হলি আর্টিজানে হামলার পাঁচ বছর আজ

রাজধানী গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার পাঁচ বছর পূর্ণ হলো আজ। নারকীয় এই হামলার পাঁচ বছর উপলক্ষে আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৭টা থেকে গুলশানের ৭৯ নম্বর সড়কের পাঁচ নম্বর প্লটের ওই বাড়িটি নিহতদের প্রতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য খুলে দেয়া হয়।
গুলশান থানা পুলিশ জানায়, করোনা মহামারির কারণে কঠোর লকডাউনের মধ্যেও সীমিত পরিসরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিশেষ করে বিদেশি নাগরিকদের জন্য এই ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে সেখানে বেশি মানুষের ভিড় করতে দেয়া হবে না।
জানা গেছে, পাঁচ বছর আগে এই দিনে নব্য জেএমবির পাঁচ জঙ্গি বেকারিতে ঢুকে প্রথমে নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ দেশি-বিদেশি ২২ জনকে নির্মমভাবে হত্যা করে। এ ছাড়া রাতভর জিম্মি করে রাখে বেকারিতে আসা বেশ কয়েকজন অতিথি ও বেকারির স্টাফদের। উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্য দিযে পার হওয়া সেই রাত শেষে ভোরে সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডো ইউনিটের নেতৃত্বে পুলিশ ও র‌্যাব যৌথভাবে ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ট’ নামে অভিযান চালায়। ওই অভিযানে নিহত হয় পাঁচ জঙ্গি।

উদ্ধার করা হয় হলি আর্টিজান বেকারিতে জিম্মি অবস্থায় থাকা দেশি-বিদেশি অতিথি ও বেকারির স্টাফসহ প্রায় ৩৫ জনকে।

ওই হামলায় দুই পুলিশ কর্মকর্তার সহকারী কমিশনার রবিউল ইসলাম ও ওসি সালাউদ্দিনসহ ২২ জন নিহত হন। নিহতদের মধ্যে ৯ জন ইতালির নাগরিক, ৭ জন জাপানি, একজন ভারতীয় এবং একজন বাংলাদেশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দ্বৈত নাগরিক। বাকি দুজন ইশরাত আকন্দ ও ফারাজ আইয়াজ হোসেন বাংলাদেশি নাগরিক।

পুলিশের বর্ণনা মতে, ঘটনার সেই রাতে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি বাসা থেকে পাঁচ জঙ্গি রোহান ইমতিয়াজ, নিবরাস ইসলাম, মীর সামিহ মোবাশ্বের, খায়রুল ইসলাম পায়েল ও শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল গুলশানের ৭৯ নম্বর সড়কে যান। রাত ৮টা ৪২ মিনিটে প্রথমে তিন জন ও এক মিনিট পরে দুই জন ব্যাগে অস্ত্র ও বোমা নিয়ে ওই রেস্টুরেন্টে প্রবেশ করেন। হলি আর্টিজান বেকারিতে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গেই সেখানকার বিভিন্ন টেবিলে বসে থাকা বিদেশি নাগরিকদের এলোপাতাড়ি গুলি করতে থাকেন। মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য তাদের গলায় ও শরীরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করেন। একইসঙ্গে বেকারির টেবিলে বসে থাকা হাসনাত করিম নামে এক ব্যক্তির পরিবার, সাত প্রকাশ নামে একজন ইন্ডিয়ান নাগরিক, তাহমিদ ও তার দুই বান্ধবীকে জিম্মি করে রাখেন তারা। তাদের সঙ্গে জিম্মি করে রাখেন বেকারির প্রায় ১৫ জন কর্মীকে।

এদিকে গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে ভয়াবহ এই হামলার দুই বছরের মাথায় ২১ জনের সম্পৃক্ততা থাকার প্রমাণ পেয়ে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় মামলার তদন্ত সংস্থা-কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট। তবে ২১ জনের মধ্যে ১৩ জন অপারেশন থান্ডারবোল্টসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্যান্য অভিযানে মারা যাওয়ায় জীবিত ৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়। ২০১৯ সালের ২৭শে নভেম্বর ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনাল এই মামলার যুক্তিতর্ক শেষে রায়ে ৭ আসামির মৃত্যুদণ্ড দেন।