সৌদি আরবে যেমন রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার বাস করে না, তেমনি বাংলাদেশেও পাওয়া যায় না ক্যাঙ্গারু। দানিউব নদীতে নেই ইলিশ মাছ, আইসল্যান্ডের গাছে দোয়েল গান গায় না। কিন্তু এসব দেশেই মানুষ আছে। সারা পৃথিবীর প্রাণী একমাত্র মানুষ। আর সব প্রাণী ভৌগোলিক অঞ্চল ও পরিবেশে সীমাবদ্ধ। মানুষ সুদান ও আলাস্কা উভয় এলাকার তাপমাত্রায় ও পরিবেশে বসবাস করে। আজ থেকে কয়েক লাখ বছর আগের মানুষরা এক অঞ্চল থেকে আরেক অঞ্চলে যেয়ে যেয়েই পৃথিবীময় ছড়িয়ে পড়েছে। এখন পর্যন্ত জানা প্রমাণের ভিত্তিতে বৈজ্ঞানিক তথ্যমতে, আধুনিক মানুষ প্রজাতি মধ্য আফ্রিকা থেকে এশিয়া, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া পর্যন্ত গেছে। সেটা হাজার হাজার বছর ধরে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে ঢেউয়ের মতো দফায় দফায় ঘটেছে। কাজেই এখন আমরা ্’আদিবাসী’ চিহ্নিত করার যত আইন ও সংজ্ঞা নিয়েই অনুশীলন করি না কেন, কেউ কোথাও প্রকৃত আদিবাসী নয়। সময়ের হিসাব করে তুলনামূলক আদিবাসী কোনো কোনো মানবগোষ্ঠীকে বলা যেতে পারে। সংগ্রাহক ও শিকারি থাকাকালে মানুষ এক জায়গায় বসবাসই করত না। কৃষি আবিষ্কারের পর থেকে বন্যাবিধৌত নদীতীরগুলোতে বসবাস ও সভ্যতা শুরু হয়। মানবজাতির বাসস্থান প্রকৃতপক্ষে পৃথিবী নামক গ্রহটা। সভ্যতার একটি স্তরে রাষ্ট্র, জাতি, নাগরিকত্ব, পাসপোর্ট-ভিসা, জাতিসংঘ ইত্যাদি হয়েছে, চলছে। পরবর্তী স্তরে যাওয়ার আগে পর্যন্ত চলবে। সভ্যতার ইতিহাসেই অসংখ্য যুদ্ধসহ দু’দুটি মহাযুদ্ধ হয়ে গেছে। এখনও বিভিন্ন দেশে যুদ্ধ চলছে। আমরা মঙ্গল গ্রহে যাওয়ার সক্ষমতা ও তথ্যপ্রযুক্তির সভ্যতার অংশীদার হয়েও জাত-পাত, আদি-অনাদি, অভিবাসী, শরণার্থী ইত্যাদি নিয়ে কতই না হাঙ্গামা করছি।
২.
