দ্বিতীয় বিয়ে, প্রথম স্ত্রীর অনুমতি এবং কিছু বিনীত নৈতিক প্রশ্ন?

১. একজন ব্যক্তির দ্বিতীয় বিয়ে কিভাবে তার প্রথম স্ত্রীর প্রতি সুবিচার হতে পারে? আপনার প্রাণপ্রিয়মাকে না জানিয়ে আপনার বাবা বা আপনার কন্যার বা আপনার বোনের স্বামী যদি এই কাজটি করেআপনি কি নির্দ্বিধায় মেনে নেবেন?

২.এইসব সাফাই গেয়ে আর যার যার সুবিধামতো ব্যাখ্য দিয়ে পুরো সমাজকে আপনারা নৈতিকভাবে কিঅধপতনের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন না ? আপনাদের এইসব ব্যাক্ষার ফলে কি অগণিত মা-বোন আরকন্যাদের জীবনকে অসম্মানজনক ও দুর্বিসহ করবে না ?

৩.অর্থনৈতিক ও বিভিন্ন কারণ যেমন পরকীয়া সম্পর্ক, যৌতুক, নারীকে মানসিক ও শারীরিকভাবে কষ্টদেয়া, বিশেষকরে তরুণ সমাজের মধ্যে অতি সহজে বিয়ে ভেঙ্গে দেয়ার প্রবণতা ইত্যাদি। হাজারো ঘটনানিয়ে এখনকার সমাজ ভারাক্রান্ত হয়ে পড়েছে, অগণিত পরিবার এবং এই সাথে তাদের বাবা মা ভাইবোনদের জীবন ও ভবিষ্যৎ উলোট পালট হচ্ছে | আপনাদের তথা ধর্মীয় আলেমদের এই ধরণের ব্যাখ্যাগুলি সমাজকে কি আরো বারোটা বাজাতে সাহায্য করবে না ? এটা কি “জ্বলন্ত আগুনে ঘি ঢেলেদেয়া” হবে না ?

৪. লুকিয়ে আরো বিয়ে করতে কি অনেকেই উৎসাহিত হবেন না ?

৫. সমাজে সুন্দর ও শান্তির পরিবেশ সৃষ্টির ক্ষেত্রে আপনাদের কি কোনো দায়িত্ব নেই ? আপনাদের এইধরণের বক্তব্যগুলি কি তরুণ সমাজকে বিয়ে শাদী করা থেকেই নিরুৎসাহিত করবে না ?

৬. এতে বিশেষ করে বিবাহিত নারীরা তথা আপনার মা বোন বা কন্যারা কি একধরণেরনিরাপত্তহীনতায় ভুগবেন না ?

৭. সঠিকভাবে এবং নিরপেক্ষ ভাবে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় ইসলাম প্রকৃতপক্ষে একটি বিয়ের জন্যই উপদেশ দেয় কারণ, একাধিক বিয়ে করলে অন্য স্ত্রীর প্রতি প্রতি আসলেই সুবিচার করতে পারবেন না ।অনুমতি তো দূরে থাক বরং আপনি লুকিয়ে আরেকটি বিয়ে করলেন, এটাকি সুবিচার হলো ? এত বছরঘর করার পরেও স্বামীজীর মনের বাসনা বর্তমান স্ত্রীকে জানতেও দিলেন না, এটাকি সুবিচার হলো ? বাস্তবে দেখা যাবে, যাকে সর্বশেষে বিয়ে করা হয়েছে, বা যিনি অপেক্ষাকৃত তরুণী তার সাথেই স্বামীজীসময় বেশি কাটাবেন, রিসোর্টে আর হলিডেতে যাবেন, এটাকি অন্য স্ত্রীর প্রতি সুবিচার হবে ?

৮. সমাজের কল্যাণ চিন্তা করে দেশে দেশে এমনকি বাংলাদেশেও রাষ্ট্রীয় আইন করে বলা হয়েছে, একটির অধিক বিয়ে করা যাবে না এবং বাংলাদেশে করলে প্রথম স্ত্রীর অনুমতি এবং এই সাথে নিজনিজ এলাকার সালিশি বোর্ডের সম্মতি লাগবে । এই গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় আইনটিকে না মেনে ফৈাজদারীঅপরাধী হবেন কেন?

নিজের বিবেকের কাৰণে চুপচাপ থাকতে পারলাম না বলে এইসব সামাজিক ও নৈতিক প্রশ্নগুলি করলাম| জানিনা গ্রহণযোগ্য যুক্তি সমাজের বৃহত্তর স্বার্থ এবং ইসলাম শান্তির ধর্ম এ বিবেচনায় কেউ যুক্তিযুক্ত – সুবিচার সম্পন্ন উত্তর দিবেন কিনা ! ব্যাক্ষাসহ উত্তর আশা করি বিজ্ঞদের কাছ থেকে । যারা অলরেডীএকাধিক বিয়ে এভাবে করেছেন তাঁরা নয়, বরং যারা করেননি এখনও, তাঁরাই নিরপেক্ষ মত দিতেপারবেন । যারা করেছেন, তারা আমার প্রশ্ন পছন্দ করবেন না এবং তাদের গাত্রদাহ হবে ধরে নিয়েছি, কিন্তু কাউকে আঘাত করতে আমি প্রশ্নগুলি করিনি । আমার উদ্দেশ্য – সমাজ সচেতনতার মাধ্যমেন্যায়বিচার ও মানবাধিকার প্রমোট করা ।

উপরের কথাগুলো আর প্রশ্নগুলি নৈতিকতার দিক থেকে অনেকর মনের প্রশ্ন ।

সবশেষে আইনজীবী হিসেবে বাংলাদেশের প্রচলিত আইন কি বলে এ সম্পর্কে একটু না বললেই নয় ।এখানে উল্লেখ্য, যে ব্যক্তি সালিসি পরিষদের অনুমতি ছাড়া আরেকটি বিয়ে করেন, তিনি ১৯৬১ সালেরমুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশের ৬ (৫) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করবেন। আদালতে দোষীপ্রমাণিত হলে দোষী ব্যক্তিকে এক বছর পর্যন্ত বিনা শ্রম কারাদণ্ড বা ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানাঅথবা উভয় দণ্ড হতে পারে। আবার দ্বিতীয় স্ত্রীর কাছে যদি আগের বিয়ের কথা গোপন করেন তাহলেওদণ্ডবিধি অনুযায়ী কঠিন শাস্তি পেতে হবে।

আমার জানামতে এসব আইন তৈরী করার আগে সরকার দেশের ইসলামী আলেমদের মতামতনিয়েছিলেন । একজন দেশপ্রেমিক নাগরিকের দায়িত্ব হচ্ছে দেশের সংবিধান, প্রচলিত আইন ও বিধিমেনে চলা । আর যখন বিদেশে থাকবেন তখন সেই দেশের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে হবে এবংমানতে হবে । অবশ্য বিদেশে

গেলে সবাই ঠিকই ওই দেশের আইন হুবহু নির্দ্ধিধায় মেনে চলতে ভূল করেন না, তবে অনেকে নিজেরদেশ বাংলাদেশে থেকেই যত বিতর্ক করেন ।

মনোয়ার হোসেন, ব্যরিস্টার, মানবাধিকার আইনজীবী ও সংগঠক