বস্তি, গ্রাম, গরিব করোনা সর্বত্র

স্বীকার করে নেয়া ভালো করোনাভাইরাস সম্পর্কে এখনো আমরা অনেক কিছু জানি না। এটা নিয়ে কাজ চলছে সারা দুনিয়ায়। গবেষণাগারে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। পাওয়া যাচ্ছে নতুন নতুন তথ্য। তবে ভয়ঙ্কর এই ভাইরাস ঘিরে দেশে দেশে তৈরি হয়েছে নানা গুজব। অন্ধ বিশ্বাসের কারণে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন অনেকে।
বাংলাদেশেও করোনার শুরু থেকে নানা রকম বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে পড়ে। করোনাকে অস্বীকার করতে চান অনেকে।

‘আমার করোনা হবে না’ এমন কথা বলতে শোনা যায় বহুমানুষকে। গ্রামে করোনা হয় না, বস্তিতে করোনা হয় না, গরিব মানুষের করোনা হয় না এমন নানা থিওরি ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেখা যাচ্ছে এসবই মিথ্যা। বরং এসব অন্ধ বিশ্বাসের কারণে ক্ষতির মুখে পড়ছে মানুষ। অনেকে করোনা হওয়ার পরও স্বীকার করছেন না, নিচ্ছেন না চিকিৎসা। তারা হাসপাতালেও আসতে দেরি করছেন। যে কারণে দুর্গতি বাড়ছে। বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন করোনা রোগীদের অর্ধেকের বেশি গ্রামের। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম গতকাল এ তথ্য জানান। তিনি এটাও বলেছেন, এসব রোগী শুরুতে হাসপাতালে আসছেন না। রোগের তীব্রতা অনেক বেশি হওয়ার পর তারা হাসপাতালে আসছেন।
বস্তিতে করোনা হয় না এমন একটি প্রচারণাও ছিল অনেকদিন ধরে। কিন্তু সম্প্রতি আইসিডিডিআর,বি’র এক গবেষণায় এটি ভুল প্রমাণিত হয়। ঢাকা ও চট্টগ্রামে বস্তি ও বস্তিসংলগ্ন এলাকার সোয়া তিন হাজার মানুষের নমুনা পরীক্ষা করে অধিকাংশের শরীরে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে তৈরি হওয়া অ্যান্টিবডি পাওয়ার যায়। এর মধ্যে ঢাকায় অ্যান্টিবডি পাওয়া যায় ৭১ শতাংশের নমুনায় এবং চট্টগ্রামে পাওয়া ৫৫ শতাংশ নমুনায়। এরমানে হলো বস্তিবাসীদের এই অংশ কোনো না কোনো সময় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন অথবা করোনাভাইরাসের সংস্পর্শে এসেছিলেন। এর ফলে তাদের শরীরে ওই ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রাকৃতিক সুরক্ষা ব্যবস্থা তৈরি হয়েছে।
আইসিডিডিআর,বি’র জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী ড. রুবহানা রকীব এ গবেষণায় নেতৃত্ব দেন। পরে ঢাকার একটি দৈনিককে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, প্রথমেই বলেছি, প্রচলিত ধারণা ছিল বস্তিতে করোনা ছড়ায়নি। আমরা এই গবেষণার মাধ্যমে প্রমাণ করলাম, বস্তিতে করোনা ছড়িয়েছে এবং সেখানে মানুষের মধ্যে এন্টিবডি তৈরি হয়েছে। আমরা দেখতে চেয়েছিলাম, রোগটি হওয়ার পেছনে কী কী কারণ কাজ করে। আমরা বেশ কিছু তথ্য নিয়েছিলাম। যেমন তাঁদের মধ্যে স্থূলতা আছে কি না, তাদের ডায়াবেটিস বা অন্য কোনো রোগ আছে কি না, হাইপারটেনশনের ওষুধ খান কি না বা কিডনির সমস্যা আছে কি না। আমরা দেখেছি, যাঁদের স্থূলতা, ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপের মতো ক্রনিক রোগ আছে, তাঁদের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি। এ চিত্র হাসপাতালে যেমন দেখা যায়, তেমনি সাধারণ মানুষের মধ্যেও তা দেখেছি। আমরা আরও কিছু তথ্য নিয়েছি। আমরা দেখেছি, যাঁদের ব্যায়াম বা শারীরিক পরিশ্রমের বা ঘন ঘন হাত ধোয়ার অভ্যাস আছে বা চোখেমুখে হাত দেয়ার অভ্যাস কম আছে, তাদের মধ্যে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়।