কে কোথায় আদিবাসী? এখন মিয়ানমারের সরকার বলছে, রোহিঙ্গারা সে দেশের ১৩৫টি জাতিসত্তার অন্তর্ভুক্ত নয়। রোহিঙ্গারা ২০১০ সালেও ভোট দিয়েছে, ২০১৫-এর ভোটের আগে বলা হলো ১৯৮২ সালের সাংবিধানিক আইনে তারা নাগরিক নয়, ভোট দিতে পারবে না। ৫০ বছর ধরে যে সেনাশাসকরা ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রেখেছিল তারা বৃহত্তম বামার জাতি এবং থেরাবদা বৌদ্ধ ধর্মকে একাকার করে জাত্যভিমানের চর্চা করেছে। কারেন, শান প্রভৃতি আঞ্চলিক ও সংখ্যালঘু কয়েকটি জাতি সশস্ত্র বিদ্রোহ চালিয়েই যাচ্ছে। রোহিঙ্গাদের নামে এমনি একটি আন্দোলন হালের ঘটনা। ১৯৯০ সালে এই সশস্ত্র গ্রুপের উদ্ভব। তারা আরাকানি (রাখাইন) মুসলিম হিসেবে স্বাতন্ত্র্য দাবি করে। এই আন্দোলনকারীরা রোহিঙ্গাদের বহিরাগত বলে মিয়ানমার সরকারের দাবি মেনে নেয় না। কাজেই মিয়ানমার সরকার কারেন, শান প্রভৃতি বিদ্রোহ যেভাবে মোকাবেলা করছে, রোহিঙ্গা বিদ্রোহ ঘটে থাকলে সেটাও তাদেরই সমস্যা। কিন্তু সরকার ও সেনাবাহিনী পুরো রোহিঙ্গা মুসলিম নিরস্ত্র সাধারণ জনগোষ্ঠীকে বহিরাগত অনাগরিক বলে নিধন ও বিতাড়ন চালালে এ সমস্যার সমাধান হবে না। যা করা হচ্ছে তা মানবাধিকার লঙ্ঘন ও প্রতিবেশী দেশগুলোকে অস্থির করে তোলা।
এখন যারা রোহিঙ্গা বলে চিহ্নিত তারা ১৫শ শতাব্দী থেকে ওই দেশে বসবাস করছে। আরাকানে মুসলমান রাজারা ছিলেন ৩৫০ বছর। ১৮২৬ সালে প্রথম ইন্দো-বার্মিজ যুদ্ধে ব্রিটিশরা আরাকান তাদের ভারতীয় উপনিবেশে সংযুক্ত করে এবং তারপর চট্টগ্রাম এলাকা থেকে কিছু লোক নেয় কৃষি খামারের শ্রমিক হিসেবে। এখন মিয়ানমার সরকার ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটাই নিষিদ্ধ করেছে এবং রোহিঙ্গাদের বাদ দিয়ে মিয়ানমারের নতুন ইতিহাস লেখার প্রকল্প নিয়েছে। অথচ অষ্টাদশ শতকে আরাকানি মুসলিমদের ভাষা সম্পর্কিত আলোচনায় ‘রুইঙ্গা’ শব্দ পাওয়া যায়। ১৯৪৮ সালে বর্তমান স্বাধীন ইউনিয়ন অব বার্মা (এখন মিয়ানমার) রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কয়েকশ’ বছর আগে থেকে কয়েক প্রজন্ম স্থায়ীভাবে বাস করেও রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের জনগোষ্ঠী নয়? যাকে রেকর্ডেড হিস্ট্রি বা লিখিত ইতিহাস বলে সে অনুযায়ী ১৩ হাজার বছর আগে টিবেটো-বার্মিজ জনগোষ্ঠীর প্রমাণ বর্তমান মিয়ানমারে পাওয়া যায়, যারা পায়া এলাকায় রাজ্য গড়েছিল। আর এখনকার বৃহত্তম ‘বামার’ জাতি কেবল নবম শতাব্দীতে ইরাওয়াদ্দি নদী অঞ্চলে প্রবেশ করে ও উন্নততর রাজ্য বাগান গড়ে তোলে। ত্রয়োদশ শতাব্দীতে মঙ্গল আক্রমণের পরে আরও অনুপ্রবেশ ঘটে এবং একাধিক রাজ্য তৈরি হয়। এরা কি বহিরাগত নয়? বামাররাসহ মিয়ানমারের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের আচরিত ও রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতাপ্রাপ্ত বৌদ্ধ ধর্ম কি মিয়ানমারের স্থানীয়? এ ধর্ম ভারত থেকে যায়নি? ইতিহাসের আলোকে ‘বহিরাগত’ শব্দটিও আপেক্ষিক। আর আধুনিক ‘মানবাধিকার’ ধারণাটি সর্বজনীন, জাতি-ধর্ম-নাগরিকত্ব নির্বিশেষে সকল মানুষের জন্য প্রযোজ্য। বিভিন্ন রাষ্ট্রের নিজস্ব আইন আছে, ভিন্ন ভিন্ন ক্ষেত্রে ‘অধিকার’ সংজ্ঞায়িত আছে; কিন্তু মানবাধিকার সকল রাষ্ট্রের জন্যই মান্য।
