বিশ্বকে বাঁচানোর লক্ষ্য নিয়ে শুরু হলো কপ২৬ সম্মেলন

বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি নিয়ে বিজ্ঞানীদের ভয়াবহ হুঁশিয়ারির মধ্যেই রোববার শুরু হয়েছে জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলন কপ২৬। বিশ্বকে বাঁচাতে পরবর্তী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে স্কটিশ শহর গ্লাসগোতে বসেছেন বিশ্ব নেতারা। কোভিড মহামারির কারণে এক বছর বিলম্বে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এবারের সম্মেলনের উদ্দেশ্য হচ্ছে, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি রোধে যে সিদ্ধান্ত এর আগে নেয়া হয়েছিল তা বাস্তবায়নের নানা দিক নিয়ে আলোচনা। বিজ্ঞানীরা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, শিল্প যুগের আগের তুলনায় তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমিত রাখতে হবে। তাহলে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যেসব ভয়াবহ ভবিষ্যতের দিকে বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে তা থেকে অনেকটাই রক্ষা পাওয়া সম্ভব হবে। ২০১৫ সালে প্যারিসে এ বিষয়ে একমত হয়েছিলেন বিশ্বনেতারা। ওই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিল প্রায় ২০০টি দেশ।
তবে তাপমাত্রা বৃদ্ধি ঠেকাতে যেসব ব্যবস্থা গ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ তা কার্যকরে এখনো সফলতা মেলেনি। এবারের সম্মেলনে সেই ব্যর্থতার চিত্র পাল্টে দেয়ার চেষ্টা করবেন বিশ্ব নেতারা। রোববার বাংলাদেশ সময় বিকেল ৪টায় এই সম্মেলন শুরু হয়।

 

আল-জাজিরার খবরে জানানো হয়েছে, বর্তমানে দেশগুলো যে হারে কার্বন নিঃসরণ কমাতে একমত হয়েছে তাতে এ শতাব্দীতেই বিশ্বের তাপমাত্রা ২.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পাবে। জাতিসংঘ বলছে, সমগ্র বিশ্বকে বিপর্যস্ত করতে এই পরিমাণ তাপমাত্রা বৃদ্ধিই যথেষ্ট। এরইমধ্যে বিশ্বজুড়ে এর প্রভাব টের পাওয়া যাচ্ছে। গ্লাসগো থেকে আল-জাজিরার সাংবাদিক নিক ক্লার্ক বলেন, এই সম্মেলন থেকে বড় প্রতিশ্রুতি প্রয়োজন। বিজ্ঞান বলছে আমাদেরকে তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। তাই এখান থেকে শক্তিশালী ঘোষণা আশা করছি আমরা। ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নামিয়ে আনতে হবে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে জীবাশ্ম জ্বালানির বেশীরভাগ ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।

 

বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, বর্তমানে যে হারে পৃথিবী উত্তপ্ত হয়ে উঠছে গত সোয়া এক লাখ বছরে তা দেখা যায়নি। পৃথিবীতে সূর্যের তাপকে আটকে রাখে গ্রিনহাউজ গ্যাস। মানুষের কর্মকাণ্ড থেকে এসব গ্যাস উৎপন্ন হয়, যা তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য দায়ী। জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো এবং গাছপালা কেটে ফেলার কারণে গ্রিনহাউজ গ্যাসের নির্গমন ঘটে। পৃথিবী ইতোমধ্যে যে মাত্রায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে তার ফলে আমাদের চারপাশে অনেক বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। এরইমধ্যে গ্রিনল্যান্ড এবং এন্টার্কটিকায় বরফের স্তর দ্রুত গলে যাওয়া শুরু হয়েছে। গত ৫০ বছরে আবহাওয়া-জনিত দুর্যোগের সংখ্যা পাঁচগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। গত শতাব্দীতে সারা বিশ্বে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ৮ ইঞ্চি বেড়ে গেছে এবং এখনও বেড়েই চলেছে। আবার ১৮০০ সালের তুলনায় বর্তমানে সমুদ্রের পানিতে এ্যাসিডের মাত্রা ৪০% বেড়েছে।