দণ্ডিতদের হাজতবাস মোট সাজা থেকে বাদ যাবে

দণ্ডিতদের সাজার মেয়াদ গণনার ক্ষেত্রে হাজতবাস বাদ দিতে ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৫ক এর বিধান যথাযথভাবে প্রতিপালন করতে বলেছেন আপিল বিভাগ।

২৬ বছর ধরে কারাবন্দি যাবজ্জীবন দণ্ডিত এক আসামির লিভ টু আপিল পর্যবেক্ষণসহ খারিজ করে সোমবার (১ নভেম্বর) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৫ক ধারা অনুসারে কোনো আদালত একজন অভিযুক্তকে কোনো অপরাধে দণ্ডিত করেন, সে ক্ষেত্রে ওই আদালত ওই অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তি যতদিন জেল হাজতে থাকবেন, তা কারাদণ্ড হতে বাদ দেবেন। যদি দণ্ডের চেয়ে জেল হাজতের মেয়াদ বেশি হয় তাহলে ওই ব্যক্তি দণ্ড ভোগ করেছেন বলে গণ্য হবে এবং অন্য অপরাধ না থাকলে জেল হাজত থেকে তৎক্ষণাৎ মুক্তি দিতে হবে।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ। আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী গোলাম আব্বাস চৌধুরী দুলাল। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ রায়হান চৌধুরী।

পরে বিশ্বজিৎ দেবনাথ বলেন, একজন আসামি ইউনুছ আলী। ডাবল মার্ডার মামলায় প্রথমে তাকে নিম্ন আদালত মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন। পরে হাইকোর্ট মৃত্যদণ্ড থেকে কমিয়ে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। আজকে ইউনুছ আলীর আইনজীবী আপিল বিভাগে বলেন—এ পর্যন্ত ইউনুছ আলী ২৬ বছর হাজত খেটেছেন। প্রচলিত সিআরপিসির ৩৫ ক ধারায় বলা হয়েছে, বিচারের সময়ে আসামি যতদিন হাজতবাস করবেন, হাজতবাসকালীন এই সময় সাজা থেকে বাদ যাবে। এ ক্ষেত্রে ইউনুছ আলীর রায়ে ৩৫ক ধারা উল্লেখ করা ছিল না। পরবর্তীতে উচ্চ আদালতে আতাউর রহমান মৃধার রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে, ৩৫ক ধারার সুযোগটা যাবজ্জীবন বা অন্যান্য ক্ষেত্রে আসামিরা বরাবর পাবেন। আজ আপিল বিভাগ উল্লেখ করেছেন, ৩৫ক ধারা অনুসারে তিনি যতদিন হাজতে ছিলেন তা বাদ যাবে। জেল কর্তৃপক্ষ এটা হিসাব করে দেখবেন তার শাস্তির মেয়াদ কতদিন আছে। তা দেখে মুক্তি দেবেন।

আইনজীবী গোলাম আব্বাস চৌধুরী দুলাল বলেন, প্রায় ২৬ বছর ধরে ইউনুছ আলী কারাবাসে করছেন। জেলকোড অনুযায়ী যেটার কারাবাস হয় ৩৪ বছরের মতো। যাবজ্জীবন মানে ৩০ বছর ধরে নিলে আমি চার বছর বেশি কারাবাস করছি। আজকে আদালত বলেছেন, সিআরপিসির ৩৫ক ধারা যেন পালন করা হয় সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত সবখানে (কারা কর্তৃপক্ষ, আইন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়) পাঠিয়ে দেওয়া হবে। যাতে করে এটা সবাই যেন মেনে চলে।

তিনি বলেন, এর ফলে আমি বিশ্বাস করি, যারা অনেক দিন ধরে জেল হাজতে আছে তারা এ রায়ের সুবিধা পাবেন। তারা কারগার থেকে বেরিয়ে যেতে পারবেন।

১৯৯৫ সালের জুন মাসে নাটোর সদর উপজেলার চকপাড়ায় হত্যা মামলায় সেনবাগ লক্ষ্মীকোল এলাকার আফছার মন্ডলের ছেলে ইউনুছ আলীসহ দুই জনকে ২০০২ সালের ১৭ নভেম্বর বিচারিক আদালত মৃত্যুদণ্ড দেন। বাকি ৮ জনকে যাবজ্জীবন দণ্ড দেন। আপিলের পর ২০০৫ সালের ২৯ আগস্ট ইউনুছ আলীর মৃত্যুদণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন দেন হাইকোর্ট। এর বিরুদ্ধে চলতি বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল করে ইউনুস আলী। যেটি সোমবার পর্যবেক্ষণসহ খারিজ করে দেন।