সিইএস ২০২২ এ নিজেদের লক্ষ্য ‘টুগেদার ফর টুমরো’ উন্মোচন করলো স্যামসাং ইলেকট্রনিকস

পরিবেশগত প্রভাব হ্রাসে, ক্রেতাদের লাইফস্টাইল অনুযায়ী সেবা প্রদানে এবং সত্যিকার অর্থেই নিরবচ্ছিন্ন স্মার্ট হোম অভিজ্ঞতা নিশ্চিতে বিভিন্ন পণ্য ও উদ্যোগের মাধ্যমে একটি টেকসই, কাস্টমাইজড ও সংযুক্ত ভবিষ্যতের ওপর জোর দিবে প্রতিষ্ঠানটি

সিইএস ২০২২ -এ প্রি-শো কিনোট অনুষ্ঠানে নিজেদের লক্ষ্য উন্মোচন করেছে স্যামসাং ইলেকট্রনিকস। ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির লক্ষ্য হচ্ছে – ‘টুগেদার ফর টুমরো।’

প্রতিষ্ঠানটির ‘টুগেদার ফর টুমরো’ লক্ষ্য ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে এবং বিশ্বের গুরুতর কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অংশীদারিত্ব উৎসাহিত করার মাধ্যমে সবাইকে উৎসাহিত করবে। মূল বক্তব্যে উঠে আসে বিস্তৃত পরিসরের টেকসই উদ্যোগ গ্রহণ, ইতিবাচক অংশীদারিত্ব এবং কাস্টমাইজেবল ও কানেক্টেড টেকনোলজি নিয়ে আসার মাধ্যমে স্যামসাং কীভাবে এর লক্ষ্যকে বাস্তবায়িত করবে।

টেকসই ভবিষ্যৎ নির্মাণ
‘এভরিডে সাসটেইনিবিলিটি’ – এ বিশ্বাসের ভিত্তিতেই স্যামসাং ভবিষ্যতের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। আর ‘এভরিডে সাসটেইবিলিটি’র ধারণাই স্যামসাং -কে নিজেদের সবকিছুর কেন্দ্রে ‘সাসটেইনিবিলিটি’ -কে রাখতে উৎসাহিত করে। নতুন এবং কম নেতিবাচক প্রভাব রাখবে এমন পণ্য উৎপাদন, প্যাকেজিং ও টেকসই গ্রাহক অভিজ্ঞতা নিশ্চিত এবং পণ্যের জীবনচক্র শেষ হয়ে যাওয়ার পর তা নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে নতুন কৌশল গ্রহণের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি এর নতুন লক্ষ্য বাস্তবায়নে কাজ করছে।

নিজেদের পণ্য উৎপাদনের নানা ধাপে কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনতে স্যামসাং -এর প্রচেষ্টা ইতোমধ্যেই কার্বন পদচিহ্ন নিয়ে কাজ করা বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় কর্তৃপক্ষ কার্বন ট্রাস্টের স্বীকৃতি অর্জন করেছে। গত বছর, প্রতিষ্ঠানটির কার্বন ট্রাস্ট সনদপ্রাপ্ত মেমোরি চিপ আনুমানিক প্রায় ৭ লাখ টন কার্বন নিঃসরণ হ্রাসে সহায়তা করেছে।

এক্ষেত্রে, স্যামসাং সেমিকন্ডাক্টরের বাইরেও নিজেদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে, যার মধ্যে রয়েছে পুন:ব্যবহারযোগ্য পণ্য। ‘এভরিডে সাসটেইনবিলিটি’ নিজেদের প্রত্যেক পণ্যে ব্যবহারে স্যামসাং ভিজ্যুয়াল ডিসপ্লে বিজনেস ২০২১ সালের চেয়ে ৩০ গুণ বেশি রিসাইকেলড প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহারের পরিকল্পনা

