একের পর এক খুন করে গেছেন নারী কুস্তিগীর

মেক্সিকোর কুখ্যাত এক নারী সিরিয়াল কিলার আট বছরে অন্তত ১১ জন বৃদ্ধাকে খুন করার দায়ে দোষী প্রমাণিত হয়েছিলেন ২০০৮ সালে।

এ জন্য তার সাজা হয়েছিল ৭৫৯ বছরের কারাদণ্ড। বলা হয় আরও বহু খুন করেছিলেন তিনি, যেগুলো আদালতে প্রমাণ করা সম্ভব হয়নি। খবর বিবিসির।

হুয়ানা বারায্যা নামে দুর্ধর্ষ এই সিরিয়াল কিলার ছিলেন মেক্সিকোর একজন পেশাদার নারী কুস্তিগীর।

হুয়ানা বারায্যা মেক্সিকোয় পরিচিত হয়ে উঠেছিলেন ‘ম্যাটাবিহিতাস’, অর্থাৎ বৃদ্ধা নারী ঘাতক নামে।

মেক্সিকো সিটির উত্তরের এক গ্রামে জন্ম হয় হুয়ানার। তার পছন্দ ছিল লুৎজা লিব্রে নামে এক জনপ্রিয় ধারার কুস্তি, যেখানে কুস্তিগীররা লড়াই করেন মুখোশে মুখ ঢেকে। কুস্তিখেলার মঞ্চে তার পেশাদারি নাম ছিল ‘নীরব নারী’।

মেক্সিকো সিটির এক আদালতে ২০০৮ সালের ৩১ মার্চ অন্তত ১১ বৃদ্ধাকে খুন করার দায়ে দোষী সাব্যস্ত হন হুয়ানা বারায্যা।

আইনজীবীরা তার বিরুদ্ধে ৪০টির বেশি খুনের অভিযোগে মামলা করেছিলেন, কিন্তু সাক্ষ্যপ্রমাণের অভাবে ১১টির বেশি মামলায় তারা তাকে দোষী প্রমাণ করতে পারেননি।

মেক্সিকোর গণমাধ্যমে দুর্ধর্ষ এই অপরাধীর খুনের সংখ্যা নিয়ে নানা হিসাব দেওয়া হয়। কেউ বলেন তিনি খুন করেছেন ২৫ বৃদ্ধাকে, কেউ বলেন এ সংখ্যা ৫০-এর কাছাকাছি।

মেক্সিকো সিটিতে ২০০৫ সালে তুমুল আলোড়ন সৃষ্টি করে একের পর এক খুনের ঘটনা ঘটে।

রাজধানীতে খুন হতে থাকেন বয়স্ক নারীরা। নারীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে প্রবল ত্রাস আর আতঙ্ক। খুনের শিকার এবার না জানি কে হয়!

খুনের ঘটনাগুলো ঘটছিল সাত বছর ধরে। প্রত্যেক নারীকে তাদের বাসায় একই কায়দায় খুন করা হচ্ছিল।

২০০৫ সালে মেক্সিকো সিটির মেয়র দেশটির নিউরো সাইকোলজিস্ট ড. ফেগি অস্ট্রস্কির সঙ্গে প্রথম টেলিফোনে যোগাযোগ করেন।

মেয়র তাকে অনুরোধ করেন এই খুনের ঘটনাগুলোর কোনো যোগসূত্র আছে কিনা। সব একই খুনির কাজ কিনা এ বিষয়ে তদন্তে সহায়তা করতে।

ড. অস্ট্রস্কি বলেন, সব খুনের একটা প্যাটার্ন ছিল। সবাই বয়স্ক নারী। সবাই থাকত একা। সবাইকে গলায় দড়ি দিয়ে পেঁচিয়ে মারা হয়েছে। প্রত্যেকটি ঘটনায় খুনি কিন্তু দরোজা ভেঙে বাড়িতে ঢোকেনি। কেউ তাকে দরোজা খুলে দিয়েছে।

পুলিশ তখন হন্যে হয়ে সূত্র খুঁজছে। একটা ঘটনায় একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, তারা লম্বা-চওড়া একজন মহিলাকে ঘটনাস্থল থেকে বেরিয়ে যেতে দেখেছেন। আরেকজন বলেন, তিনি ঘটনাস্থলে দুজনকে দেখেছেন।

একপর্যায়ে পুলিশ শহরের হিজড়াদের ধরপাকড় শুরু করেন। তাদের ধারণা জন্মায়, খুনি একজন পুরুষ, নারীর ছদ্মবেশে খুন করছেন। গোটা তদন্ত চলে বিশৃঙ্খলভাবে।

পুলিশের চেষ্টার ত্রুটি ছিল না। কিন্তু তারা তখন পুরো গোলকধাঁধায়। প্রত্যক্ষদর্শীদের জবানবন্দির ওপর ভিত্তি করেই তারা খুনিকে খুঁজে বেড়াচ্ছিল।

এর পর ২০০৬ সালের জানুয়ারিতে একটি বাড়িতে ৮২ বছরের এক বৃদ্ধাকে গলায় স্টেথিস্কোপ জড়িয়ে খুন করে পালানোর সময় ধরা পড়ল সন্দেহভাজন একজন। জানা গেল ওই সন্দেহভাজন সাবেক কুস্তিগীর হুয়ানা বারায্যা।

ঘটনার দিন ড. অস্ট্রস্কি ছিলেন রাজধানীর বাইরে। তিনি গিয়েছিলেন এক বিয়ের অনুষ্ঠানে। খবর শুনে তিনি দ্রুত ফিরে এলেন মেক্সিকো সিটিতে। সোজা হাজির হলেন জেলখানায়।

জেলখানার অফিসে একটা খোলা জায়গায় তার সঙ্গে কথা বলতে চাইলেন তিনি। আমার কিছুটা ভয়ই করছিল, বলছিলেন ফেগি অস্ট্রস্কি। হুয়ানা বিশাল চেহারার এক নারী। মাথার চুল ছোট করে কাটা। চুলে লাল রঙ করা।

ড. অস্ট্রস্কি জেলখানায় তার মুখোমুখি হয়ে প্রথমেই জানতে চান খুনটা তিনিই করেছেন কিনা। হুয়ানা উত্তর দেন— হ্যাঁ, আমি একজন বৃদ্ধাকে খুন করেছি।

হুয়ানা কিছুটা হাসতে হাসতে তার পরিবারের কথা বলছিলেন। বলেছিলেন তার মদ্যপ মা কীভাবে তাকে নির্যাতন করতেন, কীভাবে মদের বিনিময়ে তাকে একজন পুরুষের হাতে তুলে দিয়েছিলেন। ওই পুরুষ তাকে অন্তঃসত্ত্বা করেছিলেন।

হুয়ানা বারায্যার বয়স তখন ছিল মাত্র ১৩ বছর। অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পর তাকে মায়ের কাছে ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছিল ওই পুরুষ। নিজের সন্তানের পাশাপাশি ভাইবোনেদেরও দেখাশোনা করতে হতো তাকে।

ড. অস্ট্রস্কিকে হুয়ানা বারায্যা বলেছিলেন, আমি মাকে ঘৃণা করতাম। আমার মা ছিল জঘন্য। এ জন্য তার বয়সি নারী পেলেই মাথায় খুন চাপতো।