বেগম খালেদা জিয়ার কিছু হলে এর দায় সরকারকে নিতে হবে

দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কিছু হলে এর দায় সরকারকে নিতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিএনপি নেতা ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেন, বিদেশে চিকিৎসার জন্য সকল বাধা তুলে দেন, না হলে পতনের আন্দোলন।।

মঙ্গলবার (৩০ নভেম্বর) বিকেলে বাকলিয়া কালামিয়া বাজারের কে বি কনভেনশন হলে বেগম জিয়ার মুক্তি ও সুচিকিৎসার দাবিতে বিএনপির সমাবেশে এসব কথা বলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহবায়ক ডা. শাহাদাত হোসেনের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্করের পরিচালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খোন্দকার, এস এম ফজলুল হক, কেন্দ্রীয় বিএনপির মৎস্য বিষয়ক সম্পদক লুৎফুর রহমান কাজল, উপজাতি সম্পাদক মিসেস ম্যা মা চিং, সাবেক মন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, কেন্দ্রীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক জালাল উদ্দীন মজুমদার, হারুন অর রশিদ, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক আবু সুফিয়ান, খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল ওয়াদুদ ভূঁইয়া, কেন্দ্রীয় বিএনপির মহিলা সম্পাদক নুরী আরা সাফা, সাবেক এমপি শাহাজাহান চৌধুরী, কেন্দ্রীয় সদস্য হুম্মাম কাদের চৌধুরী, নোয়াখালী জেলা বিএনপির সভাপতি গোলাম হায়দার বিএসসি, কেন্দ্রীয় যুবদলের মোরতাজুল করিম বাদরু, ফেনি জেলা বিএনপির আহবায়ক শেখ ফরিদ বাহার, কেন্দ্রীয় সদস্য উদয় কুসুম বড়ুয়া, মামুনুর রশীদ মামুন, মশিয়ুর রহমান বিপ্লব, মহানগর বিএনপির সৈয়দ আজম উদ্দিন, এরশাদ উল্লাহ, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মোসতাক আহমদ খান, লক্ষীপুর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব শাহাবুদ্দীন সাবু, বান্দরবন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাবেদ রেজা, বিএনপি নেতা নুরুল আমিন চেয়ারম্যান, ইন্জিনিয়ার বেলায়েত হোসেন, এস কে খোদা তোতন, নাজিমুর রহমান, কাজী বেলাল, এডভোকেট ইফতেখার মহসিন, এনামুল হক এনাম, এডভোকেট এনামুল হক, মহানগর যুবদলের সভাপতি মোশারফ হোসেন দিপ্তি, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সাহেদ, কক্সবাজার জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট শামীম আরা স্বপ্না, নোয়াখালী জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান, খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদকএম এন আবছার, ফেনি জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আলাউদ্দিন আলাল, রাঙ্গামাটি জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক দিপেন তালুকদার, বিএনপি নেতা অধ্যাপক ইউনুছ চৌধুরী, নুরুল আমিন, নুর মোহাম্মদ, হাছান জসিম, ফাতেমা বাদশা, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এইচ এম রাশেদখান, সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেন বুলু, শেখ নুরুল্লাহ বাহার, মহানগর ছাত্রদলের আহবায়ক সাইফুল আলম, দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের সভাপতি শহিদুল আলম শহীদ, মহানগর ছাত্রদলের সদস্য সচিব শরিফুল ইসলাম তুহিন প্রমুখ।

এক টাকা উত্তোলন না করেও কিভাবে এতিমের টাকা মেরে খেয়েছেন এমন প্রশ্ন করে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, সরকার ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। আইনে বিনা শর্তে বেগম খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো সম্ভব। দেশের ১৮ কোটি মানুষের দাবি বেগম জিয়াকে বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা।

দেশের মানুষকে ভোট দিতে দেয়নি সরকার। ২৯ তারিখ ভোট ডাকাতি করে ক্ষমতায় এসেছেন। দেশ নেত্রী বেগম খালেদার যে অসুস্থতা সেটা বাংলাদেশ নয় এশিয়া মহাদেশে পর্যন্ত উন্নত চিকিৎসা করা সম্ভব নয়। কোন রকমের প্রতি দয়া ও মোহাব্বত করার দরকার নেই।

বেগম জিয়ার বিনা শর্তে মুক্তি দাবি জানিয়ে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আওয়ামী সরকার দেশকে ধ্বংসের শেষপ্রান্তে নিয়ে গেছে। সরকারকে একটি ধাক্কা দিতে পারলেই কোন ধরনের অস্তিত্ব থাকবে না। পুলিশকে থানায় রাখেন, মাঠে আওয়ামী লীগকে পাঠান। তখন মাঠে প্রমাণ করবো।

