চেঙ্গি সেতুতেই স্বপ্ন বুনছেন দূর্গম তিন উপজেলার মানুষ

কাপ্তাই হ্রদ সৃষ্টির ৬০ বছর পর নির্মিত নানিয়ারচরের চেঙ্গি সেতুতেই স্বপ্ন বুনছেন রাঙামাটির দূর্গম তিন উপজেলার মানুষ। চেঙ্গি নদীর ওপর ৫০০ মিটার দীর্ঘ এই সেতু দিয়ে শুধু নানিয়ারচর উপজেলায় নয়, সহজেই যাওয়া যাবে লংগদু ও বাঘাইছড়ি উপজেলায়ও। বহুল কাঙ্খিত সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে গত বছরের জুনে। আগামি বুধবার (১২ জানুয়ারি) এই সেতুর উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এদিন সকাল ১০ টায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত থাকবেন তিনি।
নানিয়াচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিউলি রহমান তিন্নি বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আগামি বুধবার চেঙ্গি নদীর ওপর নির্মিত বহুল কাঙ্খিত সেতুটির উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। তবে এখন পর্যন্ত সেতুর নাম দেওয়া হয়নি। সেতু উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। খবর বাংলা ট্রিবিউনের
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চেঙ্গি নদীর ওপর সেতু নির্মাণের আগে নানিয়ারচর উপজেলা সদরে যাওয়ার মতো সরাসরি কোনো সড়ক ছিল না। নৌ-পথে যেতে দুই ঘণ্টা সময় লাগতো। এখন ৪৫ মিনিটে নানিয়ারচর সদরে সড়ক পথে যাওয়া যাবে। পাশাপাশি এই সেতু দিয়ে কম সময়ে সহজেই সাজেকে যাওয়া যাবে। আগে রাঙামাটি থেকে ১২৭ কিলোমিটার ঘুরে সাজেক ভ্যালি যেতে হতো। সেতুটি হওয়ায় লংগদু-দীঘিনালা হয়ে সাজেক যেতে দূরত্ব কমলো ১০ কিলোমিটার। সময় বাঁচবে প্রায় এক ঘণ্টা।
রাঙামাটি সড়ক বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ৫০০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১০ দশমিক দুই মিটার প্রস্থের এই সেতু নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১২০ কোটি টাকা। পাশাপাশি দুই কিলোমিটার সড়ক সংযোগের জন্য আরও ১০০ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। এর মধ্যে ৪৬ কোটি ৬১ লাখ টাকা ভূমি অধিগ্রহণের জন্য ব্যয় করা হয়। ২০১৭ সালের জুলাই মাসে কাজ শুরু হলেও ২০২১ সালের জুনে নির্মাণকাজ শেষ হয়।নানিয়ারচর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রগতি চাকমা বলেন, ‘এই এক সেতুর মাধ্যমে আমাদের অনেক দিনের স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে। আমরা এখন খুব সহজে জেলা সদরে যাতায়াত করতে পারবো। এলাকার উৎপাদিত কৃষিপণ্যের পরিবহন ও বাজারজাত সহজ হবে। একই সঙ্গে বাকি দুই উপজেলা লংগদু, বাঘাইছড়ি হয়ে আমরা সাজেকে যেতে পারবো’।
জানতে চাইলে রাঙামাটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহে আরেফিন বলেন, সড়কটি নির্মাণে সেনাবাহিনীর ২০ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন (ইসিবি) থেকে একটি প্রকল্প প্রস্তুত করা হচ্ছে। আগামি বুধবার (১২ জানুয়ারি) সেতুটি প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করবেন। এরপর থেকে সাধারণ মানুষের চলাচলের জন্য সেতুটি উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, রাঙামাটি-নানিয়ারচর-লংগদু-বাঘাইছড়ি সড়ক যোগাযোগ স্থাপনের জন্য ১৯৯৩ সালে নানিয়ারচর অংশে চেঙ্গি নদীর ওপর সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছিল। অবশেষে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ২০১৫ সালের ৩১ অক্টোবর সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের নানিয়ারচরের চেঙ্গি নদীর ওপর সেতু নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছিলেন। সেতুমন্ত্রীর ঘোষণার দুই বছর পর ২০১৭ সালের জুলাই মাসে সেনাবাহিনীর তত্ত¡াবধানে শুরু হয় সেতু নির্মাণের কাজ।