২০২১ সালে স্যামসাং -এর সকল টিভি বক্সে পুন:ব্যবহারযোগ্য উপকরণ যুক্ত করা হয়। এ বছর, প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, এ বছর বক্সের ইন্টেরিয়র প্যাকেজিং -এও পুন:ব্যবহারযোগ্য উপকরণ ব্যবহার করা হবে। এখন, স্টাইরোফোম, বক্স হোল্ডার ও প্লাস্টিক ব্যাগেও পুন:ব্যবহারযোগ্য উপকরণ যুক্ত করা হবে। প্রতিষ্ঠানটি এর পুরস্কারজয়ী ইকো-প্যাকেজিং প্রোগ্রামের বৈশ্বিক সম্প্রসারণের ঘোষণাও দিয়েছে। এ প্রোগ্রামের সম্প্রসারণ কার্ডবোর্ড বাক্সকে ক্যাট হাউজ, স্লাইড টেবিল ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় ফার্নিচার পণ্যে রূপান্তরে সহায়তা করবে।

ক্রেতাদের স্যামসাং পণ্য ব্যবহারের ধরনেও টেকসই অবস্থাকে অন্তর্ভুক্ত করবে স্যামসাং। এ অভিজ্ঞতা কার্বন পদচিহ্ন কমাতে মানুষের ক্ষমতায়নে এবং উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য ইতিবাচক পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। উদাহরণস্বরূপ, প্রতিষ্ঠানটি এর সোলারসেল রিমোট -এ উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। এর ফলে, ইন-বিল্ট সোলার প্যানেলের মাধ্যমে ব্যাটারির অপচয় কমেছে, এবং যা দিন ও রাত উভয় সময়েই চার্জ দেয়া যাবে। সক্ষমতা বৃদ্ধি করা সোলারসেল রিমোট ওয়াই-ফাই রাউটারের মতো ডিভাইসের রেডিও তরঙ্গ থেকে বিদ্যুৎ পাবে।

এছাড়াও, ২০২৫ সালের মধ্যে স্যামসাং এর পরিকল্পনা রয়েছে এর সকল টিভি ও ফোন চার্জারের প্রায় শূন্য-স্ট্যান্ডবাই পাওয়ারে চালানোর, যাতে ওই পণ্যগুলো ব্যবহারে প্রায় শূন্য এনার্জি ব্যবহৃত হয়।

ই-বর্জ্য ইলেকট্রনিকস শিল্পের জন্য আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ। তাই, ২০০৯ সাল থেকে স্যামসাং পাঁচ মিলিয়ন টনেরও বেশি ই-বর্জ্য সংগ্রহ করেছে। মোবাইল পণ্যের জন্য স্যামসাং গত বছর সাস্টেইনেবিলিটি প্ল্যাটফর্ম গ্যালাক্সি ফর দ্য প্ল্যানেট চালু করেছে।

কাস্টোমাইজকৃত অভিজ্ঞতার মাধ্যমে গ্রাহকদের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি
দৈনন্দিন জীবনে সাস্টেইনেবিলিটি বৃদ্ধিতে স্যামসাং যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করছে তার বর্ণনায় প্রতিষ্ঠানটি গ্রাহকদের নানাবিধ চাহিদা পূরণে এর প্রযুক্তিগত উন্নয়নে যেসব কাজ করছে তা তুলে ধরেছে। প্রতিটি মানুষ আলাদা এবং তারা তাদের লাইফস্টাইল অনুসারে তাদের ডিভাইস কাস্টমাইজ করতে চায়। এ বিষয়টি মাথায় রেখে দৈনন্দিন জীবনে প্রযুক্তির সাথে সম্পর্কে নতুন মাত্রা যোগ করতে মানুষকে বিভিন্ন উপায়ে সহায়তা করতে চায় স্যামসাং। প্রতিষ্ঠানটির ‘টুগেদার ফর টুমরো’ লক্ষ্যের মূল স্তম্ভ উদ্ভাবনে মানুষকে সর্বাধিক প্রাধান্য দেয়া।

অনুষ্ঠানে স্যামসাং যে প্ল্যাটফর্ম এবং স্ক্রিন উন্মোচন করেছে, সেগুলো সিইএস ২০২০-এ হান যে ‘স্ক্রিনস এভরিহোয়্যার, স্ক্রিনস ফর অল’ যুগের উল্লেখ করেছিলো, তারই প্রতিফলন। ফ্রিস্টাইল ওজনে হালকা ও বহনযোগ্য একটি স্ক্রিন, যা আপনি যেখানেই থাকুন না কেনো আপনাকে নিখুঁত ছবির অভিজ্ঞতা দিবে। এতে রয়েছে এআইযুক্ত সাউন্ড সিস্টেম, বিল্ট-ইন স্ট্রিমিং অ্যাপস এবং স্মার্ট টিভির সাথে সংযোগ স্থাপনের বেশ কয়েকটি প্রয়োজনীয় ফিচার, যার ফলে একে যেকোনো জায়গায় সেট করা যায় এবং ১০০ ইঞ্চি পর্যন্ত প্রজেক্ট করা যায়।

