‘তথ্য অধিকার আইন সাংবাদিকদের জন্য নয়’

সাংবাদিকদের গুণগত মানসম্পন্ন প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য অধিকার আইনের উপর নির্ভরতা কমানোর পরামর্শ দিয়েছেন প্রধান তথ্য কমিশনার অধ্যাপক গোলাম রহমান।

মঙ্গলবার রাজধানীতে এক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি বলেন, “সাংবাদিকদের জন্যে তথ্য অধিকার আইনই একমাত্র সোর্স নয়। শুধুমাত্র তথ্য প্রকাশ করে সাংবাদিকরা যেসব বিপদে পড়েন, তা থেকে সুরক্ষা ও নিরাপত্তা প্রদানের দলিল হিসেবেই এ আইনের প্রয়োজন।”

“আইনটি সাংবাদিকদের জন্যে নয়, এটি দেশের ১৬ কোটি মানুষের জন্যে।”

রাজধানীর ডেইলি স্টার ভবনের আজিমুর রহমান কনফারেন্স হলে আয়োজিত এই গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে ম্যানেজম্যান্ট অ্যান্ড রিসোর্সেস ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ (এমআরডিআই)।

‘স্বাধীন ও মানসম্মত প্রতিবেদন তৈরিতে বাংলাদেশের গণমাধ্যম কীভাবে তথ্য অধিকার আইন ব্যবহার করছে’ শীর্ষক গবেষণা থেকে প্রাপ্ত তথ্যের মূল্যায়ন অনুষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও গেট কিপাররা উপস্থিত ছিলেন।

গোলটেবিল বৈঠকে গণমাধ্যমের সাংবাদিক ও গেট কিপারদের তথ্য অধিকার আইন প্রণয়ন ও সংশোধন সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে প্রধান তথ্য কমিশনার বলেন, আইন হিসেবে তথ্য অধিকার আইন অনেক বড় আইন। আইনটি আমাদের সামাজ থেকে অনেক অগ্রসর।

“এই আইন প্রণয়নের মতো অবস্থা বাংলাদেশে আছে কিনা তা এখনও প্রশ্নবিদ্ধ। আইনের গভীরতা ও প্রগাড়তা উপলব্ধি করে সঠিকভাবে ব্যবহারের জন্য সকল মহল ও পর্যায়ে উদ্যোগ নেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।”

তথ্য অধিকার আইনের প্রণয়নে প্রধান প্রতিবন্ধকতা হিসেবে এই আইন সম্পর্কে দেশের জনগণের অজ্ঞতাকে দায়ী করেন গোলাম রহমান।

“২০০৯ সালে তথ্য অধিকার আইন প্রণয়ন হলেও, আজ সাত বছর পর এই আইন সম্পর্কে মানুষের কতটুকু ধারণা আছে?”, প্রশ্ন তার।

আলোচনা অনুষ্ঠানে তথ্য অধিকার আইন প্রণয়ন এবং আইনটি নিয়ে জনসচেতনতা বাড়াতে তথ্য কমিশনের হাতে নেওয়া নানা পদক্ষেপ তুলে ধরে তথ্য কমিশনার।

তিনি বলেন, “সকল মন্ত্রণালয়ের জন্য তথ্য উন্মুক্তকরণ নীতি আমরা দিয়েছি। এছাড়াও সাংবাদিকদের প্রশিক্ষণের জন্য সরকারি কর্মকর্তাদের তথ্য অধিকার আইন বিষয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা তথ্য কমিশন করেছে।

“দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের জেলা ও উপজেলাভিত্তিক প্রশিক্ষণ দিচ্ছি, আইন সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়াতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা যুবসমাজকে জানাচ্ছি। সব মহল ও সব সেক্টরকে জড়িত করার দরকার আছে।”

তথ্য কমিশনকে সম্পূর্ণ স্বাধীন ও সরকারি হস্তক্ষেপ মুক্ত দাবি করে গোলাম রহমান বলেন, “তথ্য কমিশন একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান। কেউ যখন এখানে অভিযোগ করে, আমরা সবাইকে সমানভাবে ব্যবহার করি এবং আমাদের আধা বিচারিক কর্মকাণ্ড সম্পন্ন করি।”

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে নিযুক্ত সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত ক্রিশ্চিয়ান মার্টিন ফচ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গণযোগাযোগ ও সাংবাদিক বিভাগের চেয়ারপারসন অধ্যাপক মফিজুর রহমান, এমআরডিআই-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাসিবুর রহমান ছাড়াও বিভিন্ন গণমাধ্যমের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।