রোমাঞ্চ, শীতল আবেশ আর সম্ভাবনার হাতছানি দেয়া বাঁশখালী সৈকত

হাতছানি দেয় বাংলাদেশ
ভালবাসার এই আবেশ
চোখ জুড়ানো রূপেরই মেলা
দখিন সাগর উদাসী
রাখালিয়া মন বাঁশি …


নীল সমূদ্রের হাতছানি, সমুদ্রের নীল জলরাশির দিকে সমুদ্রবিলাসী মানুষের মন বার বার ছুটে যায়। যে বিশ্রাম চায় তাকে দেয় শীতল আবেশ আর যে রোমাঞ্চ চায় তার জন্য আছে অবাধ বিস্ময়ের ভান্ডার। প্রশান্তির হাতছানি দিয়ে ডাকে অসাধারণ ছবির মত সুন্দর সৈকত। চট্টগ্রামের বাঁশখালী সমুদ্র সৈকত বাংলাদেশের একটি অফুরন্ত পর্যটন সম্ভাবনার নাম। বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে বাঁশখালী ছনুয়া, গন্ডামারা, সরল, বাহারছড়া, খানখানাবাদের উপকূল জুড়ে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সমুদ্র সৈকত। সৈকতে সারিসারি ঝাউ গাছ। ঘন ঝাউ বাগান। জোয়ার-ভাটার ঢেউয়ের শব্দ পর্যটকের মন কাড়ে।

সৈকতে লাল কাঁকড়া সৈকতের সৌন্দর্য আরো অনেকখানি বাড়িয়ে দেয়। এখান থেকে সরাসরি সূর্যাস্তের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন পর্যটকরা। সমুদ্রের সঙ্গে গা ঘেঁষে রয়েছে কুতুবদিয়া চ্যানেল, আর নিকটেই দ্বীপ কুতুবদিয়া। পর্যটকরা চাইলে দ্বীপ ঘুরে আসতে পারবেন। বাঁশখালীর সমুদ্র তীরের ছনুয়া, কদমরসুল, খানখানাবাদসহ বিভিন্ন এলাকা সরেজমিন ঘুরে সৈকতের সৌন্দর্য চোখে পড়ে। ভাটার টানে সৈকতের প্রশস্ততা চোখে পড়ে। কক্সবাজার, কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের চেয়েও এখানকার সৈকত অনেক বেশি প্রশস্ত। তবে বর্ষাকালে প্রশস্ততা কিছুটা কমে আসে। ১৯৯১ সাল থেকে বেশ কয়েকটি প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় এই এলাকার বেড়িবাঁধ তছনছ করে দিয়ে গেছে। ফলে পর্যটনের সৌন্দর্য সেখানে বিকশিত হচ্ছে না। সমুদ্র তীরে শক্ত বেড়িবাঁধ দেওয়া হলে, ভাঙন প্রতিরোধ হলে এটাই হতে পারে আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র। খানখানাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বলেন, বাঁশখালী একটি পর্যটন সমৃদ্ধ এলাকা। এখানে ইকোপার্ক ও চা বাগান রয়েছে। রয়েছে বহু পুরাকীর্তি। এখানকার সমুদ্র সৈকতের বিশালত্ব যেকোনো বিনোদন প্রেমিককে আকৃষ্ট করে। ফলে পর্যটকরা একই সঙ্গে অনেক কিছু দেখার ইচ্ছা থাকলে অনায়াসে বাঁশখালীতে আসতে পারেন। বাঁশখালীর উপকূলীয় সমুদ্র সৈকত এলাকার পর্যটন কেন্দ্র পর্যটকদের কাছে টানবে। স্থানীয় সূত্র বলেছে, জাতীয় দিবস ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানের সময় বাঁশখালীর উপকূলীয় সমুদ্র সৈকত হাজারো লোকের পদচারণায়মুখর হয়ে ওঠে। রাস্তাঘাটের বিপণ্নতা এবং থাকার জায়গা না থাকায় তড়িঘড়ি করে তারা আবার বাঁশখালী কিংবা চট্টগ্রামে চলে যান। তবে রাস্তাঘাট ভালো হলে শীতে বহু পর্যটকের ভিড় জমবে বলে আশাবাদ এলাকাবাসীর। বাঁশখালীর উপকূলীয় ২৫ কিলোমিটার সমুদ্র সৈকতকে একটি সম্ভাবনাময় পর্যটন স্পট হিসেবে স্বপ্ন দেখায় স্থানীয় বাসিন্দাদের। তারা মনে করে, সম্ভাবনাময় এই এলাকাটি যথাযথভাবে উন্নয়ন করা হলে কক্সবাজারের বিকল্প সমুদ্র সৈকত হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব বাঁশখালী সৈকতকে। বিষয়টি ‍নিয়ে একমত জনপ্রতিনিধিসহ সরকারি কর্মকর্তারাও।

সমুদ্র লাগোয়া অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ওপর ভিত্তি করে এই এলাকায় পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে প্রয়োজনীয় সুবিধা নিশ্চিত দাবি এলাকাবাসীসহ সংশ্লিষ্ট মহলের। এ জন্য বনবিভাগসহ সরকারের সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা। খানখানাবাদের স্থানীয় বাসিন্দা ইমাম হোসাইন বলেন, পর্যটন কেন্দ্র স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এখানে বিদ্যমান। দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত রয়েছে এখানে।

পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হলে এখান থেকে সরকারের বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় হবে। বাহারছড়ার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তাইজুল ইসলাম বলেন, বিশাল চর এলাকায় সারিসারি ঝাউ গাছের বাগান যে কারো নজর কাড়ে। এখানে পর্যটনকেন্দ্র স্থাপিত হলে বিনোদন প্রেমীরা উপকৃত হবেন। এই ইউনিয়নগুলো বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে অবস্থিত। এখানে স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে ঝাউবাগান সৃষ্টি করে পর্যটন কেন্দ্র স্থাপন করলে সরকার লাভবান হবে।

আমাদের গর্বের ধন অপরূপ সৈকতের উত্তাল সোনালী সৌন্দর্য্য যে কাউকেই মুগ্ধ করবে…

লেখা: রিয়াদুল ইসলাম রিয়াদ (অনুলিখন: মির্জা ইমতিয়াজ)