চন্দ্রনাথ পাহাড়ে ‘মৃত্যুঞ্জয়ী মিত্র’ উদ্বোধন

মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশকে স্বাধীন করতে এসে জীবন উৎসর্গকারী অর্ধশতাধিক ভারতীয় সৈনিকের আত্মত্যাগের স্মৃতিরক্ষায় সীতাকুণ্ড উপজেলার চন্দ্রনাথ পাহাড়ে নির্মিত ভাস্কর্য ‘মৃত্যুঞ্জয়ী মিত্র’ উদ্বোধন হয়েছে।

মঙ্গলবার (২২ ডিসেম্বর) সকাল ১০টায় ভাস্কর্যটি উদ্বোধন করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেন ও সীতাকুণ্ডের সংসদ সদস্য দিদারুল আলম।

চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুস সালামের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাব্বির ইকবাল। এ সময় চট্টগ্রাম জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোহাম্মদ সাহাবউদ্দিন, মহানগর কমান্ডার মোজাফফর আহমদ, ভারতীয় হাইকমিশনারের সহধর্মিণী সংগীতা দোরাইস্বামী, ভারতীয় সহকারী হাই কমিশনের সেকেন্ড সেক্রেটারি দীপ্তি আলংঘাট, চট্টগ্রামস্থ ভারতীয় সহকারী হাই কমিশনার অনিন্দ্য ব্যানার্জী প্রমুখ।

মৃত্যুঞ্জয়ী মিত্র

ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী বলেন, আজ আমি নিজে গর্ববোধ করছি, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ভারতীয় সেনারা একসঙ্গে প্রাণ বিসর্জন করেছেন এ এলাকায়। বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের বন্ধুর্ত্বপূর্ণ সম্পর্ক শুধু ঐতিহাসিক ও সংস্কৃতিগত নয় এটি রক্তসম্পর্ক। আমি গভীরভাবে শ্রদ্ধা জানাই সীতাকুণ্ড উপজেলার শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও আত্মোৎসর্গকারী ভারতীয় সেনাদের। আমার বাবা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন পাইলট হিসেবে। তাই আমি খুব গর্বিত।

বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী চিরঞ্জীব হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হচ্ছেন বাংলাদেশের স্পিরিট। বাংলাদেশের জন্য তার আত্মত্যাগ এদেশের জনগণ ভুলতে পারবে না। এ দেশ স্বাধীন হয়েছে ত্রিশ লাখ শহীদ, নারীর সম্ভ্রম ও ত্যাগের বিনিময়ে। যারা বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা ব্যাহত করতে চায় তারা সফল হবে না।

প্রধান অতিথির বক্তব্যের শুরুতে বাংলায় ‘শুভ সকাল, নমস্কার-আদাব, আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ’ শুনে হাততালি দেন অতিথি ও শ্রোতারা।

সূত্র জানায়, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের শেষ দিকে ১২ ডিসেম্বর থেকে বিজয়ের দিন ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে ভারতীয় মিত্র বাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের সমন্বিত বাহিনীর তুমুল সম্মুখযুদ্ধ চলতে থাকে। যুদ্ধ করতে করতে ১৬ ডিসেম্বর মিত্রবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধারা সীতাকুণ্ডের কুমিরায় পৌঁছান। এতে পিছু হটে পাকিস্তানি বাহিনী। ওই দিন বিকেলে বিজয়ের ঘোষণা আসলে মুক্তিযোদ্ধারা বিজয় উল্লাস শুরু করেন। কেউ কেউ নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে যান। ঠিক এমনি সময়ে অপ্রস্তুত অবস্থায় থাকা ভারতীয় সেনা ও মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর অতর্কিতে হামলা চালায় পাকিস্তানিরা। এতে সীতাকুণ্ডে আবার যুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধ চলে ১৭ ডিসেম্বর রাত পর্যন্ত। এই দীর্ঘ সময়ের টানা যুদ্ধে নিহত হন অর্ধশতাধিক ভারতীয় মিত্র বাহিনীর সৈনিক ও বেশ ক’জন মুক্তিযোদ্ধা। তাদের আত্মত্যাগে ১৭ ডিসেম্বর হানাদারমুক্ত হয় সীতাকুণ্ড। সে সময় এসব ভারতীয় মুক্তিবাহিনীর বীরদের মৃতদেহ সৎকার করা হয় সীতাকুণ্ড পৌরসদর চন্দ্রনাথ মহাতীর্থের গজারিয়া দীঘির পাড়ে।

সেই বীরত্বগাথার স্মৃতি জাগরূক রাখতে চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ এ সব মিত্র বাহিনীর বীরদের স্মৃতিরক্ষায় চন্দ্রনাথ ধাম মহাতীর্থের সীতা দেবীর কুণ্ডের ঠিক ওপরে হনুমান মন্দিরের সামনে ২৩ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করেছে ‘মৃত্যুঞ্জয়ী মিত্র’ নামক এ ভাস্কর্য।