সিনহা হত্যা মামলা: আসামিরা স্বেচ্ছায় জবানবন্দি দিয়েছেন

কায়সার হামিদ মানিক,উখিয়া।
কক্সবাজারের টেকনাফে আলোচিত মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলার ষষ্ঠ ধাপের শেষ দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে।
বুধবার (২৭ অক্টোবর) সকালে কক্সবাজারের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম তামান্না ফারাহর সাক্ষ্যগ্রহণের মধ্যদিয়ে বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়।
এ সময় আসামি পক্ষের আইনজীবীরা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না ফারাহর উদ্দেশ্যে বলেন, ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি জোর করে নেওয়া হয়েছে। তার জবাবে ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না ফারাহ বলেন, যারা জবানবন্দি দিয়েছেন তারা স্বেচ্ছায় দিয়েছেন। রিমান্ড শেষে আসামিদের স্বাস্থ্য পরীক্ষাসহ নানা ডকুমেন্টের ওপর ভিত্তি করে তাদের জবানবন্দি নেওয়া হয়। এছাড়া তাদের প্রত্যেককে তিন ঘণ্টা করে সময় দেওয়া হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বাদী পক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ মোস্তফা বলেন, জেরা করার সময় আসামিদের জোর করে জবানবন্দি নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না ফারাহ তা উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, যারা জবানবন্দি দিয়েছে তারা স্বেচ্ছায় দিয়েছেন।
এ মামলায় এক থেকে ষষ্ঠ ধাপে ৫৭ জন সাক্ষী তাদের সাক্ষ্য দিয়েছেন। বুধবার ছিল ৫৮তম সাক্ষী সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না ফারাহর সাক্ষ্যগ্রহণ। এছাড়াও সাক্ষী হিসেবে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দেলোয়ার হোসেন শামীমকে উপস্থাপন করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান। তার সঙ্গে থাকা সাহেদুল ইসলাম সিফাতকে পুলিশ আটক করে। এরপর সিনহা যেখানে ছিলেন সেই নীলিমা রিসোর্টে ঢুকে তার ভিডিও দলের দুই সদস্য শিপ্রা দেবনাথ ও তাহসিন রিফাত নুরকে আটক করা হয়। পরে তাহসিনকে ছেড়ে দিলেও শিপ্রা ও সিফাতকে গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। এই দুজন পরে জামিনে মুক্তি পান।
সিনহা হত্যার ঘটনায় চারটি মামলা হয়েছে। ঘটনার পরপরই পুলিশ বাদী হয়ে তিনটি মামলা করে। এর মধ্যে দুটি মামলা হয় টেকনাফ থানায়, একটি রামু থানায়। ঘটনার পাঁচ দিন পর অর্থাৎ ৫ আগস্ট কক্সবাজার আদালতে টেকনাফ থানার বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ ৯ পুলিশের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস। চারটি মামলা তদন্তের দায়িত্ব পায় র‍্যাব।
২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা ও র‍্যাব-১৫ কক্সবাজারের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. খাইরুল ইসলাম।
আসামিদের মধ্যে পুলিশের ৯ জন সদস্য রয়েছেন। তারা হলেন- বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, পরিদর্শক লিয়াকত আলী, কনস্টেবল রুবেল শর্মা, এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাফানুল করিম, কামাল হোসেন, আব্দুল্লাহ আল মামুন, এএসআই লিটন মিয়া ও কনস্টেবল সাগর দেব নাথ।
অপর আসামিরা হলেন- আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) সদস্য এসআই মো. শাহজাহান, কনস্টেবল মো. রাজিব ও মো. আব্দুল্লাহ এবং টেকনাফের বাহারছড়ার মারিষবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা ও পুলিশের করা মামলার সাক্ষী নুরুল আমিন, মো. নিজাম উদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন।
গ্রেফতার হওয়া আসামিদের মধ্যে ১২ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তবে ওসি প্রদীপ ও কনস্টেবল রুবেল শর্মা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেননি। এর আগে আসামিদের তিন দফায় ১২-১৫ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছিল।