রাষ্ট্রকে জাতীয় চার মূলনীতির ভিত্তিতে পরিচালিত করার দাবি

সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় জড়িতদের চিহ্নিত করে অবিলম্বে গ্রেফতার ও বিচার এবং রাষ্ট্রকে জাতীয় চার মূলনীতির ভিত্তিতে পরিচালিত করার দাবি উঠেছে সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী তরুণ উদ্যোগ আয়োজিত নাগরিক মানববন্ধন ও সমাবেশ থেকে।

‘রুখো সাম্প্রদায়িকতা, রুখো মৌলবাদ, জাগাও বিবেক- রামু থেকে গোবিন্দগঞ্জ, নাসিরনগর থেকে শাল্লা।
এই বর্বরতার শেষ কোথায়?’ স্লোগানে রোববার (২১ মার্চ) নগরের চেরাগি পাহাড় মোড়ে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

এতে কবি ও সাংবাদিক আবুল মোমেন বলেন, অত্যন্ত দুর্ভাগ্য বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে আমাদের দাঁড়াতে হচ্ছে মৌলবাদের বিরুদ্ধে। মুক্তিযুদ্ধে আমরা অংশ নিয়েছিলাম জাতি-ধর্ম-বর্ণ এবং নারী-পুরুষ নির্বিশেষে। সেই লড়াইয়ের ফসল বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু এমন একটি সংবিধান করেছিলেন যাতে ধর্মের ভিত্তিতে রাজনীতি হওয়ার কথা ছিল না। কিন্তু এখন সবচেয়ে বেশি বলতে হয় ধর্মের কথা। বাংলাদেশ চিরকাল ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। অসাম্প্রদায়িক উত্তরাধিকার বহন করে বাংলাদেশের জন্ম।

আমাদের অর্থনৈতিক অগ্রগতি হয়েছে। বাংলাদেশ উন্নত দেশের যাত্রায় রয়েছে। পাশাপাশি দুঃখের হলো যে, বাংলাদেশে সমাজ রাষ্ট্র গড়ার লড়াই করা দরকার যেন প্রতিষ্ঠানগুলো সঠিকভাবে পরিচালিত হয়। যাতে সংখ্যালঘু বলে কেউ বঞ্চনার শিকার না হয়। তাহলেই যে বাংলাদেশের স্বপ্ন বঙ্গবন্ধু দেখেছিলেন সে দেশ আমরা পাব। আত্মপরিচয়ের জন্য হাজার বছরের ঐতিহ্য রক্ষায় যে যুদ্ধ আমরা করেছিলাম তা যেন হারিয়ে না যায়। তা আমাদের নিশ্চিত করতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে মুক্তিযোদ্ধা কাজী নুরুল আবছার বলেন, বঙ্গবন্ধুর কথা আজ বারবার চলে আসে। একাত্তরে আমরা মৃত্যুর পরোয়া না করে যুদ্ধ করেছি। চার বছর আগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্যও দিতে হয়েছে। যে বাঘা যতীনের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখেছিলেন সেই বাঘা যতীনের ভাস্কর্য কে ভাঙল? দিরাই শাল্লা নাসিরনগরে কারা হামলা করল? তারা কারা? কেন এসব হামলায় সরকারি দলের লোকের নাম আসে? শাল্লার ঘটনায় দেড় হাজার লোককে কেন আসামি করা হলো? এতে প্রকৃত অপরাধীরা তো পার পেয়ে যাবার আশঙ্কা থাকে। যতক্ষণ দেশকে সাম্প্রদায়িকতামুক্ত করা না যাবে ততক্ষণ আমাদের আন্দোলন চালাতে হবে।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক অশোক সাহা বলেন, রাজনীতির সঙ্গে সাম্প্রদায়িকতা মিশলে এমন ঘটনা ঘটে। যারা রাষ্ট্র চালাবেন তাদের জাতীয় চার মূলনীতির প্রতি আস্থা থাকতে হবে।

