ডিজিটাল পদ্ধতিতে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ ব্যবস্থার উদ্বোধন

দেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাকে গতিশীল করতে ডিজিটাল পদ্ধতিতে উন্নততর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়-এর আয়োজনে ২৫ অক্টোবর ২০২১ সোমবার রাজধানীর পান্থপথে অবস্থিত পানি ভবনে ভার্চুয়াল ও ভৌত কাঠামোর সংমিশ্রণে ‘ডিজিটাল পদ্ধতিতে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ ব্যবস্থা’- এর উদ্বোধন ঘোষণা করা হয়। উদ্বোধন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়ে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী জনাব জাহিদ ফারুক, এমপি উক্ত ডিজিটাল পদ্ধতির উদ্বোধন করেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী জনাব জুনাইদ আহ্‌মেদ পলক, এমপি, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপমন্ত্রী জনাব এ কে এম এনামুল হক শামীম, এমপি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব জনাব মোঃ মোহসীন, এবং বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি-এর মহাসচিব জনাব মোঃ ফিরোজ সালাহ্ উদ্দিন উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জনাব কবির বিন আনোয়ার।

 

পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়-এর নেতৃত্বে এতে সহায়তা করছে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবো), এটুআই, আন্তর্জাতিক প্রযুক্তি বিষয়ক সংস্থা গুগল, বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি এবং ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব রেড ক্রস অ্যান্ড রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিজ।

 

প্রধান অতিথির বক্তব্যে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী জনাব জাহিদ ফারুক, এমপি, বলেন, “পরিবর্তনশীল আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে ডিজিটাল বাংলাদেশে দুর্যোগের আগে ও পরে মানুষকে সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবো), এটুআই ও আন্তর্জাতিক প্রযুক্তি বিষয়ক সংস্থা গুগল এর সহায়তায় উন্নত ব্যবস্থা তৈরি করা হয়েছে। এ কার্যক্রমের আওতায় বাপাউবো’র বিদ্যমান ৫-দিনের আগাম বন্যা পূর্বাভাস উপাত্তকে প্রক্রিয়াকরণ করে উন্নততর প্লাবন মানচিত্রের সাহায্যে বন্যা শুরু হওয়ার তিন দিন থেকে তিন ঘণ্টা সময় পূর্বে স্থানীয় জনগোষ্ঠী পর্যায়ে তাৎক্ষণিকভিত্তিতে ইন্টারনেট প্রযুক্তির মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে।” মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দুর্যোগ মোকাবেলায় বিশ্বে বাংলাদেশ এখন রোল মডেল উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, সম্প্রতি তিস্তার পানি বেড়ে গেলে ডিজিটাল ব্যবস্থায় তিন হাজার স্থানীয় মানুষকে পূর্বাভাস মেসেজ দিয়েছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সময়োপযোগী পদক্ষেপে দুর্যোগ মোকাবেলা করেও বাংলাদেশে অর্থনৈতিক উন্নয়ন গতিশীল রেখেছে।

 

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী জনাব জুনাইদ আহ্‌মেদ পলক, এমপি, বলেন, পৃথিবীর বৃহত্তম ব-দ্বীপ বাংলাদেশের তিন শতাধিক নদী অববাহিকার ৭১ শতাংশ প্লাবন ভূমি রয়েছে। আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করে বর্ষা মৌসুমে বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে সৃষ্ট বন্যার পূর্বাভাস দিতে পারলে প্রাণ এবং সম্পদের নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব। আমরা গত ১২ বছরে একটা দরিদ্র রাষ্ট্রকে প্রযুক্তি নির্ভর ডিজিটাল বাংলাদেশে রূপান্তরিত করতে পেরেছি। বন্যার উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ বাংলাদেশে ডিজিটাল পদ্ধতিতে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ ব্যবস্থার মাধ্যমে বন্যা ও দুর্যোগ প্রশমন এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমানো সম্ভব হবে। ২০২০ সালে পরীক্ষামূলকভাবে অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদেরকে ‘পুশ নোটিফিকেশন’-এর মাধ্যমে পূর্বাভাস প্রদান শুরু করা হয়েছিল। ২০২০ সালে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা ও পদ্মা নদী তীরবর্তী ১৪টি জেলার ৩৮টি উপজেলায় এই কার্যক্রমটি পরীক্ষামূলকভাবে শুরু করা হয়। ২০২০ সালে ৩ লক্ষ অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোন এর মাধ্যমে ১০ লক্ষ স্মার্ট নোটিফিকেশন পাঠিয়ে বন্যা কবলিত এলাকার জনগণকে সেবা প্রদান করা হয়। এর সফলতার ভিত্তিতে দেশজুড়ে ডিজিটাল পদ্ধতিতে বন্যার পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ ব্যবস্থা বাস্তবায়নের এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।”

