জানুয়ারি) টস হারলেও ম্যাচ জিতে নিয়েছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। ২০ ওভারে তারা তোলে ১৮৩ রান।
নেতৃত্ব হারানোর প্রক্রিয়া ঘিরে মেহেদী হাসান মিরাজের দল ছাড়তে চাওয়া নিয়ে গতকাল রবিবার দিনভর আলোচনায় থাকা চট্টগ্রাম পরদিন মাঠেও ছিল এলোমেলো।
দুর্দান্ত ইনিংস খেলে সবচেয়ে বড় অবদান রাখেন দু প্লেসি। এবারের আসরের সবচেয়ে বড় বিদেশি তারকাদের একজন তিনি। কিন্তু প্রথম বিপিএল অভিযানে প্রথম দুই ম্যাচে পারেননি দুই অঙ্কে যেতে। এবার তিনি দ্বিতীয় ওভারে ক্রিজে গিয়ে টিকে থাকেন শেষ পর্যন্ত। ৫৫ বলে তিনটি ছক্কা ও আটটি চারে করেন অপরাজিত ৮৩।
আসরে প্রথম ফিফটি পেয়েছেন ডেলপোর্টও। আগের দুই ম্যাচে ওপেনিংয়ে তেমন কিছু করতে না পারা দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটসম্যান পাঁচে নেমে ঝড়ো ফিনিশিংয়ে ২৩ বলে তিন ছক্কা ও চারটি চারে করেন ৫১ রান।
জাতীয় দলের হয়ে নিউ জিল্যান্ড সফর থেকে ফেরার পর বিপিএলের ঢাকা পর্বে ছুটিতে ছিলেন লিটন। বিশ্রাম শেষে মাঠে নেমেই ৩৪ বলে ৪৭ রানের ইনিংসে আভাস দিলেন টি-টোয়েন্টিতে সাম্প্রতিক বাজে অবস্থা কাটিয়ে ওঠার।
রান তাড়ায় চট্টগ্রামের ইনিংস ছিল যেন এক চাকার গাড়ি। দলকে টেনেছেন কেবল উইল জ্যাকস। ৪২ বলে তিন ছক্কা ও সাত চারে তিনি করেন ৬৯। দলের আর কেউ যেতে পারেননি ১৫ পর্যন্ত।
টুর্নামেন্টের শুরু থেকে দারুণ ফর্মে থাকা নাহিদুল ইসলাম উজ্জ্বল আবারও। শুরু থেকে চার ওভারের টানা স্পেলে ১৭ রানে ৩ উইকেট নিয়ে সুর বেঁধে দিন তিনি। সঙ্গত করেন মুস্তফিজুর রহমান, তানভির ইসলামরা। তাতে চট্টগ্রাম থমকে যায় লক্ষ্যের অনেক দূরে।
লিটন ফেরায় টস হেরে ফিল্ডিংয়ে নামা কুমিল্লার একাদশে জায়গা হারান টেস্ট অধিনায়ক মুমিনুল। ওপেনিং জুটিও নতুন করে সাজায় তারা। মাহমুদুল হাসান জয়ের সঙ্গে ইনিংস শুরু করেন লিটন। তিন ম্যাচে এটি তাদের তৃতীয় ভিন্ন উদ্বোধনী জুটি।
নতুন জুটি টিকতে পারে কেবল ৯ বল। টস হেরে ব্যাটিংয়ে সেমে দ্বিতীয় ওভারেই উইকেট হারায় কুমিল্লা। দারুণ ফর্মে থাকা নাসুম আহমেদ নিজের প্রথম ওভারে বিদায় করেন মাহমুদুলকে। বাঁহাতি স্পিনারের ফ্লাইটেড ডেলিভারিতে কাভারে ক্যাচ দেন তিনি।