আজ যারা আমেরিকা মহাদেশের ‘শ্বেতাঙ্গ’ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শ্বেতাঙ্গ জাত্যভিমানের সস্তা জনপ্রিয়তার রাজনীতি করছেন, সেই শ্বেতাঙ্গরা তো আমেরিকান নয়, তারা ইউরোপ থেকে গেছে। তৎকালে আমেরিকায় বসবাসকারী রেড ইন্ডিয়ানদের মেরে-কেটে নির্বংশ করে বসত করেছে। আবার আফ্রিকা থেকে কৃষ্ণাঙ্গদের ধরে জাহাজ ভর্তি করে নিয়ে আমেরিকায় দাস হিসেবে কাজ করিয়েছে। সেই দাসদের কায়িক শ্রমেই আজকের আমেরিকার উত্তুঙ্গ সভ্যতা মাথা তুলেছে। বর্তমান আমেরিকা অভিবাসীদের দেশ। সারা দুনিয়ার বহু জাতির মানুষ অভিবাসী হয়ে ও-দেশ নির্মাণ করেছে, অর্থনীতির চাকা ঘুরাচ্ছে। যার নিজের পূর্বপুরুষ জার্মানি থেকে এসেছেন সেই ডোনাল্ড ট্রাম্প এখন ‘আমেরিকান শ্বেতাঙ্গ’ আর অন্য সবাই বহিরাগত। সংকীর্ণ স্বার্থের রাজনীতি এমন আজগুবি প্রহসনেরই জন্ম দেয়।
৩.
দেশে-দেশে অর্থনৈতিক বৈষম্যের কারণে, নিজ দেশে জীবিকার অভাবে অথবা উন্নততর জীবনযাপনের লক্ষ্যে অভিবাসন বা এক দেশ থেকে আরেক দেশে গিয়ে থাকতে চাওয়া আধুনিক বিশ্বের নিয়ত সাধারণ ঘটনা। আইনি অভিবাসনের গতি ধীর। জীবিকার তাগিদে গরিব ও দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া মানুষ মরিয়া হয়ে নৌকায় ভেসে ইউরোপ, আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়ায় উন্নত দেশে যাওয়ার চেষ্টা করছে। এ জন্য দালালদের অবৈধ ব্যবসা ও প্রতারণার নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশ ও বার্মা থেকে এভাবে মালয়েশিয়া ও অস্ট্রেলিয়া পর্যন্ত যাওয়ার এ রকম চেষ্টার ভয়াবহ ট্র্যাজেডি গত বছর উন্মোচিত হলো থাইল্যান্ডের জঙ্গলে বন্দিশিবির ও গণকবর আবিষ্কারের মাধ্যমে।
কয়েক বছর ধরে যুদ্ধের ভয়াবহতা থেকে আত্মরক্ষার জন্য ইরাক, সিরিয়া, লিবিয়া প্রভৃতি মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার দেশগুলো থেকে হাজার হাজার মানুষ সমুদ্র পেরিয়ে ইউরোপের উপকূলে ওঠার চেষ্টা করছে। ডুবে মরছে। ইউরোপীয় দেশগুলো বাধা দিয়েছে আবার নিজেরা শলাপরামর্শ করে আইনি কাঠামো অনুযায়ী কিছু কিছু অভিবাসী গ্রহণ করছে।
অভিবাসন বঞ্চিত মানুষকে সাহায্য করে আবার গ্রহণকারী দেশের অর্থনৈতিক চাকা সচল রাখতেও প্রয়োজন। উন্নত দেশগুলো প্রয়োজনমতো বিদেশি শ্রমিক নিয়োগ ও স্থায়ী অভিবাসনকে উৎসাহিতও করে। জনশক্তি রফতানি ও অভিবাসন প্রক্রিয়ায় অবৈধ ও নিষ্ঠুর বাণিজ্য ঢুকে পড়ায় এই খাতে অনেক অনিয়ম ও মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। এই বিষয়টিকে সুশৃঙ্খল ও সুগম করার জন্য চেষ্টা-চরিত্র চলছে। জাতিসংঘের সংস্থা ‘ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অব মাইগ্রেশন’ (আইএমও) ও ‘ইউএন ডিপার্টমেন্ট অব ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল অ্যাফেয়ার্স’ সমন্বয়ের কাজে সংশ্লিষ্ট থাকলেও কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি হয়নি। উচ্চ পর্যায়ের একটি আন্তঃরাষ্ট্র বেসরকারি সংস্থা ‘গ্গ্নোবাল ফোরাম অন মাইগ্রেশন অ্যান্ড ডেভেলপন্ট’ (জিএফএমডি) তাদের নবম শীর্ষ সম্মেলন করেছে ঢাকায় গত ১০-১২ ডিসেম্বর। সেখানে অভিবাসন প্রক্রিয়াকে সহজ, সুচারু করা ও বিভিন্ন দেশের উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গতি স্থাপন এবং অভিবাসীদের মানবাধিকার রক্ষার জন্য একটি আন্তর্জাতিক কাঠামো কনভেনশন তৈরির কথা বলা হয়। এর অগ্রগতি দেখার জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।
এই সম্মেলনে প্রসঙ্গত রোহিঙ্গা সমস্যাটি নজরে আনা হয়। মিয়ানমারে অত্যাচারের কারণে অক্টোবর থেকেই আবার দলে দলে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে প্রবেশ করছে।
অভিবাসী ও শরণার্থীর মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য। অভিবাসী স্বেচ্ছায়, পরিকল্পনা করে, খোঁজখবর নিয়ে, নিজের দেশে সম্পদ সুরক্তি রেখে, আসা-যাওয়ার অধিকারসহ অর্থনৈতিক কারণে তথা উন্নত জীবনের জন্য বিদেশে পাড়ি জমায়। আর শরণার্থী বাধ্য হয়ে জীবন বাঁচাতে গন্তব্য লক্ষ্যের পছন্দ ছাড়াই পালিয়ে অন্য দেশে যায়। এ ছাড়া স্বেচ্ছায় রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী ও রাজনৈতিক শরণার্থী প্রভৃতিও বিভিন্ন দেশের আইনে সুবিধা পান, যা আমাদের আলোচ্য নয়।
৪.
এশিয়ার দেশগুলো থেকে বহু লোক দুস্তর সমুদ্র পেরিয়ে অস্ট্রেলিয়ার উপকূলে গিয়ে ওঠে। এ রকম মানুষ অনেকেই অভিবাসী হয়েছে। এ রকম ১৬ জন বাংলাদেশি যুবক অস্ট্রেলিয়ার কিলকয় নামক গ্রামে তিন বছর খামারে কাজ করার পর কর্তৃপক্ষ তাদের অবৈধ বলে বের করে দিতে চাইলে চলতি বছর জানুয়ারিতে স্থানীয় জনগণ দাবি জানিয়ে তাদের বৈধ করার ব্যবস্থা করে। এই যুবকরা কাজ দিয়ে স্থানীয় মানুষের মন জয় করেছে। অস্ট্রেলিয়া সরকার ক্রমশ সাগরভাসা মানুষদের প্রতি নির্দয় হচ্ছে।
গত ২০ ডিসেম্বর নিউইয়র্ক টাইমসের কলামিস্ট রজার কোহেন এক ‘হুইসল ব্লোয়ার’ নার্সের কথা লিখেছেন, যিনি অভিবাসী প্রত্যাশীদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের কথা ফাঁস করে দিয়ে চাকরি হারিয়েছেন। হুইসল ব্লোয়ার তাদের বলা হয় যারা অনুদ্ঘাটিত অন্যায় প্রকাশ করে দিয়ে সতর্ক করেন। ঘটনাস্থলে কাজ করা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নার্স লিন এলওয়ার্দি প্রকাশ করেছেন যে, অস্ট্রেলীয় কর্তৃপক্ষ ‘অফশোর প্রসেসিং’ নামে এক কর্মসূচির আওতায় উপকূলে আসা দুই হাজার মানুষকে পাপুয়া নিউগিনির ম্যানুস ও নউরু দ্বীপের নির্জন এলাকায় আটকে রেখেছে। উপযুক্ত খাদ্য ও চিকিৎসার অভাবে কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে। অনেকে মানসিক ভারসাম্যহীনতায় ভুগছে।
৫.
