অবৈধভাবে আসছে থাইল্যান্ডের গরু

ঈদকে সামনে রেখে অবৈধভাবে গরু আমদানি করছে একটি চক্র। এ জন্য হুন্ডির মাধ্যমে বিপুল অর্থ পাচার হচ্ছে দেশের বাইরে। বিদেশি গরুর কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন
দেশের খামারিরা। সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, দেশীয় খামারিদের কথা ভেবেই মিয়ানমার থেকে গরু আমদানি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তারপরও একটি চক্র সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর অসাধু সদস্যদের সহযোগিতায় অবৈধভাবে গরু আমদানি করছে। দেশীয় বাজারে ইতিমধ্যে থাইল্যান্ডের ব্রাহামা জাতের বিপুল গরু দেখা গেছে। সীমান্তের বিভিন্ন এলাকা দিয়ে গরু আমদানি প্রতিরোধে বিজিবি কঠোর থাকলেও কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে ঢুকছে থাইল্যান্ডের এই জাতীয় গরু। যদিও ২০১৬ সালে সরকারের কৃত্রিম প্রজনন নীতিমালার অধীনে বেসরকারিভাবে এবং ব্যক্তি উদ্যোগে ব্রাহমা গরু আমদানি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

সূত্রমতে, মিয়ানমারের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর অসাধু সদস্য ও দেশীয় দালালদের সহযোগিতায় নদীপথে গরুগুলো নিয়ে আসা হচ্ছে। গত এক বছর ধরে টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে মিয়ানমার হয়ে থাইল্যান্ডের গরু বাংলাদেশে এলেও জড়িতদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, এইসব গরু ক্রয় করতে গত এক বছরে কয়েক শ’ কোটি টাকা অবৈধভাবে হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে পাচার করেছে একটি চক্র। নাটোরের প্রান্তিক খামারি গফুর শেখ বলেন, করোনার কারণে এবার কোরবানির পশুর হাট জমবে কিনা তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছি। এরমধ্যে অবৈধ পশু আমদানিকারীদের কারণে ব্যবসায় ধাক্কা খেতে হবে বলে মনে হচ্ছে। তিনি বলেন, সারা বছর লালন পালন করে গরু বড় করি, আর একটি সিন্ডিকেট কোরবানিকে সামনে রেখে থাইল্যান্ড থেকে গরু এনে আমাদের বাজার ধ্বংস করে দিচ্ছে। কীভাবে এইসব গরু বাংলাদেশে আসছে তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানান এই খামারি।
কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের মে ও জুন মাসে মিয়ানমার থেকে ২৫ হাজার ৮৬৮টি গরু ও ৪ হাজার ২৫৮টি মহিষ এসেছে। এর আগে মার্চ-এপ্রিল মাসে ১১ হাজার ৮৮৬টি গরু ও ২ হাজার ৪২৪টি মহিষ এসেছে দেশে। তবে অবৈধভাবে দেশে আসা গরুর পরিসংখ্যান জানা যায়নি। টেকনাফ কাস্টমস শুল্ক স্টেশনের আওতাধীন মিয়ানমার থেকে আমদানি করা পশুর একমাত্র পথ শাহপরীর দ্বীপ করিডোর। মিয়ানমার থেকে চোরাইপথে পশু আসা রোধ করতে ২০০৩ সালের ২৫শে মে এটি চালু করা হয়। তবে এতে নিষিদ্ধ গরু আনার কোনো সুযোগ নেই। শুল্ক ফাঁকি দিয়ে অবৈধ পথে আমদানি করা হচ্ছে নিষিদ্ধ ব্রাহমা গরু।
প্রাণী বিশেষজ্ঞরা জানান, উজ্জ্বল সুন্দর রংয়ের ব্রাহমা গরুটি আকৃতিতে অনেক বড়। সাত-আট মাসেই বড় আকারের গরুতে পরিণত হয় হাইব্রিড এই গরু। মাত্র বছর দেড়েক বয়সী গরু বিক্রি হয় তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকায়। প্রতিবছর কোরবানির আগে মিয়ানমার থেকে পশু আমদানি করা হয়। তবে এবার দেশীয় খামারিদের লোকসানের কথা বিবেচনা করে মিয়ানমারের পশু আমদানি বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ জানান, কিছু সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন ধরে মিয়ানমার থেকে গরু আমদানি করছে। দেশীয় পশুকে প্রাধান্য দিয়ে এখন সেটি বন্ধ করা হয়েছে। বিশেষ করে, কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে দেশীয় খামারিদের কথা চিন্তা করে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
টেকনাফ শাহাপরীর দ্বীপ করিডোর সূত্রে জানা গেছে, গত এক বছর ধরে টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে থাইল্যান্ড থেকে অবৈধভাবে ব্রাহমা গরু আনা হচ্ছে। এতে করে ক্ষতির শিকার হচ্ছে দেশের খামারিরা। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, টেকনাফের আবু সৈয়দ, মো. শহিদ, তালিকাভুক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ী মম সিংয়ের ট্রলারে করে থাইল্যান্ডের এইসব ব্রাহামা গরু বাংলাদেশে আনা হয়। এই সিন্ডিকেটের সঙ্গে ঢাকার নাসির উল্লাহ ছোটন, আহমেদ সামশুদ্দিন, চট্টগ্রামের আলিফ চৌধুরী, কক্সবাজারের ইমরুল কায়েস, আবু সৈয়দ ও শহিদসহ আর অনেকে জড়িত। ইতিমধ্যে এ বিষয়ে একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে এই তথ্য প্রকাশ পেয়েছে। গরুর খামারি শাহজাহান জানান, ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে গরু পালন করেও আশানুরূপ ব্যবসা হচ্ছে না। অতি মুনাফা করছে অবৈধভাবে পশু আমদানিকারীরা। সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে পশু আনা প্রসঙ্গে টেকনাফ-২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মোহাম্মদ ফয়সল হাসান খান বলেন, সীমান্ত দিয়ে এইসব হাইব্রিড গরু আসার কোনো সুযোগ নেই। কেউ যদি এইসব গরু আনে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ রয়েছে বলে জানান তিনি।