আড়াই টাকা অনিয়ম চাকরিচ্যুত, ৩৯ বছর পর চাকরির যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা ফিরিয়ে দিতে রায়

আড়াই টাকা অনিয়মের দায়ে চাকরিচ্যুত কুষ্টিয়ার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কর্মকর্তা মুক্তিযোদ্ধা মো. ওবায়দুল আলম আকনকে চাকরির যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা ফিরিয়ে দিতে হাইকোর্টের আদেশ বহাল রেখেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

আড়াই টাকা অনিয়মের দায়ে ১৯৮২ সালে কুষ্টিয়ার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কর্মকর্তা মুক্তিযোদ্ধা মো. ওবায়দুল আলম আকন চাকরিচ্যুত হন। এরপর আকনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তার চাকরি ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। ওই আদেশের বিরুদ্ধে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের আবেদন খারিজ করে দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

পরে আপিল বিভাগের রায়ের পুর্নবিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ রাষ্ট্রপক্ষের রিভিউ আবেদন খারিজ করে হাইকোর্টের রায় বহাল রাখেন। এর ফলে ৩৯ বছর পর হারানো চাকরি জীবনের সব সুযোগ-সুবিধা ফিরে পেলেন ওবায়দুল আলম আকন।

সোমবার (২৮ জুন) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন ছয় বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ রায় দেন। আদালতে ওবায়দুল আলমের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী প্রবীর নিয়োগী। আর রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোর্শেদ।

গত ২৪ জুন আপিল বিভাগের ওই রায়ের বিরুদ্ধে রায়ের পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে করা আবেদনের ওপর শুনানি শেষ হয়। পরে আজ রায়ের জন্য দিন ঠিক করা হয়েছিল।

মামলার বিবরণে জানা গেছে, পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা ওবায়দুল আলম আকন কুষ্টিয়ার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরে পাট সম্প্রসারণ সহকারী হিসেবে ১৯৭৪ সালে চাকরিতে যোগ দেন। কাজের স্বীকৃতি হিসেবে সরকারের কাছ থেকে পুরস্কারও পান তিনি। কিন্তু এরই মাঝে ঘটে বিপত্তি, চাকরিতে থাকার সময় পাঁচ প্যাকেট পাটের বীজ বিক্রিতে আড়াই টাকা, অর্থাৎ প্রতি প্যাকেটে ৫০ পয়সা করে বেশি নিয়েছেন বলে অভিযোগ তোলেন এক ব্যক্তি।

১৯৮২ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর তৎকালীন সামরিক সরকার অনিয়মের ঘটনায় ওবায়দুল আলমকে দুই মাসের কারাদণ্ড এবং এক হাজার টাকা জরিমানা করে। একইসঙ্গে ওই ঘটনায় তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়।

চাকরির সময়কাল অনুযায়ী ২০১২ সালে তার অবসরে যাওয়ার কথা ছিল। এরপর ২০১২ সালে সামরিক আদালতের দেওয়া সাজা ও চাকুরিচ্যুতির সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন ওবায়দুল আলম আকন।

সেই রিটে চাকুরিচ্যুতি থেকে অবসরে যাওয়ার নির্ধারিত সময় পর্যন্ত সব সুযোগ-সুবিধাসহ সমুদয় বেতন-ভাতা দিতে নির্দেশনা চাওয়া হয়। এই রিটের শুনানি নিয়ে ২০১৭ সালের ২০ নভেম্বর ওবায়দুল আলমের সাজা অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন হাইকোর্ট। রায়ে ওবায়দুল আলমের চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ পর্যন্ত সব বেতন-ভাতাসহ যাবতীয় পরিশোধ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়।

তবে হাইকোর্টের এই রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর আপিল করে। এই আপিলের শুনানি নিয়ে ২০২০ সালের ৮ মার্চ রায় দেন আপিল বিভাগ। সেই রায়ে ওবায়দুল আলম আকনের বেতন-ভাতা সংক্রান্ত হাইকোর্টের রায়ের অংশ বহাল রেখে সামরিক আদালতের দেওয়া সাজা অবৈধ ঘোষণা সংক্রান্ত অংশটি (এক্সপাঞ্জ) বাদ দেন আদালত। এই রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে আবেদন করে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। সেই আবেদন খারিজ করে আজ রায় দিলেন আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ।

এই রায়ের ফলে মুক্তিযোদ্ধা ওবায়দুল আলম আকন তার চাকরি জীবনের সব বেতন-ভাতা ফিরে পাবেন।