বয়স বাড়লে মানুষের শরীরে যে নয়টি পরিবর্তন ঘটে

     হিউম্যান ২৪ ডেস্ক:  বয়স বেড়ে যাওয়া নিয়ে নারী পুরুষ সবার মধ্যেই কম-বেশী উৎকণ্ঠা রয়েছে। বয়স তো আটকানো যায় না। কিন্তু বয়স বাড়ার গতি যদি একটু কমিয়ে দেয়া যায়, অথবা শরীরে বয়সের ছাপ যাতে দেরিতে আসে, এ নিয়ে বিজ্ঞানীদের নানা ধরণের গবেষণাও রয়েছে।

    বিজ্ঞানীদের সাম্প্রতিক এক গবেষণা বলছে, শরীরবৃত্তীয় নয়টি উপসর্গের মাধ্যমে বোঝা যায় যে আপনার বয়স হচ্ছে। স্পেনের বিজ্ঞানী ম্যানুয়েল সেরানো সেই দলে রয়েছেন।তিনি বলছেন, একেকজন মানুষের বয়স বাড়ার লক্ষণ একেক রকম, কিন্তু সবারই তো বয়স বাড়ছেই।

    গবেষণায় তারা দেখেছেন, মানুষসহ যেকোন স্তন্যপায়ী প্রাণীর বয়স বাড়ার লক্ষণ প্রায় একই, অর্থাৎ যে সব শরীরবৃত্তীয় পরিবর্তন ঘটে তা প্রায় একই রকম।

    ১. ডিএনএ ক্ষয়প্রাপ্ত হতে থাকে                                                                                             আমাদের ডিএনএ শরীরের ভেতরকার কোষগুলোর মধ্যে প্রবাহিত এক ধরণের জেনেটিক কোড। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এর মধ্যে ভুল হবার সুযোগ বাড়ে। সেই ভুলগুলো শরীরের কোষের মধ্যে জমা হতে থাকে। এ সময়ে জেনেটিক স্থায়িত্ব কমে যায়, যে কারণে স্টেম সেলের কার্যকারিতা কমে যায়।

    ২. ক্রোমোজোম ক্ষয়প্রাপ্ত হয়
    আমরা যদি ডিএনএকে একটা সুতার মত ধরি, তাহলে সেটির মাথায় একটি ক্যাপ বা ঢাকনা থাকে যা আমাদের ক্রোমোজোমসমূহকে রক্ষা করে। এটা অনেকটা জুতোর ফিতার মাথা যেমন প্লাস্টিক দিয়ে মোড়ানো থাকে তেমন হয়।
    বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই ঢাকনাগুলো আলগা হয়ে যেতে থাকে, ফলে আমাদের ক্রোমোজোমসমূহের কোন সুরক্ষা থাকে না। মানে হলো তখন সেগুলো নিজেদের প্রতিলিপি বানাতে ভুল করে থাকে। সন্তান উৎপাদন প্রক্রিয়া তখন কিছুটা জটিল হয়ে পড়ে।

    ৩. কোষের আচরণ বদলে যায়
    আমাদের শরীরের অভ্যন্তরে ডিএনএ এক্সপ্রেশন নামে একটি প্রক্রিয়া আছে, যেখানে একটি কোষের মধ্যে থাকা হাজারো জিন নির্ধারণ করে ঐ কোষের কার্যক্ষমতা, অর্থাৎ ঐ নির্দিষ্ট কোষটি শরীরের ত্বক হিসেবে কাজ করবে না মস্তিষ্ক হিসেবে আচরণ করবে।

    কিন্তু সময়ের সাথে সাথে এবং জীবনযাপন পদ্ধতির কারণে সেই কোষের আচরণ বদলে যেতে শুরু করে।

    ৪. কোষ নবায়নের সক্ষমতা হারিয়ে যায়
    ক্ষয় হয়ে যাওয়া কোষের পরিমাণ যাতে না বাড়ে, সেজন্য আমাদের শরীরের ক্রমাগত নতুন কোষ তৈরির ক্ষমতা আছে।
    কিন্তু বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরের সেসব দক্ষতা কমে যায়। তখন কোষসমূহ অপ্রয়োজনীয় অথবা বিষাক্ত প্রোটিন জমাতে শুরু করে, যেগুলো চোখের ছানি, আলঝেইমার বা পারকিনসন্স রোগের কারণ হয়ে ওঠে।

    ৫. কোষের পরিপাক ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ হারায়
    সময়ের সাথে সাথে শরীরের কোষসমূহ চর্বি বা চিনি জাতীয় উপাদানকে প্রসেস বা পরিপাক করার ক্ষমতা হ্রাস পেতে থাকে।
    এজন্য বয়স বাড়ার পর বিভিন্ন রোগ যেমন ডায়াবেটিস হবার শঙ্কা বাড়ে, আর সেটি সারা পৃথিবীতেই একটি সাধারণ রোগ।।

    ৬. মাইটোকন্ড্রিয়া কাজ বন্ধ করে দেয়।                                                                              মাইটোকন্ড্রিয়া শরীরের কোষে শক্তি যোগান দেয়, কিন্তু বয়স বাড়ার সাথে সাথে তাদের কর্মক্ষমতা কমে যায়। আর মাইটোকন্ড্রিয়া যখন ঠিকমত কাজ করতে পারে না, সেটা ডিএনএ’র জন্য খারাপ।

    তবে, কিছু গবেষণা বলছে, মাইটোকন্ড্রিয়ার কর্মদক্ষতা যদি নতুন করে বাড়ানো যায়, তাহলে সমস্ত স্তন্যপায়ী প্রাণীর আয়ু বাড়ানো সম্ভব হবে।

    ৭. কোষ ভৌতিক হয়ে যায়
    কোন কোষ যখন বাজেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তখন সেটি কাজ করা বন্ধ করে দেয়। কিন্তু কাজ বন্ধ করলেই কোষের মৃত্যু হয় না। এই কোষগুলো তখন ভৌতিক কোষে পরিণত হয়। এবং নিজের চারপাশের কোষগুলোকেও জোম্বি বা ভৌতিক কোষে পরিণত হতে সাহায্য করে। এর ফলে শরীরে জ্বালাপোড়ার মত উপসর্গ দেখা দেয়।

    ৮. স্টেম সেলের শক্তি কমে যায়
    বয়স বাড়ার সাথে সাথে কমে যায়, যে কারণে তার পুনরুৎপাদনের ক্ষমতা কমে যায়। কিন্তু বিজ্ঞনীরা দেখেছেন, স্টেম সেলের এই শক্তি কমে যাওয়া ঠেকানো গেলে বয়স বাড়ার গতি কমিয়ে দেয়া যেত।

     

    ৯. নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় কোষ
    শরীরের মধ্যে সারাক্ষণই কোষেরা নিজেদের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ চালিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু সময়ের সাথে সাথে সেই যোগাযোগ কমতে থাকে।

    এর ফলে শরীরে জ্বালাপোড়া, কথাবার্তা বলতে সমস্যা হতে পারে। এর ফলে শরীরের সতর্ক একটা ভাব হারিয়ে যেতে থাকে। বয়স বাড়া যদিও একটি স্বাভাবিক এবং অনিবার্য প্রক্রিয়া।

    বিজ্ঞানীরা বলছেন স্বাস্থ্যকর লাইফস্টাইল বা জীবনযাপন পদ্ধতির মাধ্যমে বয়স বাড়ার গতিকে হয়তো কিছুটা দূরে রাখা যায়।