স্যামসাং গেমিং হাব ক্লাউড ও কনসোল গেম খেলার জন্য একই প্ল্যাটফর্মে সব রকম সুবিধা প্রদান করে। প্রতিষ্ঠানটি তাদের ২০২২ সালের স্মার্ট টিভি এবং মনিটর উন্মোচন করতে প্রস্তুত৷ এছাড়া, ওডিসি আর্ক হচ্ছে ৫৫ ইঞ্চির ফ্লেক্সিবল ও কার্ভড গেমিং স্ক্রিন, যা মাল্টি-ভিউ সুবিধার সাথে স্ক্রিনের অভিজ্ঞতাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যায় এবং ব্যবহারকারীদের একইসাথে গেম খেলার, বন্ধুদের সাথে ভিডিও চ্যাট করার ও গেমিং ভিডিও দেখার সুযোগ করে দেয়।

ক্রেতাদের বাড়িতে পণ্যের আরও যথাযথ অভিজ্ঞতা প্রদানের লক্ষ্যে স্যামসাং এর হোম অ্যাপ্লায়েন্সের বিস্পোক লাইনআপে আরও বেশি কাস্টমাইজেশন অপশন চালুর ঘোষণা দিয়েছে। ডিশওয়াশার, রেঞ্জ ও ওভার-দ্য-রেঞ্জ মাইক্রোওয়েভের পাশাপাশি স্যামসাংয়ের ফ্যামিলি হাব এবং ফ্রেঞ্চ থ্রি-ডোর ও ফোর-ডোর রেফ্রিজারেটরে নতুন বিস্পোক অপশনগুলো রয়েছে। স্যামসাং বিস্পোক জেট™ ভ্যাকুয়াম ও বিস্পোক ওয়াশার ও ড্রায়ারের মতো নতুন পণ্য নিয়ে আসছে। লাইনআপে এসব পণ্য আনার মধ্য দিয়ে স্যামসাং ক্রেতাদের তাদের স্টাইল ও প্রয়োজনীয়তা অনুসারে বাড়ির প্রতিটি রুম সাজাতে সাহায্য করছে।

নিরবচ্ছিন্ন কানেক্টিভিটি যুগের সূচনা
সকলে মিলে একটি সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার লক্ষ্যে স্যামসাংয়ের পণ্যে কাস্টোমাইজেশন ও সাস্টেইনেবিলিটির সাথে নিরবিচ্ছিন্ন কানেক্টিভিটি নিশ্চিত করাও প্রয়োজন। মূল বক্তব্যে স্যামসাং অংশীদারদের সাথে কাজ করার পাশাপাশি পরবর্তী প্রজন্মের পণ্যগুলোকে তুলে ধরার মাধ্যমে নিরবিচ্ছিন্ন কানেক্টিভিটি যুগ সূচনার প্রতিশ্রুতিও ব্যক্ত করেছে।

সিইএস-এ প্রথমবারের মতো উন্মোচিত, সম্পূর্ণ নতুন স্যামসাং হোম হাব স্মার্টথিংস সেবার মাধ্যমে কানেক্টেড হোম অভিজ্ঞতাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যায়। এটি বাড়ি পরিচালনা সহজ করার লক্ষ্যে এআইযুক্ত অ্যাপ্লায়েন্সের সাথে সংযোগ স্থাপন করে। স্যামসাং হোম হাব ছয়টি স্মার্টথিংস সেবাকে একটি সুবিধাজনক ডিভাইসে সমন্বয় করে, যা ব্যবহারকারীদের তাদের স্মার্ট হোমের ওপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রদান করে।

স্যামসাং এর মূল বক্তব্যে কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতার প্রতিশ্রুতির ওপর ‍গুরুত্বারোপ করেছে, যা উদ্ভাবনের প্রতি তাদের ধারাবাহিক প্রচেষ্টারই বহিঃপ্রকাশ। এই প্রতিশ্রুতি কেবল প্রতিষ্ঠানটির প্রযুক্তির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; পরবর্তী প্রজন্ম বিশ্বে যেসব পরিবর্তন দেখতে চায়।