তিনি বলেন, ‘আজকের স্বতঃস্ফূর্ত এই সমাবেশ প্রমাণ করে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী। এই সমাবেশ প্রমাণ করে দেশের ১৮ কোটি মানুষ চায় বেগম খালেদা জিয়া বিদেশে গিয়ে উন্নত চিকিৎসা নিক। মানুষ প্রত্যাশা করে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে দিয়ে উনাকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ দেয়া হোক। সেই দাবিতেই আমরা চট্টগ্রামে এসেছি।’

‘আজ বাংলাদেশের ৫০ বছর হয়েছে, আমরা স্বাধীন হয়েছি। আমরা সুবর্ণজয়ন্তী পালন করছি। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, এই ৫০ বছর পরে এ স্বাধীন-সার্বভৌম দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী আজ হাসপাতালে জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। তাকে বিদেশে পাঠিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য সারা বাংলাদেশে আজ সমাবেশ করে আমাদের দাবি জানাতে হচ্ছে। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। যে কোনো মানুষের বাংলাদেশে মৌলিক, মানবিক অধিকার আছে, যে কোনো ব্যক্তি চিকিৎসার জন্য যে কোনো দেশে যেতে পারেন।’

খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আর আজকের সরকার প্রধান এই দেশনেত্রীর প্রতি প্রতিহিংসার কারণে দেশনেত্রীকে একটি বানোয়াট মামলায় দেশের প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে কারাগারে রাখা হয়েছে। আজকে তিনি বাড়িতে আছেন, তার সাজা অস্থায়ীভাবে স্থগিত করা হয়েছে। এই স্থগিত করার ব্যাপারেও দেশের প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে শর্ত দিয়ে দিয়েছে। কি শর্ত? দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা করতে পারবেন না— এই শর্ত মানবাধিকার বিরোধী শর্ত। এই শর্ত সংবিধান মোতাবেক একজন মানুষের মৌলিক অধিকারকে খর্ব করার শর্ত।

তিনি আরও বলেন, ‘আজ আওয়ামী লীগের নেতারা অনেকে অনেক কথা বলেন। কিছুদিন আগে আপনারা শুনেছেন, আইনমন্ত্রী বলেছেন, তিনি অনেক ঘটনার কথা বলেছেন, এসব ঘটনার সাথে দেশনেত্রী জড়িত নয়। শেখ হাসিনা বলেছেন, বেগম জিয়াকে বাড়িতে থাকতে দিয়েছি, এটাই নাকি উনি বেশি করেছেন। তার অর্থ হচ্ছে, একমাত্র প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক প্রতিহিংসা এবং বেগম জিয়ার জনপ্রিয়তার কারণে আজকে একটি বানোয়াট মামলায় তারই নির্দেশে সাজা দেওয়া হয়েছে। এদেশের মানুষের দাবির চাপে বাধ্য হয়ে তিনি বেগম জিয়াকে সাময়িক কারাদণ্ড স্থগিত করে বাড়িতে থাকতে দিয়েছেন। আজকে তিনি হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন। এর অর্থ সবকিছু আজকের প্রধানমন্ত্রীর ইঙ্গিতে হচ্ছে।’

‘আজ আওয়ামী লীগের নেতা, মন্ত্রী-এমপিরা বলেন— বেগম খালেদা জিয়া বিদেশে যান, এটা নাকি আইনে নাই। প্রেসিডেন্টের কাছে আবেদন করেন। প্রেসিডেন্টের কাছে আবেদনের জন্য আওয়ামী লীগের কোনো মন্ত্রীর আমাদের সবক দিতে হবে না। আবেদন করব কি করব না- সেটা বিএনপির একজন সাধারণ কর্মীও জানেন। যদি কোনো ব্যক্তি সত্যিকারের দোষ করে সাজা পান, তাহলে তিনি দোষ স্বীকার করে প্রেসিডেন্টের কাছে আবেদন করে ক্ষমা চাইতে পারেন। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়া কোনো দোষ করেননি। তিনি দোষী নন। তাকে গায়ের জোরে সরকারের নির্দেশে একটি ভূয়া মামলায় সাজা দেওয়া হয়েছে। তিনি নাকি এতিমের কোটি কোটি টাকা মেরে খেয়েছেন, অথচ ওই দুই কোটি টাকা এখনও ব্যাংকে। সেই টাকা এখন বেড়ে আট কোটি টাকার বেশি হয়েছে। যদি ব্যাংক থেকে একটি টাকাও উত্তোলন না হয়ে থাকে, তাহলে বেগম জিয়া কিভাবে এতিমের টাকা মেরে খেলেন? অর্থাৎ এই অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা।’

