‘একবছরের মধ্যে পুরো শহর নান্দনিক এক শহর দেখতে পারবেন নগরবাসী’

নগরীর আউটার স্টেডিয়ামের উত্তর ও পূর্ব পার্শ্বের সৌন্দর্যবর্ধন ও সবুজায়নের প্রকল্প উদ্বোধন করা হয়। গতকাল শনিবার রাতে আউটার স্টেডিয়ামে ফলক উম্মোচনের মাধ্যমে এই প্রকল্পের উদ্বোধন করেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আলহাজ্ব আ জ ম নাছির উদ্দীন। পরে দেশ ও জাতির সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ মুনাজাত করা হয়। এই প্রকল্পের উদ্বোধনকালে মেয়র বলেন, এ শহর আমার আপনার সকলের। শহরকে সুন্দর, সিগ্ধ নির্মল ও দুর্গন্ধমুক্ত রাখার দায়িত্ব আমাদের সবার।তাই নগরবাসীকে দুগন্ধমুক্ত সকাল উপহার দেয়ার জন্য চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এই উদ্যোগের ফলে আগামী একবছরের মধ্যে পুরো শহর নান্দনিক এক শহর দেখতে পাবেন নগরবাসী। তিনি বলেন, আমরা চাই নদী,সাগর ও পাহাড়ের মেলবন্ধনে চট্টগ্রাম নগরীর যে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য রয়েছে, তা ফিরিয়ে আনতে। চট্টগ্রাম স্টেড়িয়াম নগরীর প্রাণকেন্দ্র। দেশী ,বিদেশীদের কাছে এই স্টেড়িয়াম এলাকাটি একটি নান্দনিক,দর্শনীয় স্থানে পরিণত করতে ইতোমধ্যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যাতে নগরবাসী বলতে পারে,চট্টগ্রাম স্টেড়িয়াম এলাকাটি একটি সৌন্দর্য মন্ডিত এবং দেখার মত জায়গা। এই লক্ষে চসিক কাজ করে যাচ্ছেন বলে তিনি উল্লেখ করেন। তাই আউটার স্টেড়িয়ামের নান্দনিক সৌন্দর্য রক্ষায় সিটি কর্পোরেশনের পাশাপাশি নগরবাসীকেও ভুমিকা রাখতে হবে। এখানে যে গাছ-গাছালিগুলো আছে,সেগুলোর পরিচার্য করতে হবে। আশ-পাশের পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। তিনি চসিক থিয়েটার ইনষ্ঠিটিউটের কথা উল্লেখ করে বলেন,সেখানে মুক্ত মঞ্চ আছে,ঠিক তেমনি এখানেও খোলা আকাশের নিচে মুক্ত মঞ্চ হবে। আউটার স্টেড়িয়ামের চারপাশে গ্যালারী করা হবে। যেখানে আয়োজন করা যাবে নানান অনুষ্ঠান। আর দর্শকরা মাঠের চারপাশে বসে সে অনুষ্ঠান উপভোগ করতে পারবেন।এই প্রসংগে মেয়র বলেন,আউটার স্টেড়িয়ামের পুরো মাঠজুড়ে থাকবে সবুজ ঘাস। এখানে ফুটবল,ক্রিকেট,হ্যান্ডবল,ভলিবল,কাবাডি,হকি সহ সবসাধারণের খেলা অনুষ্ঠান করা যাবে নিবিঘেœ । তাছাড়া বিভিন্ন বয়সভিত্তিক ক্রিকেট টুর্ণামেন্ট-এ খেলা সমুহও আয়োজন করা যাবে। পুরো মাঠটি উম্মুক্ত থাকবে খেলাধুলার জন্য।এই মাঠে আরো থাকবে নানা রঙ্রে লাইটিং । যা যে কারো দৃষ্ঠি আকৃষ্ঠ করবে ।এই উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ফিউশন ডিজাইনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ডিজাইনার লায়ন এস.