হালদা পাড়ে হাসির ঝলক

হালদা নদীতে চতুর্থ দফায় মা মাছ ডিম দিয়েছে। আজ বুধবার বিকেলে এই ডিম দেয়। তবে এবারও ডিমের পরিমাণ কম।

দেশের অন্যতম প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজননকেন্দ্র হালদায় চতুর্থ দফায় ডিম দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে চট্টগ্রামের হাটহাজারী ও রাউজান উপজেলা প্রশাসন এবং মৎস্য অধিদপ্তর। আজ বিকেল চারটার দিকে নদীর চার-পাঁচটি অংশ থেকে ডিম পেয়েছেন সংগ্রহকারীরা। সাধারণত মৌসুমের প্রথম ভারী বর্ষণ ও বজ্রপাতের সময় ডিম ছাড়ে মা মাছ। তবে বুধবার দিনভর আকাশ মেঘলা থাকলেও বজ্রসহ ভারী বৃষ্টিপাত হয়নি।

গত মে মাসের শুরু থেকে পূর্ণ প্রজনন মৌসুম শুরু হওয়ায় নদীতে পূর্ণিমা তিথির অপেক্ষায় ছিলেন ডিম সংগ্রহকারী ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তাঁরা আশায় ছিলেন, বজ্রপাতসহ ভারী বৃষ্টি হলে ডিম ছাড়বে মা মাছ। তবে গত সপ্তাহে তিনবার ডিম ছাড়লেও পরিমাণ ছিল তুলনামূলক কম। তখন জোয়ার ও ভাটার সময় নদীতে মা মাছ ডিম ছেড়েছিল। তবে আজ বুধবার জোয়ার–ভাটার মাঝামাঝি সময় আবার ডিম ছাড়ল মা মাছ।সরেজমিন দেখা যায়, নদীর রাউজানের পশ্চিম গুজরা ইউনিয়নের আজিমের ঘাট ও হাটহাজারীর গড়দুয়ারা ইউনিয়নের নয়াহাট এলাকায় অন্তত ৩০০ নৌকা নিয়ে ৭০০ থেকে ৮০০ ডিম সংগ্রহকারী ডিম সংগ্রহ করছিলেন। তবে ডিমের পরিমাণ বেশি নয় বলে জানিয়েছেন তাঁরা। কেউ কেউ আধা কেজি থেকে এক কেজি পর্যন্ত ডিম পেয়েছেন।

আজিমের ঘাট এলাকায় ডিম সংগ্রহকারী হাজী বাবর আলী বুধবার সন্ধ্যায় বলেন, তিনি এক কেজি ডিম পেয়েছেন। তবে তাঁরা সন্ধ্যার জোয়ারের অপেক্ষায় আছেন, তখন আবার ডিম পাওয়া যেতে পারে।
হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ রুহুল আমিন নদীপাড়ে বলেন, রাউজানের পশ্চিম গুজরা ইউনিয়নের আজিমের ঘাট, পশ্চিম কাগতিয়া এবং হাটহাজারীর গড়দুয়ারা ইউনিয়নের নয়াহাট ও মাছুয়াঘোনা খাল এলাকায় অপেক্ষায় থাকা সংগ্রহকারীরা ডিম সংগ্রহ করছেন। সন্ধ্যার পরে রাতে জোয়ারের সময় ডিম ছাড়ার পরিমাণ বাড়তে পারে।

হাটহাজারী উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাজমুল হুদা বলেন, একাধিক স্থান থেকে বুধবার ডিম সংগ্রহ করা গেছে। মাছুয়াঘোনা হ্যাচারিতে এখন পর্যন্ত প্রায় ১০-১২ বালতি ডিম এনেছে ডিম সংগ্রহকারীগণ। এগুলো আপাতত ফুটানোর কাজ চলছে। আরও ডিম সংগ্রহের আশায় সবাই অপেক্ষা করছে নদীর পাড়ে। গত সপ্তাহে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে নদীতে লবণাক্ত পানি ঢুকে পড়লে প্রচুর রেণু ও ডিম নষ্ট হয়ে যায়। দুই উপজেলার চারটি সরকারি ও একটি বেসরকারি হ্যাচারিতে প্রচুর ডিম নষ্ট হওয়ায় হতাশায় পড়ে যান সংগ্রহকারীরা। এ ছাড়া ১৪৫টি মাটির কুয়ায় ডিম ও রেণু নষ্ট হয়। গত সপ্তাহে সাড়ে ছয় হাজার কেজি ডিম পাওয়া গেছে বলে বেসরকারিভাবে জানানো হয়।

প্রবীণ ডিম সংগ্রহকারী কামাল সওদাগর বলেছেন, তিনি ৫০০ গ্রাম থেকে ১ কেজি ডিম পেয়েছেন।

প্রশাসন ও নদীর গবেষকদের দাবি, এবার নদীর পরিবেশ গত ২০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নিরাপদ। তবে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে কারণে মা মাছ লবণাক্ত পানি সহ্য করতে না পারায় ডিমের পরিমাণ কমে গেছে।

এর আগে হালদায় গত বছর ডিম সংগ্রহে ১৪ বছরের রেকর্ড ভঙ্গ হয়েছিল, ডিম পাওয়া গিয়েছিল ২৫ হাজার ৫৩৬ কেজি। এর আগের বছর ডিম সংগ্রহের পরিমাণ ছিল সাত হাজার কেজি। জানা গেছে, এবার নদী থেকে ডিম সংগ্রহ করতে নদীতে আছেন সাড়ে ৩০০ নৌকা নিয়ে ৭০০ থেকে ৮০০ সংগ্রহকারী।

হালদা গবেষক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, নদীর গড়দুয়ারা এলাকায় প্রচুর ডিম পাচ্ছেন সংগ্রহকারী। এখানে কয়েক বালতি করে ডিম পাওয়া যাচ্ছে।