এই শহর যদি হয় মানবদেহ, সিআরবি হচ্ছে তার প্রাণ

সিআরবি’র প্রাণ-প্রকৃতি ধ্বংস করে হাসপাতাল নির্মাণ প্রকল্পের বিরুদ্ধে চলমান আন্দোলনে বুধবার (৬ অক্টোবর) বিকালে কবিগানের আসর বসে সিআরবি সাত রাস্তার মোড়ে । সিআরবি রক্ষায় নাগরিক সমাজ চট্টগ্রামের ধারাবাহিক আন্দোলনের অংশ হিসেবে “কবির লড়াই” অনুষ্ঠিত হয়।

কবিগানের আসরে গান পরিবেশন করেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন কবিয়াল কল্পতরু ভট্টাচার্য ও তার দল। এসময় কবি তার গানের মাধ্যমে সিআরবিতে হাসপাতাল তৈরি না করতে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। নগরীর ফুসফুস সিআরবি রক্ষা করার দাবি তুলে তিনি বলেন, এই শহর যদি হয় মানবদেহ, সিআরবি হচ্ছে তার প্রাণ।

কবিগানের পাশাপাশি কথামালায় অংশ নেন নাগরিক সমাজ, চট্টগ্রামের কো-চেয়ারম্যান মুক্তিযুদ্ধ বিজয় মেলা কমিটির মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইউনুস,দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাগরিক সমাজ চট্টগ্রামের কো-চেয়ারম্যান মফিজুর রহমান, কবি সাংবাদিক কামরুল হাসান বাদল, পরিবেশবিদ ড. ইদ্রিস আলী, কবি অধ্যাপক হোসাইন কবির, জাসদ নেতা জসিম উদ্দিন বাবুল, বিজয় একাত্তরের সভাপতি সজল চৌধুরী, বেলায়েত হোসেন, কোহেল,কবি মুছা চৌধুরী,মোরশেদুল আলম, ঋত্বিক নয়ন, প্রনব চৌধুরী, মোস্তাক আহমেদ, শিবু প্রসাদ চৌধুরী, আওয়ামী লীগ নেতা সাবের আহমেদ, সৈয়দ নাফিজ উদ্দিন, লেখক দিলরুবা খানম, মোহাম্মদ হাসনাত চৌধুরী,কবি মিনু মিত্র, আবৃত্তি শিল্পী বিপ্লব কুমার সেন,তাপস দে, চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি মাহামুদুর করিম, শফিউল আলম জিপু, মহসিন কলেজ ছাত্রলীগ নেতা মাইমুন উদ্দিন মামুন, বনবিহারী চক্রবর্তী, সাজ্জাদ হোসেন জাফর, আব্দুল মজিদ বিপ্লব, দিদারুল ইসলাম মুরাদ, অনির্বাণ দত্ত, জায়েদিদ, তৈয়বা জহির আরশি, নুরুল আজিম, যুবরাজ দাশ প্রমুখ। সঞ্চালনা করেন কৃষক লীগ নেতা হুমায়ুন কবির মাসুদ। কবি গানে সংগত ছিলেন বনতোষ নম, আপন নম, বিকাশ চৌধুরী নারায়ণ দাশ।

বক্তারা বলেন, সিআরবি চট্টগ্রামের ইতিহাস-ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মিত হলে পরিবেশ দূষণ ঘটবে এবং পুরো সিআরবি এলাকাটির প্রাকৃতিক পরিবেশ ও সাংস্কৃতিক বলয় হুমকির মুখে পড়বে। মানুষের চেতনা, নতুন প্রজন্মের দৃষ্টিভঙ্গি উপেক্ষা করে, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নষ্ট করে কোনো উন্নয়ন হতে পারে না। সিআরবি রক্ষা করতে হবে চট্টগ্রামের স্বার্থে।

২০০৮ সালের ডিটেইল এরিয়া প্ল্যানে (ড্যাপ) সিআরবিকে কালচার অ্যান্ড হেরিটেজ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এটি সংরক্ষণের জন্য আটটি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। সিআরবিতে বাণিজ্যিক কোনো স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না এবং নির্দেশনা বাস্তবায়নের দায়িত্ব রেলওয়ে ও সিডিএ সহ সংশ্লিষ্ট সংস্থার বলে ড্যাপ এ উল্লেখ আছে। অথচ এই রেলের কিছু অসাধু কর্মকর্তা প্রতারণার মাধ্যমে সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পিপিপি’তে চট্টগ্রামে যে হাসপাতাল নির্মাণের প্রকল্পটি নেয়া হয়, তখন প্রকল্প স্থান হিসেবে সিআরবি’র কথা উল্লেখ ছিল না। এ প্রকল্পের জন্য ২০১৭ সালের ২০ ডিসেম্বর ইনভাইটেশন ফর বিড (আইএফবি) নোটিসে যে তফসিল দেওয়া হয়, সিআরবির কথা উল্লেখ ছিল না। প্রস্তাবিত হাসপাতালটি রেলওয়ের কোনো এক স্থানে নির্মাণ করা হবে বলে আইএফবিতে বলা হয়েছিল। পরে প্রতারণার মাধ্যমে হাসপাতাল নির্মাণের স্থান হিসেবে সিআরবিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কোনভাবেই সিআরবিতে হাসপাতাল হতে পারে না। প্রস্তাবিত হাসপাতালটি সিআরবির পরিবর্তে চট্টগ্রামে রেলের অন্য কোনো জায়গায় স্থানান্তরের দাবি জানান বক্তারা।