বাংলাদেশের ‘বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ’ (বিজিবি) তথা আমাদের সীমান্তরক্ষীরা রোহিঙ্গা শরণার্র্থীদের ফিরিয়ে দিচ্ছেন। পথের কষ্টে কিছু মৃত্যুর খবর থাকলেও বিজিবির বাধা দেওয়ায় কেউ হতাহত হয়নি। অক্টোবরের পর ইতিমধ্যে ২০ হাজার শরণার্থী মংডু-কক্সবাজার সীমান্ত ও নাফ নদী দিয়ে ঢুকেছে। আগে থেকেই ৩২ হাজার নিবন্ধিত রোহিঙ্গা শরণার্থী জাতিসংঘ চালিত শরণার্থী ক্যাম্পে রয়েছে। বাইরে অবৈধভাবে আছে প্রায় পাঁচ লাখ। এখন শরণার্থীদের ফিরিয়ে দেওয়া নিয়ে একটি নৈতিক প্রশ্ন উঠেছে। বাংলাদেশ কি অমানবিক আচরণ করছে? বিপন্ন রোহিঙ্গাদের সবাইকে কি আশ্রয় দেওয়া উচিত? অনেকে ১৯৭১-এ এক কোটি বাংলাদেশি শরণার্থীকে ভারতের আশ্রয় দেওয়ার দৃষ্টান্ত তোলেন। তারা হয়তো সে ঘটনার সঙ্গে রোহিঙ্গা সমস্যার রাজনৈতিক পটভূমি ও অন্যান্য বাস্তবতা মিলিয়ে দেখেন না।
একাত্তরে বাংলাদেশে গণহত্যা চালিয়েছিল পাকিস্তানি বাহিনী। আমরা ন্যায়সঙ্গতভাবে স্বাধীনতা ঘোষণার পর প্রতিরোধ ও দেশকে দখলদারমুক্ত করার লড়াই শুরু করছি। আন্তর্জতিক সম্প্রদায়ের কাছে স্বাধীন দেশ হিসেবে আবেদন জানিয়েছি। নয় মাসেই মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ে শরণার্থীরা ফিরে এসেছে।
রোহিঙ্গা মানবিক বিপর্যয়ের পরিস্থিতি সম্পূর্ণ মিয়ানমার সরকারের সৃষ্ট। আমরা যদি আশ্রয় দেই তবে এই সমস্যার সমাধান হবে না বরং মিয়ানমার সরকারকে রোহিঙ্গা বিতাড়নে উৎসাহিত করা হবে। রোহিঙ্গারা মুসলমান হওয়ায় বাংলাদেশি ও মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক ইসলামী জঙ্গি আন্দোলনকারীরা তাদের মধ্য থেকে যোদ্ধা বানাবে এবং বাংলাদেশের নিরাপত্তা-সংকট অনেক বেড়ে যাবে। আইএস ও আল কায়দা বাংলাদেশকে তাদের কর্মক্ষেত্র বানাতে চায় বলে আন্তর্জাতিক হুঁশিয়ারি আছে। আমরা কি এই ঝুঁকি নিতে পারি?