দিনাজপুরে লিচু বাগানে মধু চাষের ধুম

শাহ্ আলম শাহী,দিনাজপুর থেকেঃ দিনাজপুরের লিচুর বাগানে বাগানে মৌচাষের ধুম পড়েছে। প্রযুক্তিগতভাবে চলছে,এ মধূ চাষ। এ মৌচাষ করে একদিকে মৌচাষীরা যেমন আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন,তেমনি মৌচাষে পরাগায়ণের মাধ্যমে অধিক ফলন পাওয়ার নিশ্চয়তা পাচ্ছেন লিচু বাগান মালিকরা। তবে উৎপন্ন মধু সুষ্ঠু বাজারজাত করণে বিড়ম্বনাও রয়েছে।
দিনাজপুরের লিচু বাগানে বাগানে এখন শোভা পাচ্ছে থরে থরে সাজানো ঘর আকৃতির কাঠের তৈরী ছোট ছোট বাক্স । লিচু মুকুল থেকে মধু আহরণের পর মৌমাছি ছুঁটছে,আপন নিলয় ওইসব বাক্সে। আর বাক্সের মৌচাক থেকে বিশেষ যন্ত্রের সাহায্যে মধূ সংগ্রহ করছেন মৌচাষীরা। মৌচাষী চান মিয়া জানান,এ পর্যন্ত তিনি ৮০ মন মধু পেয়েছেন। আরো ৫০ মন পাওয়ার আশা করছেন তিনি।
একই কথা জানালেন, মৌচাষী হাসনাইন। তিনি প্রায় এক’শ মন মধূ সংগ্রহকরেছেন।
দিনাজপুরের ১৩টি উপজেলায় ২’হাজার ৪’শ হেক্টর জমিতে রয়েছে লিচু’র বাগান। এছাড়াও বসতবাড়ীতে ৪’শ ৪০ হেক্টর জমিতে লিচু বাগান রয়েছে। ছোট বড় মিলে সাড়ে ৩ হাজার বাগানে রয়েছে প্রায় ৪ লাখ ৭২ হাজারের বেশী লিচুর গাছ। প্রতি বছর লিচু বিক্রি থেকে অর্জিত হয় অনুমানিক ৮০ থেকে ৯০ কোটি টাকা। এছাড়াও লিচু বাগান থেকে প্রতি বছর মধু ্উপন্ন হয় কমপক্ষে সাড়ে ৪’শ মেট্রিন টন মধু।তাই,উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে মৌচাষীরা মাঠে নেমেছেন। আশাতীত মধুও পাচ্ছেন।কিন্তু বাজারজাত করণের সুষ্ঠু ব্যবস্থা না থাকায় পড়েছেন তারা বিপাকে।
নয়নাভিরাম এ দৃশ্য দেখে অনেকে মুগ্ধ হচ্ছেন।খামার থেকেই ক্রয় করছেন,বিশুদ্ধ খাটি মধূ।মৌচাষে পরাগায়ণের মাধ্যমে অধিক ফলন পাওয়ার নিশ্চয়তা পাচ্ছেন লিচু বাগান মালিকরাও। বিরল উপজেলার লিচুবাগান মালিক মতিউর রহমান জানালেন, মৌচাষের ফলে তার লিচু’র উৎপাদন ভালো হয়। গতবার তিনি ভালো ফলন পেয়েছেন লিচুর।
প্রতি মৌসুমে নিরাপদ ফল উৎপাদনে লিচু বাগানে মৌচাষ ও মধু আহরণে মাঠ দিবসের আয়োজন করছে, কৃষি বিভাগ। বাগান মালিক ও মৌচাষীদের পরামর্শ ও প্রযুক্তিগত সহায়তাও দেয়া হচ্ছে। এমনি কথা জানালেন,দিনাজপুর কৃষি সমাপ্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ তৌহিদুল ইকবাল। তিনি জানালেন,দিনাজপুরের উৎপন্ন এসব মধু চলে যাচ্ছে,দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও। বিদেশী কোম্পানীগুলো ক্রয় করছে,এসব মধু।
