পর্দার জন্য মুখ ঢাকা কি জরুরি?

প্রশ্ন: পর্দার জন্য মুখ ঢাকা কী জরুরি?

উত্তর: পর্দার জন্য মুখ ঢাকা কী জরুরি বা নারীদের চেহারা সতরের অন্তর্ভুক্ত কি না এ বিষয়ে ফকিহগণের মধ্যে মতভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়।

কুরআনুল কারিমে বলা হয়েছে-‘তারা যেন তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে তবে যা সাধারণত প্রকাশ হয়।’ (সূরা-২৪ নূর, আয়াত : ৩১)।

অর্থাৎ শরীরের যে অঙ্গ আপনা-আপনি প্রকাশ হয়ে পড়ে বা স্বাভাবিক কাজকর্ম ও চলাফেরা করার সময় শরীরের যে যে অঙ্গ স্বভাবত খুলেই যায় (তা সতরের অন্তর্ভুক্ত নয়), এগুলো ব্যতিক্রমের অন্তর্ভুক্ত। এগুলো প্রকাশ করায় কোনো গুনাহ নেই। (তাফসিরে ইবনে কাসির)।

এ বিষয়ে হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রা.) বলেন : এতে বুঝানো হয়েছে শরীরের ওপরের কাপড়, যেমন : বোরকা ও লম্বা বড় ওড়নি বা চাদর ইত্যাদি।

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন : এতে বুঝানো হয়েছে মুখমণ্ডল এবং হাতের পাতা ও পায়ের পাতা। কেননা নারীর প্রয়োজনে বাইরে যেতে হলে কিংবা চলাফেরা বা লেনদেন করতে হলে মুখমণ্ডল ও হাতের তালু আবৃত রাখা খুবই দুরূহ।

এ তাফসির মতে মুখমণ্ডল ও হাতের পাতা বেগানা পুরুষের সামনে প্রয়োজনে প্রকাশ করা জায়েজ। উপরোক্ত বিষয়ে ফিকাহবিদদের মধ্যে দ্বিমত রয়েছে। কিন্তু এ প্রশ্নে সবাই একমত যে, মুখমণ্ডল ও হাতের পাতার প্রতি দৃষ্টিপাত করার কারণে যদি ফিতনা বা অনর্থ সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা থাকে তবে এগুলো দেখাও জায়েজ নয় এবং নারীর জন্য এগুলো প্রকাশ করাও জায়েজ নয়। এ হুকুম কাম ভাব নিয়ে দেখার বিষয়ে। (তাফসিরে ইবনে কাসির)।

এমনিভাবে এ ব্যাপারে সবাই একমত যে, সতর আবৃত করা যা সর্বসম্মতভাবে নামাজে ও নামাজের বাইরে ফরজ, তা থেকে মুখমণ্ডল ও হাতের পাতা ব্যতিক্রমভুক্ত। এগুলো খোলা অবস্থায় নামাজ পড়লে নামাজ শুদ্ধ হবে। (তাফসিরে মাআরিফুল কুরআন)।

মহিলাদের চেহারা সতরের অন্তর্ভুক্ত না হলেও হিজাবের অন্তর্ভুক্ত। আল্লামা শামী (রহ.) নামাজের শর্তাবলি অধ্যায়ে উল্লেখ করেছেন ‘যুবতী নারীদের পুরুষের সামনে মুখমণ্ডল খোলা থেকে বিরত রাখতে হবে। এ নির্দেশ এ জন্য নয় যে, তাদের মুখমণ্ডল সতরের অন্তর্ভুক্ত। বরং ফেতনায় জড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কায়। (শামী ২/৯৭)।

মুফতি তাকি ওসমানী হাদিস ও ফকিহগণের দীর্ঘ মতামত পর্যালোচনা করে বলেন ‘চার মাজহাবের অভিমতগুলোর ওপর দৃষ্টিপাত করলে এ কথা স্পষ্ট হয়ে যায় যে সব কয়টি মাজহাবই এ বিষয়ে একমত যে, কামবাসনা পূরণার্থে কিংবা ফেতনায় জড়িয়ে যাওয়ার শঙ্কাযুক্ত অবস্থায় নারীদের মুখমণ্ডলের ওপর দৃষ্টিপাত করা হারাম।

বিশেষত বর্তমান এ চারিত্রিক অধঃপতনের যুগে এখন সর্বত্র ফেতনা ফাসাদের ছড়াছড়ি। এ জন্য হানাফি মাজহাবের মুতাআখখিরিন ওলামায়ে কেরাম সাধারণভাবে প্রয়োজন ছাড়া কোনো নারীর মুখমণ্ডলের ওপর দৃষ্টিপাত নিষিদ্ধ করেছেন। (তাকমিলায়ে ফাতহুল মূলহীম খণ্ড- ৪/ পৃষ্ঠা ২৬১)।