সেই ধাক্কা বুঝতে দেননি লিটন ও দু প্লেসি। ম্যাচের আগের দিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিটন জানিয়েছিলেন, অনুশীলনে দু প্লেসির সঙ্গে দারুণ একটি সেশন হয়েছ তার, যেখানে শিখেছেন অনেক কিছু। সেদিন অনুশীলন শেষে লম্বা সময় ধরে নেটের পাশে কথা বলতে দেখা যায় দুই জনকে। এবার ম্যাচেও দারুণ জুটি হলো দুজনের।
ক্রিজে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর শরিফুল ইসলামকে বাউন্ডারি মারেন দু প্লেসি। নাসুমকে পরের ওভারে ছক্কা ও চার মারেন লিটন।
আগের ম্যাচে হ্যাটট্রিক করে বিপিএল অভিষেক রাঙানো মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরি পঞ্চম ওভারে এসে লিটনের ব্যাটে হজম করেন তিন চার। মিরাজের প্রথম ওভার ভালো কাটেনি। প্রথম চার বলে চারটি সিঙ্গেল দেওয়া অফ স্পিনারের শেষ দুই বলে চার-ছক্কা মারেন দু প্লেসি।
আগের ওভারে আঁটসাঁট বোলিং করা রেজাউর রহমান রাজা পরের ওভারের প্রথম বলে হজম করেন ছক্কা। স্লটে পাওয়া তার বল স্লোয়ার লং অন দিয়ে ওড়ান দু প্লেসি। শেষ বলে ব্যাটের কানায় লেগে চার পান লিটন।
ভালো শুরুর পর হঠাৎ একটু ছন্দ হারানো লিটন আউট হন ফিফটির কাছে গিয়ে। নাসুমের বল উড়িয়ে সীমানা পার করার চেষ্টায় ধরা পড়েন লং অফে।
৩৪ বলে এক ছক্কা ও পাঁচ চারে ৪৭ রান করেন লিটন। দু প্লেসির সঙ্গে তার জুটি ৫৫ বলে ৮০ রানের।
এরপর ইমরুল কায়েস ফেরেন দ্রুতই। বেনি হাওয়েলের বল স্টাম্প ছেড়ে মারতে গিয়ে লাইন মিস করে ১ রানেই বোল্ড কুমিল্লা অধিনায়ক।
৪০ বলে পঞ্চাশ ছুঁয়ে এগিয়ে যেতে থাকেন দু প্লেসি। মিরাজের পর চার মারেন হাওয়েলকে। ইংলিশ অলরাউন্ডারকে ছক্কায় ওড়ান ডেলপোর্ট, ইনিংসে তার প্রথম বাউন্ডারি। পরে শরিফুলকে মারেন আরেকটি ছক্কা। দ্রুত আসতে থাকে রান।
ক্রিজে গিয়েই ঝড় তোলা ডেলপোর্ট সবচেয়ে বেশি চড়াও ছিলেন শরিফুলের উপর। প্রথম ২ ওভারে কেবল ১০ রান দেওয়া বাঁহাতি এই পেসার পরের ২ ওভারে দেন ৩৮ রান!
