মিয়ানমারের জান্তা সরকারের। গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সুচি ও তার উৎখাত হওয়া সরকারের সদস্যদের সঙ্গে আসিয়ানের যোগাযোগের সুযোগও সীমিত করে রেখেছে তারা।

এদিকে জরিপে যারা আসিয়ানের ভূমিকার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন তাদের ৪২.৫ শতাংশ মনে করেন, সংস্থাটি মিয়ানমারের সংকট সমাধানে মধ্যস্ততা করতে সক্রিয় পদক্ষেপ নিয়েছে। অপরদিকে আসিয়ানের ভূমিকার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়াদের ৪৫.৫ শতাংশ মনে করেন, ওই রাজনৈতিক ও মানবিক সংকট মোকাবেলায় আসিয়ান যথেষ্ট দ্রুততার সঙ্গে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। আসিয়ানের ভূমিকাকে অসমর্থন দেয়ার হার সবথেকে বেশি মিয়ানমারে (৭৮.৮%)। এরপরেই রয়েছে থাইল্যান্ড (৩৯.৩%) ও সিঙ্গাপুর (৩৭%)। অপরদিকে আসিয়ানের পদক্ষেপের পক্ষে সবথেকে বেশি প্রতিক্রিয়া এসেছে ব্রুনেই (৫৮.৫%) থেকে। এরপরেই রয়েছে ইন্দোনেশিয়া (৪৪.৩%)।

এক ওয়েবিনারে আইএসইএএস-ইউসুফ ইশহাক ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান প্রফেসর চ্যান হেং চি বলেন, মানবিক দিক থেকে বিবেচনা করলে আসিয়ান দ্রুত প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে। কিন্তু আসিয়ানকি আরও দৃঢ় ভূমিকা রাখতে পারতো? কিছু প্রাতিষ্ঠানিক এবং কাঠামোগত কারণে আসিয়ান চাইলেও দ্রুত পদক্ষেপ নিতে পারে না। কারণ সদস্য দেশগুলোর মধ্যে ঐক্যমতের বিষয় রয়েছে। আসিয়ানের সংবিধান অনুযায়ী কোনো সদস্য রাষ্ট্রকে বহিস্কার করা সম্ভব নয়।