নতুন এক গবেষণায় ধনী দেশগুলো, যারা করোনাভাইরাসের টিকা মজুদ করে রেখেছে, তাদের প্রতি কঠোর হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, টিকা মজুদ রেখে শুধুই তারা স্থানীয়ভাবে স্বল্প মেয়াদে সুবিধা পাচ্ছে। পক্ষান্তরে দীর্ঘমেয়াদে তারা প্রতিটি মানুষকে সংক্রমণের আরো ঝুঁকিতে ফেলছে। বিজ্ঞান বিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। ওই গবেষণা প্রকাশ পেয়েছে ন্যাচার হিউম্যান বিহেভিয়ারে।
৫ বছর মেয়াদী মডেলে বিজ্ঞানীরা দেখতে পেয়েছেন, যদি ধনী দেশগুলো তাদের কোভিড-১৯ এর টিকা মজুদের শতকরা ৪৬ ভাগ দান করে দিতো নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোকে, তাহলে ওইসব দেশে শুধু মৃত্যুহারই কমে যেত এমন নয়। একই সঙ্গে তাতে নতুন করোনা ভাইরাসের স্ট্রেইন বা ভ্যারিয়েন্টের ঝুঁকিও কমে যেত। ওই মডেল অনুযায়ী টিকা ভাগাভাগি করে নেয়া হলে করোনা মহামারির ঢেউয়ের সংখ্যাও সীমাবদ্ধ হতো।
ঠিক এই সময়ে উচ্চ আয়ের দেশগুলোর কাছে এই টিকার সবচেয়ে বেশি মজুদ আছে। তারা তাদের নিজস্ব জনসংখ্যাকে টিকা দেয়াকে অগ্রাধিকার দিয়েছে।
কিন্তু ডেল্টা ও ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট দেখিয়ে দিয়েছে, প্রতিজন মানুষ নিরাপদ না হওয়া পর্যন্ত কেউই নিরাপদ নন। গবেষকরা তাদের গবেষণাপত্রে বলেছেন, গবেষণায় দেখা গেছে টিকায় অসমতার ফলে উচ্চ আয়ের দেশকে শুধু একটি সীমিত ও স্বল্পমেয়াদে সুবিধা দিচ্ছে। টিকা বরাদ্দে উচ্চ আয়ের দেশ এবং নি¤œ-মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে যে অসমতা, তার ফলে আগেভাগেই এবং বড় আকারের নতুন নতুন ঢেউ আসছে। পক্ষান্তরে টিকা বরাদ্দে সমতার কৌশল অবলম্বন করা হলে নতুন ভ্যারিয়েন্টের বিস্তারও কমে যাবে।
গবেষকরা বেশ কিছু ডাটা এক্ষেত্রে আমলে নিয়েছেন। তার মধ্যে আছে বিশ্বব্যাপী মানুষের চলাচল। টিকার কার্যকারিতা। উচ্চ আয়ের দেশগুলো যখন টিকার মজুদ গড়ে তুলেছে তখন তারা একটি ইতিবাচক প্রবণতা দেখতে পেয়েছে। সেখানে সংক্রমণ ও সার্বিক মৃত্যুহার কমে গেছে। অন্যদিকে অন্য দেশগুলোতে টিকা দেয়ায় বিলম্বের কারণে সেখানে মহামারি দীর্ঘায়িত হয়েছে। এর ফলে নি¤œ ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে মৃত্যু বেড়েছে।
এর অর্থ হলো সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেসব দেশে আবার নতুন সংক্রমণ দেখা দিতে পারে। এতে ভবিষ্যতে আরো করোনার ঢেউয়ের আশঙ্কা থাকে। কোভিড-১৯ ভাইরাস সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নতুন নতুন ভ্যারিয়েন্টে রূপান্তরিত হয় এবং তা টিকা দেয়া জনগোষ্ঠীকেও আক্রান্ত করে। এর ফলে উচ্চ আয়ের দেশগুলো আন্তঃসীমান্ত সমস্যা থেকে তাদেরকে সুরক্ষিত রাখতে পারবে না। এমনকি উচ্চ মাত্রায় টিকা নিয়েছেন এমন জনগোষ্ঠীকেও না।
২০২১ সালের শেষ নাগাদ বিশ্বজুড়ে কমপক্ষে একটি দেশে অনুমোদন দেয়া হয়েছে ৩১ রকম টিকা। এর মধ্যে প্রায় ৯০০ কোটি ডোজ টিকা প্রয়োগ করা হয়েছে।