গেলবারের চেয়ে লিচুগাছে মুকুলের সমারোহ বেশি হওয়ায় বেড়ে গেছে মৌমাছিদের আনাগোনা। বসে নেই মৌয়ালরা। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত মৌয়ালদের পদচারনায় মুখর এখন দিনাজপুর জেলার বিরল উপজেলার মাধববাটি ও সদর উপজেলার মাসিমপুর গ্রাম। একদিকে যেমন মৌয়ালরা মধু সংগ্রহ করছেন অন্যদিকে মৌমাছির দ্বারা পরাগায়ন হয়ে বাড়ছে লিচুর ফলন। কিন্তুু মধ্যস্বত্ব ভোগীদের হাতে জিম্মি এখানকার মধু উৎপাদন ও বিপণন ব্যবস্থা। ফলে মধুর ন্যায্যমূল্য না পেয়ে হতাশ মধুচাষে আগ্রহ হারাচ্ছে মৌয়ালরা।
প্রতিবছর দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মৌয়াল ও খামারীরা লিচুর মুকুল থেকে মধু সংগ্রহ করার জন্য দিনাজপুরে আসছেন। তারা মধু সংগ্রহ করছেন বিভিন্ন বাগানে বক্স বসিয়ে। বাগানীরা এত খুব খুশি। কারণ এতে করে পরাগায়ন ঘটছে,বাড়ছে লিচু উৎপাদন।
দিনাজপুরের বিরল উপজেলার মাধববাটী ও সদর উপজেলার মাসিমপুর লিচুর জন্য বিখ্যাত। প্রতি বছর বিভিন্ন স্থান থেকে লিচুর মুকুল আসার সাথে সাথে মৌমাছী নিয়ে মধু চাষীরা ছুটে আসেন দিনাজপুরে। সামান্য কিছু বিনিময়ের বিপরীতে মধু সংগ্রহ করছেন মৌয়ালরা, জানালেন এই বাগান মালিক।
মধু সংগ্রহের পর বাজারে বিক্রি করতে না পারার কারণে হতাশ বিভিন্ন জেলা থেকে আগত মৌয়ালরা। তারা জানালেন মধ্যস্বত্বভোগীদের দখলে এখন মধুর বাজার ব্যবস্থাপরা। এজন্য বিপনন ব্যবস্থায় সরকারী হস্তক্ষেপ হলে তারা আশানুরুপ দাম পাবেন এমন আশাবাদ মৌয়ালদের
মধুচাষীরা জানালেন, সরকার যদি এসব মধু প্রসেসিং করে বিদেশে রপ্তানীর ব্যবস্থা করতো তাহলে আমরা লাভবান হতাম। পাশাপাশি সরকার যদি আমাদের ঋন প্রদান করতো তাহলে আমরা আরো খামার তৈরী করতে পারতাম। বৃদ্ধি পেত মধুর উৎপাদন। কিন্তু মধুর উৎপাদন বৃদ্ধিকে কার্যকরী কোন পদক্ষেপ না থাকায় ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে এই শিল্প
আমরা মধুচাষ সম্প্রসারনে এবং বিপনন ব্যবস্থা আরও উপযোগী করতে একটি প্রস্তাবনাসহ স্থানীয়ভাবে ঋণদানকারী ব্যাংকগুরোতে এই খাতে ঋণ দেওয়ার তাগিদ দিচ্ছি।
মধু চাষী ও স্থানীয় বাগান মালিকরা আশা করছেন, সরকারী পৃষ্টপোষকতা ও ব্যাংক ঋনের ব্যবস্থা করতে পারলে দিনাজপুরের মধু হবে সারা দেশে সমাদৃত।
নিরাপদ ফল উৎপাদনে লিচু বাগানে বিশুদ্ধ মধু আহরণে লিচু বাগানে মৌচাষে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছে এ অঞ্চলের বাগান মালিক ও মৌচাষীরা। সংশ্লিষ্ট বিভাগের সহযোগিতা অব্যাহত থাকলে এবং এ মধু’র ভালো দাম পেলে এ অঞ্চলে লিচু বাগানে মধু চাষের পরিধি আরো রেড়ে যাবে এমনটাই মন্তব্য করছেন সংশ্লিষ্টরা।