১৮তম ওভারে আক্রমণে ফিরে ডেলপোর্টের হাতে হজম করেন ছক্কা। ইনিংসের শেষ ওভারে প্রথম পাঁচ বলে শরিফুলকে চারটি চার ও একটি ছক্কা মেরে ২২ বলে ফিফটি স্পর্শ করেন ডেলপোর্ট। আসরে এটি দ্বিতীয় দ্রুততম ফিফটি।
শরিফুলের শেষ ওভার থেকে আসে ২৩ রান। শেষ ৫ ওভারে কুমিল্লা তোলে ৭৬ রান।
দু প্লেসি ও ডেলপোর্টের অবিচ্ছিন্ন ৯৭ রানের জুটি আসে স্রেফ ৪৯ বলে।
বেশিরভাগ বোলার যেখানে খরুচে, সেখানে দারুণ হিসেবি ছিলেন নাসুম। বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি দলের এই স্পিনার ২৩ রান দিয়ে নেন ২ উইকেট। শরিফুল ৪৮ রান দিয়ে উইকেটশূন্য।
এই ম্যাচে অনেকের কৌতূহলী চোখ ছিল মিরাজের দিকে। আগের দিনের নানা নাটকীয়তার পর দলের থেকে যাওয়া এই অফ স্পিনার ৩ ওভারে ৩০ রান দিয়ে ছিলেন উইকেটশূন্য। আসরে এই প্রথম চার ওভারের কোটা পূরণ করেননি তিনি।
আগের ম্যাচে হ্যাটট্রিক করা মৃত্যুঞ্জয় এবার ৩ ওভারে ৩৪ রান দিয়ে পাননি কোনো উইকেট।
রান তাড়ায় নাহিদুলের অফ স্পিনে শুরুতেই দিশেহারা হয়ে পড়ে চট্টগ্রাম। চার দিয়ে শুরু করে পরের বলেই ক্যাচ দিয়েই ফেরেন কেনার লুইস।
এই ওপেনারের পর সাব্বির রহমান ও মিরাজকে দ্রুত থামান নাহিদুল। একটি করে ছক্কা ও চারের ঝড়ের আভাস দিলেও স্টাম্পড হয়ে মিরাজ থেমে যান ১০ রানেই।
এই দুজনের আগেই অবশ্য আফিফ বিদায় নেন মুস্তাফিজের বলে ফ্লিক করে ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগে ধরা পড়ে।
অন্য প্রান্তে একের পর এক ব্যাটসম্যান ফিরে গেলেও আগ্রাসী ব্যাটিং চালিয়ে যান উইল জ্যাকস। তিনি ও মিরাজ ছাড়া প্রথম সাত ব্যাটসম্যানের আর কেউ দুই অঙ্কে যেতে পারেননি।
জ্যাকসকে কিছুটা সঙ্গ দেওয়ার আশা জাগিয়েও পারেননি মৃত্যুঞ্জয়। একটি করে ছক্কা-চারের পর মুস্তাফিজের স্লোয়ার বুঝতে না পেরে মিড অফ দিয়ে তুলে মারতে গিয়ে তিনি ধরা পড়েন দু প্লেসির হাতে।
জ্যাকস টানা দ্বিতীয় ফিফটি স্পর্শ করেন ৩৭ বলে। ফিফটির পর টানা তিনটি বাউন্ডারি মারেন শহিদুল ইসলামকে। স্লগ সুইপে ছক্কায় ওড়ান তানভির ইসলামকে। এই বাঁহাতি স্পিনারের বলেই একই চেষ্টা করতে গিয়ে বোল্ড হয়ে থামে তার ৩৭ বলে ৬৯ রানের ইনিংস। এরপর বেশিদূর যেতে পারেনি চট্টগ্রাম।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স: ২০ ওভার ১৮৩/৩ (লিটন ৪৭, মাহমুদুল ১, দু প্লেসি ৮৩*, ইমরুল ১, ডেলপোর্ট ৫১*; শরিফুল ৪-০-৪৮-০, নাসুম ৪-০-২৩-২, মৃত্যুঞ্জয় ৩-০-৩৪-০, মিরাজ ৩-০-৩০-০, রেজাউর ২-০-১৭-০, হাওয়েল ৪-০-৩১-১)
চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স: ১৭.৩ ওভারে ১৩১ (লুইস ৪, জ্যাকস ৬৯, আফিফ ৪, সাব্বির ৫, মিরাজ ১০, নাঈম ৮, হাওয়েল ২, মৃত্যুঞ্জয় ১৩, রেজাউর ৬*, নাসুম ১, শরিফুল ৪; নাহিদুল ৪-০-১৭-৩, মুস্তাফিজ ৩-০-২৬-২, তানভির ৪-০-৩৩-২, শহিদুল ৩-০-৩৪-২, করিম ৩.৩-০-১৮-১)
ফল: কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ৫২ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: ফাফ দু প্লেসি