মুক্তিযোদ্ধা ডা. মাহফুজুর রহমান বলেন, বঙ্গবন্ধু দুটি ঘোষণা দিয়েছিলেন। এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম। আমরা এখন মুক্তির সংগ্রামে আছি। সারাদেশে একটি আন্দোলনই করা উচিত- সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করা। প্রশাসন এত শক্তিশালী তারা কেন এসব সহিংসতা থামাতে পারছে না।

নারীনেত্রী নূরজাহান খান বলেন, ঘাতক দালালরা যেন ছাত্রলীগে যুবলীগে বা অন্য সংগঠনে প্রবেশ করতে না পারে। ছাত্রলীগের ছেলেদেরই এটা বলতে হবে, দেখতে হবে।

মুক্তিযোদ্ধা ও খেলাঘর সংগঠক অমল কান্তি নাথ বলেন, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে আমরা সবসময় মাঠে আছি। আমরা প্রতিবাদ করি সুফল যায় মুষ্টিমেয় গোষ্ঠীর ঘরে।

প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল সংখ্যালঘু সংখ্যাগুরু এসব শব্দ ব্যবহারের জন্য নয়। বাংলাদেশ নামের সাম্প্রদায়িক দেশ হলে মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণজয়ন্তী পালন অর্থহীন হয়ে যাবে।

চবি শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি ড. বেণু কুমার দে বলেন, সাম্প্রদায়িক শক্তি জাতির পিতাকে হত্যা করেছে। হাইব্রিডরা ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগ, সরকার ও প্রশাসনে ঢুকে বসে আছে। এক মীরজাফরের রক্ত থেকে লাখো মীরজাফর জন্ম নিচ্ছে। আমরাও বলতে চাই প্রতিহত করব। কেউ বসে থাকব না।

উদীচী চট্টগ্রামের সংগঠক অধ্যাপক শীলা দাশগুপ্তা বলেন, আজ আমি শঙ্কিত ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে। কেননা এজন্য মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে।

সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী তরুণ উদ্যোগের যুগ্ম আহ্বায়ক ইউসুফ সোহেলের সঞ্চালনায় সমাবেশে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন কবি কবি ওমর কায়সার, জনস্বাস্থ্য অধিকার রক্ষা পরিষদের সদস্যসচিব ডা. সুশান্ত বড়ুয়া, সাংবাদিক আহমেদ মুনির, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. ওমর ফারুক রাসেল, খেলাঘর চট্টগ্রাম মহানগরী কমিটির সহ-সভাপতি কবি আশীষ সেন, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড চট্টগ্রামের আহ্বায়ক শাহেদ মুরাদ সাকু, মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের সারওয়ার আলম মনি, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের প্রচার সম্পাদক আলীউর রহমান, তরুণ উদ্যোগের যুগ্ম আহ্বায়ক প্রীতম দাশ, আবৃত্তি শিল্পী ও সাংবাদিক অনুপম শীল, ছাত্র ইউনিয়ন চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি এ্যানি সেন, চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের নেতা মাহমুদুল করিম ও মহসীন কলেজ ছাত্রলীগ নেতা মায়মুন উদ্দিন মামুন।

সংহতি জানান ন্যাপ নেতা মিঠুল দাশগুপ্ত, খেলাঘর সংগঠক মোরশেদুল আলম চৌধুরী, ছড়াকার গোফরান উদ্দিন টিটু, সাংস্কৃতিক সংগঠক সুনীল ধর, প্রমা আবৃত্তি সংগঠনের সভাপতি রাশেদ হাসান, বোধনের সাধারণ সম্পাদক প্রণব চৌধুরী, সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী তরুণ উদ্যোগের যুগ্ম আহ্বায়ক রুবেল দাশ প্রিন্স, করদাতা সুরক্ষা পরিষদের সাজ্জাদ হোসেন জাফর, সালমা জাহান মিলি, চকবাজার থানা ছাত্রলীগ নেতা রাজীব কান্তি নাথ, যুবলীগ নেতা সাজ্জাদ হোসেন, শিবু প্রসাদ চৌধুরী ও আমিনুল ইসলাম আজাদ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের রায়হান উদ্দিন প্রমুখ।