দক্ষিণ চট্টগ্রামে দুটি আসন নিয়ে বিএনপি-জামায়াতে টানাপোড়ন


নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দক্ষিণ চট্টগ্রামের দুটি আসন ভাগাভাগি নিয়ে বিএনপি-জামায়াতের মধ্যে বেশ টানাপোড়নের সৃষ্টি হয়েছে। আসন দু’টি হচ্ছে চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) ও চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী)। এ আসন দু’টিতে প্রার্থীতা নিয়ে বিএনপি ও জামায়াত অনড় অবস্থানে রয়েছে। কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। যার ফলে এ দু’টি আসনের ভাগাভাগি নিয়ে এ দুই দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে বেশ দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে বলে বিভিন্ন রাজনৈতিক সূত্রে জানাযায়। ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপির পক্ষ থেকে জামায়াতকে সাতকানিয়া-লোহাগাড়া আসনটি ছাড় দিতে রাজি হলেও বাঁশখালী আসনটি বিএনপির জন্য বরাদ্ধ দিতে চায়।
জানাগেছে, চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) ও চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনে জামায়াত তাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী দিতে খুব জোরালেভাবে কাজ করছে। অন্যদিকে ঐক্যফ্রন্ট থেকে জামায়াতকে শুধুমাত্র সাতকানিয়া-লোহাগাড়া আসনটি দিতে রাজী। যার কারণে বাঁশখালীর আসনটি নিয়ে বেঁকে বসেছে জামায়াত। জামায়াতের পক্ষ থেকে এ দুটি আসনই দাবী করা হচ্ছে। সাতকানিয়া-লোহাগাড়া আসনটি জামায়াতের দূর্গ হিসেবে পরিচিত ও সেখানে তাদের শক্ত অবস্থান থাকায় তাদেরকে এ আসনটি ছেড়ে দিয়ে বাঁশখালীতে বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থী ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী জাফরুল ইসলামকে মনোনয়ন দেয়ার সিদান্তÍ হয়। কিন্তু এ সিদান্তকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বাঁশখালী উপজেলা জামায়াতের আমির ও উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মাওলানা জহিরুল ইসলাম ওই আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পত্র জমা দেন।
দক্ষিণ জেলা বিএনপির এক নেতা জানান, জামায়াতকে চাপে রাখার কৌশল হিসেবে সাতকানিয়া-লোহাগাড়া আসনে বিএনপি অধ্যাপক শেখ মোহাম্মদ মহিউদ্দীন মনোনয়ন পত্র জমা দেন। ওই আসনে জামায়াত থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী ঘোষণা করা হয় ওই আসনের জামায়ের সাবেক সাংসদ মাওলানা শামসুল ইসলামকে।
জামায়াত এর দলীয় সূত্রে জানাযায় বাঁশখালীতে বিগত উপজেলা নির্বাচনে বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ও জামায়াত নেতা জহিরুল ইসলামের বিরোধীতা করেছিল ওই আসনের বিএনপি দলীয় সাবেক সাংসদ ও প্রতিমন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরী। উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি থেকে উপজেলা বিএনপি নেতা আলমগীর কবির কে চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করানো হয়। এ নিয়েই ওই আসনটিতে বিএনপি-জামায়াতের মধ্যে দূরত্ব ও বিরোধ সৃষ্টি হয়। তখন জাফরুল ইসলাম চৌধুরীর নির্দেশেই উপজেলা নির্বাচনে বিএনপির চেয়ারম্যান প্রার্থী দেয়া ও জামায়াতকে ছাড় না দেয়ার অভিযোগ ওঠে। ওই অভিযোগের তীরটি বিদ্ধ হয় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। যার কারণে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাফরুল ইসলামকে কোনভাবেই ছাড় নিতে নারাজ জামায়াত।
এদিকে বাঁশখালী আসনে জামায়াতের বদ্ধমূল ধারণা বিগত উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামীলীগ, বিএনপি, জামায়াত থেকে পৃথক প্রার্থী দেয়া হলেও জামায়াতের চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীরা বিপুল ভোটে জয়ী হয়। এ নির্বাচনে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে জামায়াত নেতা অধ্যক্ষ জহিরুল ইসলাম, ভাইস চেয়ারম্যান পদে অধ্যক্ষ বদরুল হক ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে সাফিয়া বেগম জয় লাভ করেন। এতে ওই আসনে জামায়াত নেতাকর্মীদের মনোবল বেশ চাঙ্গা হয়ে ওঠে। এ বিশ্বাসের উপর ভর করেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াত প্রার্থীর বিজয় ধরে রাখার ব্যাপারে তাদের দলীয় নেতাকর্মীরা বেশ আশাবাদী।
অন্যদিকে রাজনৈতিক অভিজ্ঞ মহলের ধারণা, বাঁশখালীতে বিএনপি-জামায়াতের ধাক্কা ধাক্কির ফলে জামায়াত আম-ছালা দুটিই হারাবে। এর সুফল যাবে আওয়ামীলীগের ঘরে। সর্বোপরি জামায়াত সংসদীয় আসন হারানোর পাশাপাশি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের পদটিও তাদের হাত ছাড়া হবে মনে করেন বিভিন্ন মহল।