 

পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপমন্ত্রী জনাব এ কে এম এনামুল হক শামীম, এমপি, বলেন, বাংলাদেশ আজ সবদিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সক্ষমতা বেড়েছে ও স্থায়ী প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। প্রযু্ক্তিগতভাবে আমরা এমন উচ্চতায় পৌঁছে গেছি যার ফলে আজকে নির্দিষ্ট জায়গার নির্ধারিত সময়ে আবহাওয়া কেমন থাকবে তার সঠিক পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। আজকে ডিজিটাল পদ্ধতিতে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ ব্যবস্থার প্রণয়নের মাধ্যমে সেটা আরো অত্যাধুনিক হলো।

 

সভাপতির বক্তব্যে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জনাব কবির বিন আনোয়ার বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশে আজকে আমরা এক গুরুত্বপূর্ণ ধাপ অতিক্রম করতে সক্ষম হয়েছি। মাত্র তিনদিন আগে আমাদের তিস্তা ব্যারেজের ওই পাড়ে হঠাৎ বৃষ্টিপাতের কারণে কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে মারাত্মক বন্যার সৃষ্টি হয়। যার ফলে নীলফামারী, লালমনিরহাট ও গাইবান্ধা জেলার প্রায় ৬টি উপজেলা প্লাবিত হয়। হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়ে। আমরা আগেই গুগলের আগাম বার্তা পেয়েছিলাম এবং ৯ ঘণ্টায় তিস্তা ব্যারেজের তীরবর্তী ঝুঁকিপূর্ণ মানুষকে সরিয়ে ফেলতে পেরেছিলাম। আজকে উদ্বোধন হওয়া উন্নততর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ ব্যবস্থা সঠিক সময়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছে দিয়ে বাংলাদেশকে বর্তমান একবিংশ শতাব্দিতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার রোল মডেল হিসেবে তুলে ধরা সম্ভব হবে। সারাদেশের জন্য সমন্বিত ডিজিটাল পূর্বাভাস ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণের বিষয়েও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

 

উল্লেখ্য, তৃতীয় বিশ্বের একটি বন্যা ও দুর্যোগপ্রবণ দেশ হিসেবে বাংলাদেশ উন্নততর বন্যা ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ইতোমধ্যেই বিশ্বমহলে প্রশংসিত হয়েছে। গুগল ম্যাপ এবং আর্থ এর মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট স্থানের বন্যা সতর্কতার ভিত্তিতে প্লাবনের দৃশ্যপট নিয়মিত হালনাগাদ করা হচ্ছে। সেইসাথে প্রান্তিক জনসাধারণের কাছে সঠিক সময়ে সঠিকভাবে পৌঁছাতে এসএমএস পদ্ধতিতে পূর্বাভাস প্রেরণের বিষয়টি মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটরদের সাথে চলমান রয়েছে। অতিসত্ত্বর মোবাইল এসএমএস- এর মাধ্যমে সাধারণ জনগণের কাছে তথ্য প্রেরণ সম্ভব হবে। উন্নততর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ ব্যবস্থা সঠিক সময়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছে দিয়ে বাংলাদেশকে বর্তমান একবিংশ শতাব্দিতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার রোল মডেল হিসেবে তুলে ধরবে পৃথিবীর উন্নয়নশীল ও উন্নত রাষ্ট্রের কাছে।

 

পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মাহমুদুল হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে এটুআই-এর পলিসি অ্যাডভাইজর জনাব আনীর চৌধুরী এবং গুগল এর ভাইস প্রেসিডেন্ট জনাব ইয়ুসি মাতিয়াছ আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য প্রদান করেন। এতে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক জনাব ফজলুর রশিদ। এছাড়া অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবো), এটুআই, আন্তর্জাতিক প্রযুক্তি বিষয়ক সংস্থা গুগল, বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি এবং ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব রেড ক্রস অ্যান্ড রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিজ এর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ ও গণমাধ্যম কর্মীগণ উপস্থিত ছিলেন।