বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে দেশে পুনরায় সাম্প্রদায়িকতার অপরাজনীতি শুরু করে

৩০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি চট্টগ্রামের আলোচনা সভায় শওকত বাঙালি
’৭১-এর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পাশাপাশি জঙ্গি মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা নির্মূল করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ ও জাতি গঠনের অঙ্গীকার নিয়ে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি আন্দোলন যাত্রা শুরু করেছিল আজ থেকে ৩০ বছর আগে। দীর্ঘ তিন দশকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আরম্ভের মাধ্যমে আন্দোলনের প্রাথমিক বিজয় অর্জিত হলেও বাংলাদেশ থেকে আমরা মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা নির্মূল করতে পারিনি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তাঁর সহযোদ্ধারা বাংলাদেশের মূল সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক ও মানবিক রাষ্ট্র ও সমাজ গঠনের প্রত্যয় ঘোষণার মাধ্যমে যে দিক নির্দেশনা প্রদান করেছিলেন, ৩০ লক্ষ শহীদ যে স্বপ্ন দেখেছিলেন সেখান থেকে আমরা বহু দূরে সরে গিয়েছি। রাজনীতি, প্রশাসন, সমাজ, সংস্কৃতি, শিক্ষা সর্বত্র মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিস্তার ঘটেছে। শুধু বাংলাদেশে নয়, বর্তমান বিশ্বে যেভাবে দক্ষিণপন্থার উত্থান ঘটছে ধর্মনিরপেক্ষ মানবতা ও উদারনৈতিকতার জমিন সর্বত্র ক্রমশঃ সংকুচিত হচ্ছে।’
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ৩০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে চট্টগ্রাম জেলার উদ্যোগে ১৯ জানুয়ারি, সন্ধ্যা ৬টায় সংগঠনের অস্থায়ী কার্যালয় বঙ্গবন্ধু ভবনের চট্টলবন্ধু এস.এম জামাল উদ্দিন মিলনায়তনে ‘ জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধে সরকার ও নাগরিক সমাজের করণীয়’-শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক ছিলেন সংগঠনের ৮ম জাতীয় সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য সচিব ও কেন্দ্রীয় যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক লেখক-সাংবাদিক শওকত বাঙালি।
সংগঠনের জেলা সহ-সভাপতি নগর আওয়ামী লীগ নেতা দীপংকর চৌধুরী কাজলের সভাপতিত্বে ও কার্যকরী সাধারণ সম্পাদক মো. অলিদ চৌধুরীর সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন সহ-সাধারণ সম্পাদক হাবিব উল্ল্যাহ চৌধুরী ভাস্কর, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. সাহাব উদ্দিন, অসীত বরণ বিশ^াস, সহ-প্রচার ও গণমাধ্যম সম্পাদক রুবেল চৌধুরী, আইন কলেজ ছাত্রলীগ নেতা কামরুল আলম মিন্টু, রাহুল দাশ প্রমুখ।
প্রধান আলোচকের বক্তব্যে শওকত বাঙালি বলেন, ‘ধর্মনিরপেক্ষ ও অসাম্প্রদায়িক দেশ গঠনের জন্য বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা দীর্ঘ সংগ্রামের মাধ্যমে এ দেশকে স্বাধীন করেছিল। বঙ্গবন্ধু বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করেন বাহাত্তরের সংবিধানের মাধ্যমে। কিন্তু মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক একাত্তরের পরাজিত শক্তিরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে এদেশে পুনরায় সাম্প্রদায়িকতার অপরাজনীতি শুরু করে। মৌলবাদীরা রাজনীতিতে সাম্প্রদায়িকতার অনুপ্রবেশ ঘটানো থেকে শুরু করে শিক্ষা মাধ্যমেও ব্যাপকভাবে সাম্প্রদায়িকীকরণ করে যার ফলে দেশে ব্যাপকভাবে জঙ্গিবাদের বিস্তার ঘটে।
সভাপতির বক্তব্যে দীপংকর চৌধুরী কাজল বলেন, ‘শুধু বাংলাদেশ নয় পৃথিবীর কোন দেশেই ‘একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি’র মত একটি সামাজিক ও মানবধিকার আন্দোলন খুঁজে পাওয়া যাবে না। গণহত্যা ও জেনোসাইডের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচার ও শাস্তির দাবীতে গত তিন দশক ধরে সংগঠনটি যে লাগাতার কর্মসূচি ও আন্দোলন পরিচালনা করে আসছে, তা এককথায় অভূতপূর্ব। শুধু আন্দোলন নয় দাবী আদায়ে সফলও হয়েছে এ সংগঠনটি। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশে সংঘটিত গণহত্যার জন্য দায়ী পাকিস্তান সেনাবাহিনীর এ দেশীয় অনুসারি রাজাকার আলবদরের বিচার প্রক্রিয়া শুরু ও দোষীদের মৃত্যুদণ্ডসহ নানা মেয়াদের শাস্তি বিধানে এ সংগঠনটি নেতৃত্বের প্রশ্নে একক কৃতিত্বের দাবীদার। ১৯৯২ সালের ২৬ মার্চ ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী ময়দানে জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে গণআদালত অনুষ্ঠিত করে যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন তা ১৯৭৫ পরবর্তী বাংলাদেশে নবজাগরণ সৃষ্টি করে।’
সভার শুরুতে শহীদ জননী জাহানারা ইমাম-এর প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করে ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।