এম হোসেন বাদল। অনুষ্ঠানে সিটি মেয়র ছাড়া অন্যানো মধ্যে বক্তব্যে রাখেন চসিক প্যানেল মেয়র কাউন্সিলর চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী, এ প্রজেক্টের কনসালটেন্ট স্থাপতি জেরিনা হোসেন, স্বাপিক ডিজাইন এন্ড রিচার্জ স্টুডিও স্থপতি অরিত্র দে অর্ক ও অর্চিমান দাশ। কাউন্সিলর মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন,মোহাম্মদ সলিম উল্লাহ বাচ্চু,সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবিদা আজাদ , চসিক নিবার্হী প্রকৌশলী আবু সাদাত মোহাম্মদ তৈয়ব।ফিউশন ডিজাইন এন্ড ইঞ্জিনিয়ার লি: এর ডিজাইনার ও এমডি লায়ন এম হোসেন বাদল এর অর্থায়নে আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। এর পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে রয়েছে ফিউশন ডিজাইন অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লি: । এ প্রতিষ্ঠানটি পাঁচ বছর পর পর নবায়ন সাপেক্ষে এর রক্ষনাবেক্ষন করবে। একসময় কাজীর দেউড়ী আউটার স্টেডিয়াম এলাকাটি দীর্ঘদিন ধরে ছিল মদ,জোয়া,গাজাসেবনকারী এবং অসামাজিক কর্মকান্ডের অবাধ বিচক্ষন কেন্দ্র। ময়লা-আবর্জনা স্তুপ পড়ে থাকতো এখানে। যে কারণে এ সড়কে নাগরিকদের দুর্গন্ধে নাকে রুমাল দিয়ে চলাচল করতে হতো। তাই সিটি কর্পোরেশন এ জায়গাটি সৌন্দর্যবর্ধনের উদ্যোগ গ্রহন করে। ইতোমধ্যে নগরীর কেন্দ্রস্থলে কাজীর দেউড়ী নেভাল এভিনিউ আউটার স্টেডিয়ামের চারপাশে সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। আউটার স্টেড়িয়ামের উত্তর – পূর্বপাশের ১২৫৩ ফুট দীর্ঘ ফুটপাতের উন্নয়ন করা হয়েছে । করা হয়েছে সৌন্দর্য বর্ধনও। ২৪ফুটের প্রস্থের ফুটপাতকে আট ফুট করে তিন লেনে ভাগ করা হয়েছে। ফুটপাতের প্রথম ও তৃতীয় লেনের বোডিং টাইলস বাসানো হয়েছে নাগরিকদের হাঁটার জন্য এবং মাঝখানে লেনে বাগান করা হয়েছে। বিভিন্ন প্রকারের ফুলের বাগান, আলোকায়ন, তিনটি ফুড জোন, একটি বাস-বে, তিনটি যাত্রী ছাউনি, দুইটি সিএনজি-বে ও দুইটি মোটর সাইকেল-বে রয়েছে এ সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পে রয়েছে। তৈরী করা হয়েছে পুরুষ ও মহিলাদের জন্য আলাদা গণশৌচাগার। এই গণশৌচাগার একটি হচ্ছে আউটার স্টেড়িয়ামের উত্তর পাশে অপরটি পুর্ব পাশে । টয়লেট ব্লকের পাশে এটিএম বুথের জন্য জায়গা বরাদ্দ রাখা হয়েছে । দর্শনীয় ও পথচারীদের বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এইখানে অবসর বিনোদনে লোকদের বসার জন্য বেশকিছু ঢালাই বেঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। এতে কমপক্ষে ৮শ’ লোক বসতে পারবে। এছাড়া দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের নিরাপদে হাঁটার জন্য আলাদা ভাবে লাল পেভিং টাইলস রয়েছে। এখানে প্রস্তুতকৃত ফুডজোন ও টয়লেট ব্লকের আয় থেকে সৌন্দর্য বর্ধনের রক্ষণাবেক্ষন করা হবে।