হালদা গবেষকের ডাইরী থেকে…

হালদা নদীর (বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ) রুই জাতীয় মাছের প্রজনন ২০২১ এবং প্রাসঙ্গিক কিছু বিশ্লেষণ।

গত ২৫ মে ২০২১ তারিখ দিনগত রাত বারোটার সময় হালদা নদীতে রুই জাতীয় মাছ মৌসুমের প্রথমবারের মতো নমুনা ডিম ছাড়ে। একই দিন রাত ১টার সময় থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরি টিম পানির গুনাগুণ পরীক্ষাসহ হালদা নদীর মাছের প্রজননের বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত মাঠ পর্যায় থেকে সংগ্রহ ও পর্যবেক্ষণ করে আসছে। ২৬ তারিখ দুপুর বারোটার সময় ব্রুড মাছ দ্বিতীয় দফায় নমুনা ডিম দেয়। সর্বশেষ ২৬ মে রাত সাড়ে এগারোটার সময় থেকে স্থানীয় জেলে ও ডিম সংগ্রহকারীরা ডিম সংগ্রহ শুরু করে। এবছর হালদা নদীকে বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ ঘোষণা এবং হালদা নদী রক্ষায় সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় স্থানীয় ডিম সংগ্রহকারী থেকে শুরু করে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে হালদার মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্রকে নিয়ে অন্যরকম প্রত্যাশার সৃষ্টি হয়। আমার দেখা বিগত ২১ বছরের মধ্যে হালদার পরিবেশ, প্রতিবেশ এবং ব্রুড মাছ রক্ষায় সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে। এত সফলতা সত্ত্বেও পরিবেশগত দুটো প্যারামিটার সব হিসাব নিকাশ উলটপালট করে দেয়। হালদা নদীর রুই জাতীয় মাছের ডিমের প্রত্যাশিত ফলাফল আসেনি। এর অন্যতম কারণ দুটি-
১. এপ্রিল থেকে জুন মাস হালদার রুই জাতীয় মাছের প্রজনন সময়। এই তিন মাসের মধ্যে প্রতি মাসের আমাবস্যা অথবা পূর্ণিমা তিথিতে ভারী বৃষ্টিপাত হলে পরে নদীতে মাছ ডিম ছাড়ে। কিন্তু এবছর এপ্রিল-মে দুই মাস অতিবাহিত হলেও হালদার নদীর উজান অঞ্চলে প্রত্যাশিত বৃষ্টি হয়নি, ফলে পাহাড়ি ঢল না আসায় নদীতে মাছের ডিম ছাড়ার অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়নি।
২. মে মাসের চতুর্থ জো অর্থাৎ পূর্ণিমা তিথি ছিল ২৩ থেকে ২৯ তারিখ। এ সময় অল্প পরিমাণ বৃষ্টি হলে মাছের গোনাড পরিপক্বতার কারণে মাছ ডিম ছাড়ার জন্য তৈরি হয়। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের
কারণে সাগর উত্তাল হয়ে ওঠে। পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পায়। একই সাথে হালদা নদীর জোয়ার-ভাটার নদী হওয়ার কারণে জোয়ারের সময় পানির উচ্চতা অনেক বৃদ্ধি পায়। এই জোয়ারের পানির সাথে হালদা নদীর পানিতে সমুদ্রের লবণাক্ত পানির অনুপ্রবেশ ঘটে। যা স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে অনেক গুণ বেশি।
পরিবেশগত এই দুটো বাধার কারণে হালদা নদীতে মাছের প্রজননের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি ব্যাহত হয়। কিন্তু মাছের গোনাড এর পরিপক্বতার কারণে সামান্য অনুকূল পরিবেশ ডিম ছাড়তে বাধ্য হয়। যার জন্য হালদা নদীতে প্রচুর মাছের অবস্থান এবং দূষণ মুক্ত থাকা সত্ত্বেও রুই জাতীয় মাছ স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রত্যাশিত ডিম ছাড়েনি। তবে আমরা আশা করছি হালদার লবণাক্ত পানির দূরীকরণের মাধ্যমে এবং উজানে প্রত্যাশিত বৃষ্টি হলে পরে হালদা নদীতে মাছ আবার দ্বিতীয়বারের মতো ডিম ছাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির গবেষক টিম হালদা নদীতে মাছের প্রজনন সংক্রান্ত নিম্নোক্ত প্রাথমিক তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে। এবছর ডিম ধরার নৌকার সংখ্যা গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি, যার সংখ্যা প্রায় ৩৫০ টির মতো। নদী থেকে সরাসরি ডিম সংগ্রহের লোকের সংখ্যাও গত বছরের চেয়ে অনেক বেশি ছিল। এবছর প্রায় ৮০০ জন ডিম সংগ্রহকারী নদী থেকে সরাসরি ডিম সংগ্রহে অংশ নেয়। প্রতিকূল পরিবেশ স্বত্বেও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির তথ্য অনুযায়ী এবারের সংগৃহীত ডিমের মোট পরিমাণ প্রায় ৬৫০০ কেজি।

প্রফেসর ড. মনজুরুল কিবরিয়া, অধ্যাপক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষক হালদা।