করোনা টিকার প্রাইভেট এসএমএস দিচ্ছে কারা?

‘মহামারি করোনাভাইরাস প্রতিরোধে আপনার জন্য আমাদের কাছে রয়েছে অনুমোদিত বিশ্বখ্যাত কোম্পানির টিকা। আপনার পছন্দ অনুযায়ী সুলভমূল্যে দেয়া হবে করোনার টিকা। নিজে টিকা নিন, অপরকেও টিকা নিতে উৎসাহিত করুন।’ এভাবেই মোবাইলে এসএমএস দিয়ে টিকা নেয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে। দেশে বেসরকারিভাবে টিকা দেয়ার অনুমোদন না থাকলেও এমন এসএমএস পাঠানো হচ্ছে সাধারণ মানুষের মোবাইল ফোনে। এতে বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে। যদিও সরকারিভাবে বলা হচ্ছে বেসরকারিভাবে টিকা দেয়ার সুযোগ নেই। কেউ টিকা আমদানিও করতে পারে না। যারা এ ধরনের এসএমএস দিচ্ছে তা স্রেফ প্রতারণা।

এ ধরনের এসএমএস পেয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মুহাম্মদ ফারুক খান।
মানবজমিনকে তিনি বলেন, আমাকে এ ধরনের এসএমএস দিয়ে টিকা নেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। এরা আসলে প্রতারক। তারা টিকার পরিবর্তে অন্য কিছু দিয়ে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করতে চায়। তিনি বলেন, কোন্‌ কোন্‌ ধরনের টিকা পাওয়া যায়, সেটাও এসএমএসে জানানো হচ্ছে। এ বিষয়ে আমরা সতর্ক থাকতে বলেছি। কোনোভাবেই বেসরকারিভাবে টিকা না দেয়ার জন্য বলা হয়েছে। কারণ বেসরকারি খাতে টিকা এলে অব্যবস্থাপনা বেড়ে যাবে। দেখা যাবে, মেয়াদোত্তীর্ণ টিকা নিয়ে আসবে। পানি ভরে টিকা দেয়া হবে। আর সব দোষ পড়বে সরকারের ওপর। আবার সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পর্যন্ত টিকা বিক্রিতে নেমে পড়বেন। তিনি আরও বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এই টিকা কমিটির সদস্য। আমরা তাকে বলেছি, ওই কমিটিতে যেন আমাদের এই পর্যবেক্ষণ জানানো হয়। সংশ্লিষ্টরা জানান, এরা প্রতারক শ্রেণি। এভাবে বেসরকারি উদ্যোগে টিকা দেয়ার সুযোগ কাউকেই দেয়া হয়নি। রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে সরকারিভাবে কেবল টিকা দেয়া হচ্ছে। দেশে এখন চারটি কোম্পানির কোভিড-১৯ টিকা দেয়া হচ্ছে। এগুলো হলো অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা, ফাইজার-বায়োএনটেক, মডার্না ও সিনোফার্মের টিকা।

এদিকে টিকা নিয়ে আরেকটি প্রতারণামূলক ঘটনার শিকার হয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। মানবজমিনকে তিনি বলেন, বিভিন্ন ব্যক্তি, পেশাজীবী সংগঠন, সাংবাদিক, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে আমাকে জানানো হয়েছে, রাশিয়ার তৈরি ভ্যাকসিন তারা দ্রুত সময়ের মধ্যে দেশে নিয়ে আসতে পারবে। কারণ রাশিয়ান এজেন্ট তাদের খুব পরিচিত ও বিশ্বস্ত। তাদেরকে অনুমোদন দেয়া হলে দেশে টিকার আর কোনো সমস্যা হবে না। বিষয়টি নিয়ে রাশিয়ান দূতাবাসে যোগাযোগ করা হলে তারা আমাকে জানায় রাশিয়া এ ধরনের কোনো এজেন্টকে বাংলাদেশে নিয়োগ দেয়নি। এরপরই বিষয়টি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছি। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সরকার টু সরকার এ পদ্ধতির বাইরে বেসরকারিভাবে আপাতত টিকা আমদানির কোনো সুযোগ নেই। এ দুটি বিষয় নিয়ে গতকাল সংসদ সচিবালয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে আলোচনা হয়। কমিটির পক্ষ থেকে এ ধরনের প্রতারণা থেকে সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেয়া হয়। কমিটির বৈঠকে উপস্থিত থাকা সিরাজগঞ্জ-২ আসনের এমপি মো. হাবিবে মিল্লাত এ প্রসঙ্গে মানবজমিনকে বলেন, কমিটির বৈঠক থেকে বেসরকারিভাবে টিকা না আনার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। অনেকে বিদেশ থেকে টিকা আনার আগ্রহ প্রকাশ করায় কমিটি এ সুপারিশ করে। তিনি বলেন, বৈঠকে কমিটির অন্য সদস্যরা বলেন, অতীতে বেসরকারিভাবে টিকা আনার অভিজ্ঞতা তিক্ত। তাই জি টু জি পদ্ধতিতেই টিকা আনা হবে সঠিক সিদ্ধান্ত। পাইপলাইনে যে পরিমাণ টিকা আসার কথা রয়েছে তাতে আমাদের টিকার কোনো সংকট হবে না বলে মনে করি।

এদিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিভিন্ন দেশ বা প্রতিষ্ঠান থেকে ভ্যাকসিন আমদানির ক্ষেত্রে ভ্যাকসিনের মেয়াদ যাতে ছয় মাস থাকে, তা নিশ্চিতকরণের পাশাপাশি পাইপলাইনে থাকা ভ্যাকসিনগুলো দ্রুততম সময়ে আনার জন্য তৎপরতা অব্যাহত রাখতে মন্ত্রণালয়কে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ ফারুক খান মানবজমিনকে বলেন, আমরা বলেছি, টিকার মেয়াদ কতদিন আছে, সেটা আনার আগে দেখে নিতে হবে। সেই টিকা আমরা যেভাবেই পাই না কেন, উপহার হিসেবে হোক বা কিনে আনা হোক। কারণ দেখা গেল, বাংলাদেশে এসে যখন টিকা পৌঁছালো তার মেয়াদ ১৫ থেকে ২০ দিন রয়েছে। ওই টিকা পরে মাঠ পর্যায়ে যেতে যেতে আর মেয়াদই থাকবে না। রোল আউট করতে করতে ডেট চলে যাবে। তাই এ বিষয়ে আমরা তাদের সতর্ক করে দিয়েছি। কমিটির বৈঠকে জানানো হয়, গত ১১ই আগস্ট পর্যন্ত বিভিন্ন উৎস থেকে চারটি কোম্পানির মোট দুই কোটি ৯০ লাখ ৪৩ হাজার ৯২০ ডোজ টিকা এসেছে। আর গত ১০ই আগস্ট পর্যন্ত এক কোটি ৯৬ লাখ ৭১ হাজার ৬২০ ডোজ টিকা দেয়া হয়েছে। মজুত আছে ৫৯ লাখ ৭২ হাজার ৩০০ ডোজ। বৈঠকে ১০ বছর বয়স পর্যন্ত বিদেশে অধ্যয়নরত বাংলাদেশি ছাত্র-ছাত্রীদের টিকার আওতায় আনার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানানোর পরামর্শ দেয়া হয়। এ ছাড়া বৈঠকে বিশ্বব্যাংকসহ যে সকল দাতা সংস্থা ও দেশ রোহিঙ্গা ইস্যুতে অর্থ ও মানবিক সহায়তা প্রদানের পাশাপাশি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে রাখার ব্যাপারে কথা বলছে তাদের প্রত্যেককে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য অনুরোধ জানানোর পরামর্শ দেয়া হয়।

আর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমগুলো ই-মেইলের মাধ্যমে নিয়মিত অবহিত করার এবং জাতিসংঘের আসন্ন সাধারণ অধিবেশনে সংসদীয় কমিটির সদস্যদের অংশগ্রহণের বিষয়টি বিবেচনার সুপারিশ করা হয়। সংসদ সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন কমিটির সভাপতি মুহাম্মদ ফারুক খান। বৈঠকে কমিটির সদস্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, নুরুল ইসলাম নাহিদ, গোলাম ফারুক খন্দকার প্রিন্স, মো. আব্দুল মজিদ খান ও মো. হাবিবে মিল্লাত এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ এবং জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।