জলাবদ্ধতা সমাধানে বরাদ্ধকৃত সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকার যথাযত ব্যবহারের নিশ্চয়তা চাই

চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরামের সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ব্যারিস্টার মনোয়ার হোসেন বলেন, চট্টগ্রাম মহানগরী আসন্ন বর্ষাকালে ভয়াবহ জলাবদ্ধতার শিকার হতে যাচ্ছে। নগরবাসী আশংকা করছে কোন কোন স্থানে বিগত সময়ের চেয়েও বেশী সমস্যা সম্মূখী হবে। লিখিত বক্তব্যতে আরো বলেন, ইতিমধ্যে আমরা মুরাদপুর, শুলকবহর, বহদ্দারহাট, খতিবেরহাট, চকবাজার, বাকলিয়া, চাক্তাই, কর্ণফুলি পর্যন্ত এবং আগ্রাবাদ, গোসাইলডাংগা, নাছির খাল, মহেষখালী এলাকা সংলগ্ন খালগুলো সরেজমিনে পরিদর্শন করেছি, এলাকার জনসাধারণ আশংকা করছেন জলাবদ্ধতার মুক্তির কোন কোন প্রকল্পের আওতায় কাজ চলছে কিনা। চোখে পড়ার মত তেমন কোন উল্লেখ্যযোগ্য কর্মতৎপরতা দেখা যায়নি। শুধুমাত্র দুই তিনটি স্থানে সুইচ গেইট ও খাল পরিস্কার করার জন্য কয়েকটি স্কেভেটার, কিছু মাটি তোলা কিছু অস্থায়ী স্থাপনা খাল পাড় থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। মিডিয়াতে প্রচারের তুলনায় এসব নগরবাসির কাছে উল্লেখযোগ্য কিছু কাজ বলে মনে হয়নি। ফোরামের নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, নগরবাসী এবং জনপ্রতিনীধিরা এ ব্যাপারে সজাগ ও সচেতনভাবে এগিয়ে না এলে জলাবদ্ধতার সমস্যা সমাধান কখনোই হবে না। হাজার কোটি টাকা বরাদ্ধ হলেও এই অর্থ কিভাবে কখন কোথায় ব্যয় করবে তার কোন সঠিক তথ্য নগরবাসীকে কেউ দিচ্ছেন না। এই ব্যাপারে সাংবাদিকদের ভূমিকা রাখার জন্য অনুরোধ থাকল। চট্টগ্রামের এই জলাবদ্ধতা সমস্যা সমাধানের জন্য নগরবাসী ১৯৮৭ সালে থেকে চাক্তাই খাল খনন সংগ্রাম কমিটি বৃহত্তর চট্টগ্রাম উন্নয়ন গণ-সংগ্রাম কমিটি ছাত্র সংগ্রাম কমিটি বহু আন্দোলন সংগ্রাম করেছে। এক পর্যায়ে ১৯৯০ সাল থেকে পরিবেশ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় নগরীর অনেক গুলো খালের দু’পাশ থেকে শত কোটি টাকা ব্যায় করে বেআইনী দখলদার উচ্ছেদ খালগুলো প্রশস্ত করার জন্য বেশ কিছু ভূমি হুকুম দখল করারা পাশাপাশি খালের দু’পার্শ্বে ও তলা পাকা করা হয়েছিল। আগ্রাবাদ শেখ মুজিব রোডে সুদীর্ঘ ও প্রসস্থ কালভার্ট নির্মাণ করা হয়। এসব কাজগুলো ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত চলে তাতে জলাবদ্ধতা সমস্যা কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে আসে। কথা ছিল যা কিছুই হয়েছে তা নিয়মিতভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হবে। তা হয়নি বলে পরবর্তীতে সমস্যা আগের জায়গায় ফিরে এসে এক পর্যায়ে অবনতি ঘটিয়ে প্রকট আকার ধারণ করে এছাড়াও আন্দোলন সংগ্রামের পরিপেক্ষিতে চট্টগ্রামের উন্নয়নের লক্ষ্যে ১৯৯৫ সালে সিডিএ মহানগরীর মাষ্টার প্ল্যানকে সংশোধন করে মহানগরীর জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধানের জন্য পরবর্তী
২০ বছর মেয়াদী ড্রেনেজ প্রকল্পের বিস্তারিত নির্দেশনা প্রদান করা হয়, উদাহরণ স্বরূপ এর আওতায় বহদ্দারহাট থেকে কর্ণফুলি শাহ আমানত সেতু পর্যন্ত নতুন খাল খননের পরিকল্পনা ছিল। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আজ পর্যন্ত মাষ্টার প্ল্যানের সামান্যতমও কাজ করা হয়নি। কারণ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলো এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ অবহেলা করেছেন নগরবাসী চরম দুঃখ দুর্দশার সম্মূখিন হয়েছে। এই অবস্থায় ২০১৫ সালে আমরা অতীতের সেই উন্নয়ন সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় আবারও সোচ্চার হতে বাধ্য হয়েছিলাম। চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরাম গঠন করে ২০১৫ সালের জুলাই মাস থেকে মত বিনিময়, সেমিনার, সভা, স্বারকলিপি, মানববন্ধন, সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সরকারকে অবগত করেছি এর ঐ ধারা বাহিগাতক। ৭ জুন, ২০১৭ সালে আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট স্বারকলিপি প্রদান করে চট্টগ্রাম মহানগরীকে রক্ষাকল্পে ও জাতীয় স্বার্থে জলাবদ্ধতার সমাধান জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করার পাশাপাশি ২০ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত বরাদ্ধ প্রদানের আবেদন করেছিলাম। ইতিমধ্যে অবশ্য ২০১৫ সালে জুলাই মাসে নাগরিক ফোরামের সভা-সেমিনার, সংবাদ সম্মেলনের পরিপ্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম ও ঢাকার কিছু সংবাদপত্র ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া সমস্যাটিকে বিশেষ করে বর্ষাকালে জলবন্দি নাগরিকদের দুর্দাশার চিত্র তুলে ধরেন, যার কার্যকারিতা ১৯৯৪ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত তেমন দেখা যায়নি। পাশাপাশি ওয়াসা মহানগরীর ড্রেনেজ সংক্রান্ত সেই মাষ্টার প্ল্যানকে বর্তমান অবস্থা অনুযায়ী রি-ডিজাউন করে। এছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ড ড্রেনেজের ব্যাপারে কর্ণফুলির মুখে কয়েকটি সুইচ গেইট নির্মান ও অন্যান্য খনন কাজের জন্য প্রকল্প তৈরী করা শুরু করে। ২০১৭ সালের প্রথম দিকে অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা মন্ত্রনালয়ে প্রেরণ করা হয়। তবে আমাদের জানামতে প্রকল্পটি সিডিএ অধিগ্রহণ করে। মহানগরীর সংশ্লিষ্ট কোন এক সংস্থা জানত না আরেক সংস্থা কি প্রকল্পের জন্য কাজ করছেন। আমাদের স্বারকলিপি পরিপ্রেক্ষিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক বিশেষ নির্দেশে সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা বরাদ্ধের ঘোষাণা আসে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেষ অনুযায়ী সিডিএ, সিটি কর্পোরেশন ও সেনাবাহিনীর যৌথ উদ্দোগে উক্ত সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকার কাজ বাস্তবায়নের কথা ছিল। লিখিত বক্তব্যে আরো বলেন, অত্যন্ত দুঃখের সাথে লক্ষ্য করেছি যে, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাথে সিডিএ’র এই বিষয়ে ঐক্যবদ্ধতা ও সমন্বিত কোন প্রচেষ্টা এ যাবৎ দেখা যায়নি বরং এ বছর জলাবদ্ধতা থেকে নগরবাসী তেমন রেহাই পাচ্ছেন না বলে সিটি কর্পোরেশন জানিয়েছে। অথচ এর মধ্যে সিডিএ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে বলে নগরবাসীকে ধারণা দিচ্ছেন। মনে হচ্ছে আমরা নগরবাসী আবারও হতাশার মধ্যে নিমজ্জিত হয়ে গিয়েছি। সার্বিক পরিকল্পনা সম্পর্কে জনগণকে ওয়াকিবহাল করা হচ্ছে না। অথচ এ বছরের মধ্যে সমস্যা সমাধানের কথা ছিল এই কারনেই অগ্রাধিকার ভিত্তিত্বে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা জরুরী বরাদ্ধের সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন। এক বছর প্রায় অতিবাহিত হতে চলল আগামী ২ বছরের মধ্যে সমাধানের কোন আলো নগরবাসী দেখছেন না। বিষয়টি নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে সংবাদপত্র ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া জোরালো ভূমিকা পালন না করলে প্রকল্পের অগ্রগতি
দুর্বলতা ইত্যাদি সর্ম্পকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয় এবং দেশবাসী অবগত কি করে হবেন? আপামর চট্টগ্রামবাসীর পক্ষে চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরাম এর আহবান- প্রকল্পের শুরু থেকে শেষ ধাপ পর্যন্ত প্রতিটি কাজ ও সময়সীমা সম্পর্কে নগরবাসীকে অবহিত করা। দ্রুত প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। সকল অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে খালের ভূমি উদ্ধার করতে হবে। চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে অদ্য পহেলা এপ্রিল বেলা ১২টার সময় চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরামের সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার মনোয়ার হোসেন। সূচনা বক্তব্য প্রদান করেন মহাসচিব মো. কামাল উদ্দিন। সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ঃ সাবেক সংসদ সদস্য সাবিহা মুসা, চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ সদস্য মো: ইউনুস, হাসিনা জাফর, ডা: নাহিদা খানম শিমু, লাইলা ইব্রাহিম বানু, রওশন আরা চৌধুরী, ডা: শেখ মোহাম্মদ জাহেদ, মহসিন চৌধুরী, আকরামুল হক, আকরাম হোসেন, নোমান উল্লাহ বাহার, মো: ওসমান গনি, কাজল প্রিয় বড়ুয়া, জাফর আলম।