টিকা উৎপাদন বাড়ানোর একমাত্র উপায় মেধাস্বত্ব স্থগিত করা

কোভিড-১৯-এর টিকা সব দেশেরই সমানভাবে পাওয়া উচিত। কোভিডের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ, পরীক্ষা কিটও। ইউরোপিয়ান কমিশন ও জি-২০-এর আয়োজনে অনুষ্ঠিত গ্লোবাল হেলথ সামিটে এসব কথা বলেছেন বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) মহাপরিচালক এনগোজি ওকোনজো ইভেইলা। তিনি আরও বলেছেন, ‘সবার টিকা পাওয়া আমাদের এই সময়ের নৈতিক ও অর্থনৈতিক ব্যাপার।’ নীতিপ্রণেতাদের প্রতি এনগোজি ওকোনজো ইভেইলার পরামর্শ, দুর্যোগ মোকাবিলার প্রস্তুতি, দুর্যোগ-পরবর্তী ব্যবস্থা ও ঘুরে দাঁড়ানো একই সূত্রে গাঁথা, এগুলো পৃথকভাবে দেখার অবকাশ নেই। এ ক্ষেত্রেও বাণিজ্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে বলে মনে করেন তিনি। এই যে এক দেশ থেকে আরেক দেশে টিকা, ওষুধ, চিকিৎসা সরঞ্জাম যাচ্ছে, তা সম্ভব হচ্ছে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের বদৌলতে। সে জন্য বাণিজ্যকে তিনি শুভশক্তি হিসেবে আখ্যা দেন। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, ২০২০ সালে বৈশ্বিক পণ্য বাণিজ্য ৭ শতাংশ হ্রাস পেলেও চিকিৎসা সরঞ্জামের বাণিজ্য ১৬ শতাংশ এবং ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রীর বাণিজ্য ৫০ শতাংশ বেড়েছে। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে বিপুল পরিমাণ টিকা মজুত থাকলেও উন্নয়নশীল দেশগুলো টিকা পাচ্ছে না। এর পরিপ্রেক্ষিতে ওকোনজো ইভেইলার পরামর্শ হলো, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সদস্য দেশগুলো তিনটি ফ্রন্টে কাজ করতে পারে। প্রথমত, সরবরাহ ব্যবস্থা নির্বিঘ্ন করতে রপ্তানি বিধিনিষেধ ও শুল্ক বাধা দূর করতে হবে। পাশাপাশি কাঁচামাল প্রাপ্তি থেকে শুরু করে দক্ষ কর্মী নিয়োগ দেওয়ার ক্ষেত্রে বাধা দূর করা উচিত। এ ক্ষেত্রে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা সরবরাহ ব্যবস্থা মনিটর করতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে পারে। দ্বিতীয়ত, হাজার হাজার মানুষের জীবন বাঁচাতে টিকা উৎপাদন বৃদ্ধি করতে সরবরাহ ব্যবস্থা উন্মুক্ত রাখতে হবে। যাদের উৎপাদনের সক্ষমতা আছে এবং যাদের চাহিদা আছে, এই দুই পক্ষের মধ্যে সংযোগ ঘটাতে হবে। ওকোনজো ইভেইলা মনে করেন, কোভিড দীর্ঘদিন থাকবে। সে ক্ষেত্রে টিকা উৎপাদন আরও ছড়িয়ে দেওয়ার বিকল্প নেই। অথচ এই মুহূর্তে আফ্রিকা অঞ্চলের টিকা উৎপাদন সক্ষমতা সামগ্রিক বৈশ্বিক চাহিদার মাত্র শূন্য দশমিক ২ শতাংশ। এতে কাজ হবে না বলেই তিনি মনে করেন। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও), আন্তর্জাতিক টিকাকরণ সংস্থা গাভি ও কোয়ালিশন ফর এপিডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেসের সঙ্গে কোভ্যাক্স টিকা উৎপাদনে একত্রে কাজ করতে পারে। তৃতীয়ত, ওকোনজো ইভেইলার পরামর্শ, বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ, প্রযুক্তি ও জ্ঞান স্থানান্তরে সদস্য দেশগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকা যে টিকার মেধাস্বত্ব সাময়িকভাবে স্থগিতের আহ্বান জানিয়েছে, তাও আমলে নিতে হবে বলে তাঁর মত। এখন টিকা উৎপাদন বৃদ্ধির এটাই একমাত্র পথ। সবাইকে তাই আলোচনার টেবিলে আসার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। ওকোনজো ইভেইলার আশাবাদ, জুলাই মাসে অনুষ্ঠেয় দ্বাদশ মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে টিকার মেধাস্বত্ব সাময়িকভাবে স্থগিতের ব্যাপারে অগ্রগতি হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এ ব্যাপারে সায় দিলেও জার্মানি বাদ সেধেছে। সে জন্য এখন মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের অপেক্ষা। বিশ্লেষকেরা অবশ্য শুরু থেকেই সোচ্চার। তাঁরা টিকাকে সর্বজনীন পণ্য ঘোষণা করে মেধাস্বত্ব তুলে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। সেটা করা হলে বাংলাদেশের মতো দেশের পক্ষে টিকা উৎপাদনে বাধা থাকবে না। মেধাস্বত্ব থাকার কারণে রাশিয়ার টিকা উৎপাদনে নানা ধরনের চুক্তি করতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। এ নিয়ে আলোচনা চলছেই। কবে নাগাদ উৎপাদনে যেতে পারবে বাংলাদেশ, তা কেউ বলতে পারে না। মহামারি নিয়ন্ত্রণে আনতে এর বিকল্প নেই বলেই তাঁরা মনে করেন।