অবশেষে ব্রেক্সিট হলো

অবশেষে ব্রেক্সিট হলো। প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ইইউ থেকে বৃটেনের ঐতিহাসিক বিচ্ছেদকে সম্মানজনকভাবে সমাপ্ত করেছেন। ১০মাস ধরে ব্যাপক দর-কষাকষি ও বাক-বিতণ্ডার পর বহুল আলোচিত বাণিজ্য চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। বৃটিশ পার্লামেন্টে গতকাল ব্রেক্সিট বাণিজ্য চুক্তি অনুমোদিত হয়েছে। পার্লামেন্ট সদস্যদের বিতর্কের পর ৫২১ ভোটে ১২৪৬ পৃষ্ঠার এই চুক্তি পাস হয়। বিপক্ষে ভোট দেন মাত্র ৭৩ জন এমপি।

মিঃ জনসন ব্রাসেলসে প্রেরণের আগে ১০ ডাউনিং স্ট্রিটে চুক্তির সরকারি অনুলিপিতে স্বাক্ষর ও সীলমোহর করেছেন। এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৭টি সদস্য দেশের রাষ্ট্রদূতরা ব্রেক্সিট-পরবর্তী বাণিজ্য চুক্তি সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদন করেছেন।

হাউস অব পার্লামেন্টে চুক্তি অনুমোদিত হওয়ার পর বরিস জনসন ইতিহাসের নতুন অধ্যায়টির প্রশংসা করেছেন। ব্রেক্সিট পরবর্তী বাণিজ্য চুক্তিকে বৃটেনের ইতিহাসের নতুন অধ্যায় বলে আখ্যায়িত করে বলেছেন, ব্রাসেলসের হস্তক্ষেপের বাইরে আমরা এখন নিজস্বভাবে চলতে সক্ষম হব।
তিনি দৃঢ়তার সাথে উল্লেখ করেন, আমাদের অর্থ, আমাদের সীমানা, আইন ও জলের নিয়ন্ত্রণ আমরা ফিরিয়ে নিয়েছি। মুক্ত বাণিজ্য ও বন্ধুত্বপূর্ণ সহযোগিতার ভিত্তিতে এখন ইউরোপীয় প্রতিবেশীদের সাথে নতুন সম্পর্ক গড়ে তুলতে সক্ষম হবো। আমি বিশ্বাস করি, ইইউর সাথে একটি সুখী, সফল এবং স্থিতিশীল অংশীদারিত্বের সূচনা হবে।

বৃটেনের বিরোধী দল লেবার পার্টির নেতা স্যার কেয়ার স্টারমার সংসদে ব্রেক্সিট বাণিজ্য চুক্তি সমর্থনের জন্য দলীয় এমপিদের প্রতি আহবান জানান। এতে তিনি কিছুটা বিদ্রোহের মুখোমুখি হয়েছিলেন। প্রাক্তন ছায়ামন্ত্রী ডায়ান অ্যাবট এবং ব্যারি গার্ডিনার সহ ৩৬ জন লেবার এমপি তাদের নেতার নির্দেশকে অস্বীকার করেছিলেন এবং ভোট দানে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত বেছে নিয়েছিলেন। কেয়ার স্টারমার অবশ্য পূর্বেই ঘোষণা দিয়েছিলেন, তিনি সংসদে চুক্তির পক্ষে ভোট দেবেন। চুক্তিবিহীন অবস্থাকে তিনি জাতীয় স্বার্থবিরোধী বলে বিশ্বাস করেন। তাই জাতীয় স্বার্থের পক্ষে ভোট দিয়েছেন।

কেবলমাত্র একজন লেবার এমপি বেল রিবেইরো অ্যাডি বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন। লেবার ফ্রন্টবেঞ্চের দুই জুনিয়র সদস্য হেলেন হেইস এবং টোনিয়া আন্টোনিয়াজি ভোট এড়িয়ে যাওয়ার পরে তাদের ফ্রন্টবেঞ্চের ভূমিকা ছেড়ে দেন। প্রাক্তন লেবার নেতা এবং বর্তমানে স্বতন্ত্র এমপি জেরেমি করবিন ভোট দান এড়িয়ে গেছেন। ১৬২ জন লেবার পার্টির এমপি ও ৩৫৯ টরি এমপি এই চুক্তির পক্ষে ভোট দিয়েছেন। চুক্তির বিরুদ্ধে ভোটদাতাদের মধ্যে প্রায় ৪৪ জন এসএনপি, ১১ লিব ডেম এবং ৮ জন ডুপ এমপি ছিলেন।

এদিকে ব্রেক্সিট-পরবর্তী বাণিজ্য চুক্তি সর্বসম্মতি ক্রমে অনুমোদন করেছেন ইইউ’র ২৭টি সদস্য দেশের রাষ্ট্রদূতরা। আরএএফ জেট বিমানে লন্ডনে পাঠানোর আগে গতকাল সকালে ব্রাসেলসে ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেন ১২৪৬ পৃষ্ঠার বাণিজ্য চুক্তির আনুষ্ঠানিক অনুলিপিটি স্বাক্ষর করেন। এর আগে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে বৃটেনের বেরিয়ে আসার চুক্তি (ব্রেক্সিট) ইউরোপীয় পার্লামেন্টে অনুমোদন হয়। বুধবার ব্রাসেলসে ইইউ পার্লামেন্ট সদস্যদের বিতর্কের পর ৬২১ ভোটে এ চুক্তি পাস হয়। এর বিপক্ষে ভোট দেন ৪৯ জন এমপি।

গত ২১ ডিসেম্বর বৃটিশ পার্লামেন্টে এ বিষয়ে আনা একটি বিল বড় ভোটের ব্যবধানে পাস করেন এমপিরা। ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে প্রত্যাহার করা বিলটির পক্ষে পার্লামেন্টে ভোট দেন ৩৫৮ জন। আর বিপক্ষে ভোট দেন ২৩৪ জন। প্রায় ৪০ বছরের বেশি সময় ধরে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে থাকার পর ২০১৬ সালের ২৩ জুন এক গণভোটের আয়োজন করে যুক্তরাজ্য। সেখানে দেশটির নাগরিকদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল- যুক্তরাজ্যের ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে থাকা উচিত কিনা? ৫২ শতাংশ ভোট পড়েছিল ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছাড়ার পক্ষে আর থাকার বিপক্ষে ছিল বাকি ৪৮ শতাংশ ভোট।

অনেক স্তর ও বাধা পেরিয়ে ব্রেক্সিট এবং ব্রেক্সিট পরবর্তী বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি কার্যকর হচ্ছে। পার্লামেন্টে অনুমোদনের পর ১লা জানুয়ারি থেকে এটি আইনে পরিণত হবে। ২০১৬ সালের গণভোটের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী নতুন বছরে ইইউ’র সঙ্গে বৃটেনের দীর্ঘ সম্পর্কের অবসান ঘটছে। অবশ্য উভয় পক্ষ মনে করছেন,এই চুক্তির ফলে অতীত সম্পর্কের অনেক কিছুই হয়ত বদলে যাবে, কিন্তু বন্ধুত্ব টিকে থাকবে। অংশীজন এবং মিত্র হিসেবে নতুন অধ্যায়ের সূচনা হবে।