শিল্প কারখানার পরিবেশ সচেতনতাঃ ব্যবসায়িক দৃস্টিভঙ্গি

 শিল্পকারখানার কেন পরিবেশ সচেতন হওয়া উচিত? এ প্রশ্নের স্বাভাবিকভাবেই উত্তর আসবে, সমাজের অপরিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে সামাজিক দায়বদ্ধতা আর আইনগত বাধ্যবাধকতায় তারা পরিবেশ দূষণ রোধে সচেষ্ট। আপাতঃদৃষ্টিতে মনে হতে পারে বিশাল অংকের পুঁজি বিনিয়োগ করে পরিবেশকে বাঁচাতে গিয়ে নিজেরাই না আবার ক্ষতির সম্মুখীন হন। তাই অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান সঠিকভাবে পরিবেশ দূষণ রোধক কর্মকান্ড পরিচালনা করেন না। আমরা যদি উন্নত বিশ্বের দিকে দৃস্টিপাত করি, তাহলে দেখব তাদের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানসমুহ পরিবেশ বিষয়টি ব্যবসায় সম্প্রসারণের একটি সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করেছে। ১৯৯৫-৯৬ সালে গবেষকরা বলেন, শিল্প কারখানার উচিত গ্রীন উৎপাদন প্রক্রিয়া, রিসাইক্লিং, পরিবেশবান্ধব উৎপাদন প্রক্রিয়া পূণঃডিজাইন করা (Hart and Florida)। ২০০৮ সালে এক স্টাডিতে প্রমাণিত হয় এই ধরনের পরিবেশবান্ধব বিনিয়োগে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের পরিচালন ব্যয় কমে যায় (Vachon, Klassen)। শিল্পকারখানায় শক্তির ব্যবহার অপরিহার্য। আর পৃথিবীকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে এই শক্তির উৎস ও উপাদানসমুহের পরিমিত ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহারে মনোযোগী হতে হবে। ১৯৯৮ সালে এক গবেষণার ফল বলছে, অর্থনৈতিক বিবেচনায় ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের সফলতার অন্যতম নির্ধারক হলো শক্তির পরিমিত ব্যবহার কৌশল। এই কৌশলে প্রতিষ্ঠানের মুনাফা বৃদ্ধির প্রমাণ পেয়েছেন গবেষকরা আরেক গবেষণায় ২০০৪ সালে (Klee & Coles)। শুধু কি শক্তির ব্যবহার, কাঁচামালও হতে পারে পরিবেশবান্ধব। এটির সর্বোচ্চ ব্যবহার বর্জ্য কমায়, উৎপাদনশীলতা বাড়ায়। ২০০৫ সালে এক গবেষণায় উঠে আসে কাঁচামাল হতে পারে একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের কম্পিটিটিভ এডভান্টেজের এক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান (Proctor)। ২০০৯ সালেই দেখা যায় পরিবেশবান্ধব পরিচ্ছন্ন কাঁচামাল ব্যবহারে একটি ব্যবসায় তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠানের তুলনায় সুবিধাজনক অবস্থায় থাকে (Jabbor & Jabbor)। ২০০৭ সালে এক গবেষণায় দেখা যায় কাঁচামালের অপচয় রোধ করতে পরিবেশবান্ধব রিসাইক্লিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে একটি ব্যবসায় তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠানের তুলনায় আর্থিক বিবেচনায় ভালো অবস্থানে থাকে (Dimitrova)। তাছাড়া একটি সিমেন্ট কারখানায় ২০০৩ সালে গ্রীণ মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা কৌশল প্রয়োগে তুলনামূলক সুবিধায় এগিয়ে থাকার প্রমাণ পেয়েছেন গবেষকরা (Som)। ISO এর গবেষণায় দেখা যায় আই এস ও সনদপ্রাপ্ত ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানসমুহ কম খরচে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করতে পারে, বন্টনব্যয় কমাতে পারে, কোম্পানির ব্রান্ড ইমেজও বাড়ে। ১৯৯৬ সালের এক গবেষণায় পাওয়া গেছে পরিবেশ রক্ষায় পুরস্কৃত একটি প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা বৃদ্ধি পেয়েছে অস্বাভাবিকভাবে পরের বছরগুলোতে (Klassen & Maclaughlin)। পরিবেশ রক্ষায় আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখা প্রতিষ্ঠানসমুহের বাজার মূল্য অন্যন্য প্রতিষ্ঠানের তুলনায় অনেক বেশি (Konar & Cohen, 2011)। ব্যবসায় প্রতিষ্টানের পরিবেশবান্ধব বিনিয়োগে সরাসরি আর্থিক লাভের প্রমান পেয়েছেন গবেষকরা এক গবেষণায় (Figge & Hahn)। এই আলোচনার মূখ্য উদ্দেশ্য ছিল, শিল্প কারখানার পরিবেশবান্ধব কর্মসূচি শুধু সামাজিক দায়বদ্ধতা আর আইন পালনের উদ্দেশ্য না করে ব্যবসায়িক দৃস্টিভঙ্গিতে নিলে একুল-ওকুল মানে দুকূল রক্ষা হয়।

মুহাম্মদ আলী আরশাদ চৌধুরী সহযোগী অধ্যাপক, হিসাব বিজ্ঞান বিভাগ, চবি। পিএইচডি গবেষক, চবি।