খন্দকার মোশাররফ হোসেন আরও বলেন, দোষী না হয়েও দোষ স্বীকার করে প্রেসিডেন্টের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবেন, সেই নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া নন। বেগম খালেদা জিয়া আপোষহীন নেত্রী। এরশাদের বিরুদ্ধে আন্দোলনের সময় তিনি সেটা প্রমাণ করেছেন। সেদিন আওয়ামী লীগ এরশাদের সাথে হাত মিলিয়ে নির্বাচনে গিয়েছিল, বেগম জিয়া আপসহীন ছিলেন। অথচ আজ তিনি আপস করবেন, কত বড় দুঃসাহস! যারা আওয়ামী লীগের নেতা, মন্ত্রী-এমপিরা এসব কথা বলেন তাদের বলছি, বেগম খালেদা জিয়া কোনো দোষ করেননি, প্রেসিডেন্টের কাছে দোষ স্বীকার করে আবেদন করার প্রশ্নই আসে না। খালেদা জিয়া এদেশের একজন আপোসহীন নেত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। তাকে এসব কথায় কাজ হবে না।

তিনি বলেন, আমরা প্রেসিডেন্টের কাছে কোনোদিনও বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য আবেদন করব না। আইনি লড়াইয়ে আমরা আছি। তবে আজ বেগম খালেদা জিয়াকে যে আইনে সাময়িকভাবে সাজা থেকে স্থগিত রাখা হয়েছে, সেই আইনের মাধ্যমেই বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য যেতে সরকার অনুমতি দিতে পারে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য নানা শর্ত দিচ্ছেন। আজ বলছেন, তার কিছু করার নেই।

‘আমরা পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, বেগম জিয়াকে বিদেশে নিতে আইনের কোনো বাধা নেই। বাধা হচ্ছে— ভোট ডাকাতির প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীই একমাত্র বাধা, সরকারই একমাত্র বাধা। তাই সারা বাংলাদেশের মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাদের নেত্রীর মুক্তি চায়। যে শর্তে বেগম জিয়ার সাজা অস্থায়ীভাবে স্থগিত করা হয়েছে, সেই শর্ত উঠিয়ে দিয়ে আমাদের নেত্রীকে যে কোনোস ময় চিকিৎসার জন্য বিদেশ যেতে বাধা দূর করতে পারেন। তাই বাধা একমাত্র সরকার, বাধা একমাত্র প্রধানমন্ত্রী’— বলেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

‘৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে এদেশের মানুষকে ভোট দিতে দেয়নি। এদেশের মানুষের ওপর তাদের আস্থা নেই। তারা জানত, দিনের বেলা ভোট হলে আওয়ামী লীগের কোনো পাত্তা থাকবে না। তার জন্য ২৯ তারিখে ভোট ডাকাতি করে সারা বাংলাদেশের মানুষের ভোটের অধিকার এই শেখ হাসিনা কেড়ে নিয়েছে। আজ সেজন্য ফ্যাসিস্ট কায়দায় ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য বেগম খালেদা জিয়াকে… তিনি যখন এত অসুস্থ, জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে, মেডিকেল টিম বলেছে, বেগম জিয়ার যে অসুস্থতা সেটার চিকিৎসা বাংলাদেশে করার কোনো সুযোগ নেই, এশিয়া মহাদেশেও করার সুযোগ নেই।’

তিনি বলেন, যারা গণতন্ত্র চায়, যারা দেশপ্রেমিক সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই সরকারকে একটা ধাক্কা দিতে হবে। একটা ধাক্কা দিতে পারলে এই সরকারের কোনো অস্তিত্ব থাকবে না। কারণ এই সরকারের কোনো ভিত্তি নাই। সরকারকে আবার বলতে চাই, বেগম খালেদা জিয়ার সবকিছুকে আপনারা ধ্বংসের শেষ দিকে নিয়ে গেছেন। দেশকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাতে হলে, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা ছাড়া বিকল্প নেই। আর বেগম জিয়ার মুক্তি ছাড়া গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার সুযোগ নেই। বেগম জিয়াকে মুক্ত করে গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনে অবাধ, সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ভোটের মাধ্যমে সরকার গঠন করলে একমাত্র দেশের মানুষ বিচার পাবে। বাংলাদেশের মানুষ শান্তি পাবে।

‘সরকারকে আবার বলতে চাই, বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশ যাবার ব্যাপারে যে বাধা আপনারা সৃষ্টি করেছেন সেই বাধা তুলে নেন। অনতিবিলম্বে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করেন। এদেশের মানুষের দাবি অনুযায়ী, অবিলম্বে আমরা ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে নির্দলীয়, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দেন। তখন প্রমাণ হবে— বিএনপি আছে কি নেই। আজ মাঠে কোনো আওয়ামী লীগ নেই। প্রশাসন, পুলিশ দিয়ে এই সরকার দেশ চালাচ্ছে। জনগণ তাদের সাথে নেই।’— বলেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন।